অপরিশোধিত জ্বালানি তেল

চাহিদা মোকাবেলায় উত্তোলন বাড়াচ্ছে ওপেক প্লাস

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) চাহিদা এখন ঊর্ধ্বমুখী, যে কারণে বাজারও চাঙ্গা। অবস্থায় এলএনজির পরিবর্তে জ্বালানি তেল ব্যবহারে ঝুঁকছে অনেক দেশ। ফলে চাপ বাড়ছে জ্বালানি পণ্যটির ওপর। আর চাহিদা থাকায় উত্তোলন বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছে জ্বালানি তেলের রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক তাদের সহযোগীদের নিয়ে গঠিত জোট ওপেক প্লাস। খবর রয়টার্স

জ্বালানি তেলের বাজার চাঙ্গা করতে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ধরে রাখতে ওপেক প্লাস জোট গঠন করা হয়, যার নেতৃত্বে রয়েছে সৌদি আরব রাশিয়া। সরবরাহ কমিয়ে জ্বালানি পণ্যটির দাম বৃদ্ধির জন্য দীর্ঘদিন ধরে কোটা অনুযায়ী উত্তোলন কমিয়ে আসছিল জোটটির সদস্য দেশগুলো। তবে বতর্মানে আন্তর্জাতিক বাজার চাঙ্গা হওয়ায় বেশির ভাগ দেশই এখন উত্তোলন বাড়াচ্ছে। এমনকি জোটটির পক্ষ থেকেও উত্তোলন বাড়ানোর সম্মিলিত কোটা ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও অনেক দেশ এখন কোটার বাইরে গিয়ে বাড়তি উত্তোলন করছে। সামনের দিনগুলোতে যা আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমিয়ে এনেও বাজার চাঙ্গা করতে পারছিল না ওপেক প্লাস জোট। নিয়ে অনেক দেশের মধ্যে চাপা ক্ষোভও ছিল। ফলে জোটের বেঁধে দেয়া কোটার বাইরে গিয়েও অনেক দেশ উত্তোলন করছিল। এরই মধ্যে আঘাত আসে নভেল করোনাভাইরাসের। ফলে জ্বালানি তেলনির্ভর অনেক দেশ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। তবে বতর্মানে করোনা পরিস্থিতি উন্নত হওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে। পুরোদমে কার্যক্রম চলছে শিল্প-কলকারখানার। এতে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসেবে এলএনজির চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ। ফলে তৈরি হয়েছে সরবরাহ সংকট। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দামও। কারণে অনেক দেশই এখন বিকল্প সাশ্রয়ী হিসেবে জ্বালানি তেল ব্যবহার বাড়িয়েছে। এতে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা তৈরি হয়েছে। আর সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্যই এখন উত্তোলন বাড়াতে জোর দিচ্ছে ওপেক প্লাস জোট।

উত্তোলন বাড়াতে ওপেক প্লাস জোটের অনেক দেশ বড় আকারে বিনিয়োগ করেছে খাতে। সংস্কার কার্যক্রমেও গতি এনেছে। সৌদি আরবসহ ওপেকের অন্যান্য দেশও উত্তোলন বৃদ্ধি করছে। জোটের পক্ষ থেকে আগস্ট সেপ্টেম্বরে সম্মিলিতভাবে দৈনিক চার লাখ ব্যারেল উত্তোলন বাড়ানোর অনুমতিও দেয়া হয়েছে। তবে আগামী মাস থেকে জোটটি দৈনিক আরো চার লাখ ব্যারেল অতিরিক্ত অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনে সম্মত হয়েছে বলে ওপেক প্লাসের দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।

যদিও আরো উত্তোলন বাড়ানোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে জোটের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য ইরাক। দেশটির জ্বালানি তেলমন্ত্রী ইহসান আবদুল জাবের বিষয়ে বলেন, যদি বাজার ভারসাম্য থাকে, তাহলে পরবর্তী চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান কোটা অনুযায়ী উত্তোলন অব্যাহত থাকবে।

আগামী মাসে ওপেক প্লাস জোটের মন্ত্রী পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এর আগেই একটি সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জোটের জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটি বা জেটিসি। জ্বালানি তেলের বাজার মূল্যায়ন করে থাকে কমিটি। ফলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন আরো বৃদ্ধির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে আগামী মাসেই। যে কারণে অনেকেই মনে করছেন অন্তত নভেম্বরের আগে দৈনিক আরো চার লাখ ব্যারেল উত্তোলন বৃদ্ধি হচ্ছে না।

একই রকমের কথা জানিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানিমন্ত্রী সুহাইল আল মাজরুইয়ি। সম্প্রতি দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি জানান, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনের বর্তমান চুক্তি পরিবর্তনের আপাতত কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখছেন না তিনি। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দীর্ঘদিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি চাঙ্গা করতে অনেক দেশই এখন আর পুরোপুরি কোটা অনুসরণে সম্মত হবে না। ফলে নির্ধারিত পরিমাণের বাইরে গিয়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করবে এসব দেশ। যদিও প্রবণতা জোটে নতুন নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন