টিকা ও ঋণমুক্তি সহায়তা প্রয়োজন

কভিডজনিত দীর্ঘস্থায়ী মন্দার ঝুঁকিতে আফ্রিকার অর্থনীতি

বণিক বার্তা ডেস্ক

আফ্রিকায় আরো তিন কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে কভিড-১৯ মহামারী ছবি: রয়টার্স

কভিড-১৯ মহামারীতে স্থবিরতার মুখে পড়ে বিশ্ব। বন্ধ করে দেয়া হয় দোকান, ভ্রমণ থেকে শুরু করে কলকারখানা পর্যন্ত। কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহ সংকোচনের মুখে পড়ে বিশ্ব অর্থনীতি। টিকাদান কার্যক্রমের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলো কভিডজনিত বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে টিকা না পাওয়ায় এখনো সংক্রমণের মধ্যে আছে আফ্রিকার দেশগুলো। অবস্থায় স্বল্পোন্নত দেশগুলো দীর্ঘস্থায়ী মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে জার্মান একটি থিংক ট্যাংক। খবর দ্য ন্যাশনাল।

অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির মতে, আফ্রিকার অনেক দেশের পক্ষেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ২০২৫ সালের আগে প্রাক-কভিড স্তরে ফিরে আসা সম্ভব নয়। দেশগুলোয় মহামারীর প্রভাব কমাতে জরুরিভিত্তিতে কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা ঋণমুক্তির মতো সহায়তা প্রয়োজন। সহায়তা দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে থিংক ট্যাংকটি।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সীমাবদ্ধ পরীক্ষা সুবিধার কারণে আফ্রিকায় আনুষ্ঠানিকভাবে কভিড-১৯ শনাক্তের সংখ্যাও কম। তবে দরিদ্র অঞ্চলটির অর্থনীতিতে মহামারীর প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। আর রেকর্ড নিম্ন টিকাদান হারের কারণে দীর্ঘায়িত হচ্ছে প্রভাব। এজন্য মহামারীর বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসতে দেশগুলোর দ্রুত সহায়তা প্রয়োজন।

কিয়েল ইনস্টিটিউটের গবেষক সমীক্ষাটির সহযোগী সাসকিয়া ময়চেলবাক বলেন, বিশেষ করে অদক্ষ শ্রমিক নারীরা মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রভাব মোকাবেলায় টিকাদান কার্যক্রম ঋণমুক্তির ক্ষেত্রে জরুরিভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সমর্থন দেয়া উচিত।

মহামারীটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও এর অর্থনৈতিক প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোয় সবচেয়ে মারাত্মক ছিল। ইউএন কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের মতে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মহামারীর ক্ষতি বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের চেয়েও বেশি। বিশেষ করে আফ্রিকা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত সপ্তাহে সংস্থাটি বলেছিল, বিশ্বজুড়ে অসম অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর গত এক দশকের অগ্রগতি হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্য দেশগুলোতে নতুন করে আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন।

কিল ইনস্টিটিউটের মতে, গত বছর আফ্রিকান দেশগুলোয় অর্থনৈতিক সংকোচন প্রাথমিকভাবে প্রত্যাশার চেয়ে কম গুরুতর ছিল। তবে সেটিও ২৫ বছরের মধ্যে প্রথম মন্দার রেকর্ড তৈরি করে। অঞ্চলটির অর্থনৈতিক পতনও বৈচিত্র্যময়। পরিষেবা, পর্যটন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল দক্ষিণ আফ্রিকা বা তিউনিসিয়ার মতো দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকোচনের মাত্রা আরো বেশি ছিল। অন্যদিকে জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশ যেমন আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা নাইজেরিয়ার মতো দেশগুলো পণ্যের উচ্চমূল্য থেকে কিছুটা উপকৃত হচ্ছে।

আফ্রিকায় সামগ্রিকভাবে ২০২৩ সালে মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রাক-কভিড পর্যায়ে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে অঞ্চলটির অনেক দেশেই ২০২৫ সালের আগে মাথাপিছু জিডিপি মহামারী-পূর্ব অবস্থায় ফিরবে না। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে পিছিয়ে থাকার একটি বড় কারণ হলো কভিড-১৯ টিকাদানে নাটকীয়ভাবে পিছিয়ে থাকা। দেশগুলোর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চাপে রয়েছে, দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ এবং নতুন কর্মসংস্থানের হার আশঙ্কাজনক হারে কমে গিয়েছে।

কিয়েলের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, মহামারীটি আফ্রিকায় আরো তিন কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষ করে অদক্ষ শ্রমিক নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ময়চেলবাক বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিশ্চিত করতে হবে যে, আফ্রিকার জনস্বাস্থ্য অর্থনৈতিক প্রভাব সীমাবদ্ধ করতে পর্যাপ্ত এবং সাশ্রয়ী মূল্যে দ্রুত টিকা সরবরাহ করা হয়েছে। জি২০ভুক্ত দেশগুলো এরই মধ্যে ঋণ পুনর্গঠন এবং অস্থিতিশীল ঋণের বোঝা থাকা দেশগুলোর জন্য ঋণমুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে। যদিও অঞ্চলটির আর্থিক সংকট মোকাবেলায় উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। এজন্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারি ঋণ পরিশোধে আরো স্থগিতকরণ এবং কিছু ক্ষেত্রে ঋণমুক্তি দেয়ারও প্রয়োজন হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন