সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা

আনু মুহাম্মদ

চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় ১৯৬৬ সালে তিয়েন আন মেন স্কয়ারে মাও সে তুংয়ের উদ্ধৃতিসংবলিত ‘রেডবুক’ হাতে রেডগার্ডের কর্মীরা

পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্র। ইরান, ভারত, ইনকা, মায়ার মতো প্রাচীন চীনের সভ্যতা। ১৯৪৯ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে বিপ্লবের পর এক নতুন চীনের যাত্রা হয়। নানা রকম সংস্কার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান বিশ্বে চীন অন্যতম এক পরাশক্তি। জিডিপির হিসাবে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ফসল নয়া চীন এখন পুঁজিবাদী বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র। ঐতিহাসিক বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে চীনের শক্তি-দুর্বলতা, সাফল্য-ব্যর্থতা ধারাবাহিক পরিবর্তনগুলো নিয়ে লিখেছেন আনু মুহাম্মদ

১৯৬৬ সালেই শুরু হলো বিপ্লব-উত্তর চীনের ইতিহাসের আরেকটি উল্লেখযোগ্য পর্ব, যা সাংস্কৃতিক বিপ্লব নামেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত। চীনে এর আনুষ্ঠানিক নাম দেয়া হয়েছিল মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব বিপ্লবের মধ্য দিয়ে মাও সে তুং পার্টিতে আবারো নিজের মতাদর্শিক অবস্থান সংহত করেন। পার্টির কেন্দ্রীয় অনেক নেতা, এমনকি শীর্ষে অবস্থানরত লিউশাউচীসহ পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতা, বুদ্ধিজীবী, সরকারি কমকর্তার অবস্থান বিপ্লবের জন্য ক্ষতিকর, বিপজ্জনক বলে অভিহিত হয় এবং তারা তীব্র সমালোচনা আক্রমণের শিকার হন। ১৯৬৯ সালে মাও আনুষ্ঠানিকভাবে এর সমাপ্তি ঘোষণা করলেও এর রেশ ১৯৭৬ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে কেন্দ্র করে চীনে যখন বিরাট উথাল-পাথাল হচ্ছে, সে সময় চীন বিপ্লব সম্পর্কে আশঙ্কিত হওয়ার অনেক যুক্তি ছিল। কারণ ততদিনে সোভিয়েত ইউনিয়ন চীনের প্রতি সবরকম সমর্থন-সহযোগিতা প্রত্যাহার করেছে, দুদেশের মধ্যে বৈরিতা শুরু হয়েছে। অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার নেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র নিজের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামরিক প্রভাববলয় সম্প্রসারণে ব্যস্ত তখন। এর অংশ হিসেবে এশিয়ায় বিভিন্ন প্রান্তে তাদের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ আগ্রাসন চলছে। ভিয়েতনামে চলছে নৃশংস গণহত্যা, ভিয়েতনামি জনগণ চীনের দীর্ঘস্থায়ী জনযুদ্ধের অনুপ্রেরণায় শক্তিশালী প্রতিরোধ সংগঠিত করছেন। সাম্রাজ্যবাদী প্রচারণা ছাড়াও বাইরের জগতে চীনের ভেতরের ঘটনাবলির ভিন্ন কখনো একেবারে বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদ সমর্থক প্রচারমাধ্যমে বহু বছর ধরেই চীন বিপ্লবের সমাপ্তির ঘণ্টার কথা বলা হচ্ছিল। সাংস্কৃতিক বিপ্লব শুরু হওয়ার পর তারা নিশ্চিত হয় যে, চীনের প্রতিবিপ্লবী পরিবর্তন আসন্ন। যুক্তরাষ্ট্রের সমাজতন্ত্রী জার্নাল মান্থলি রিভিউ এগুলোর একটা পর্যালোচনাও করেছিল তখন। বহুজাতিক পুঁজির মুখপত্র ফরচুন তাদের ১৯৬৬ সালের নভেম্বর সংখ্যায় আনন্দের সঙ্গে জানায় যে, গত গ্রীষ্ম থেকে চীনের যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন মানবজাতির এক-চতুর্থাংশের বিশাল দেশকে নাড়া দিচ্ছে তা থেকে স্পষ্ট হয় যে, মাও সে তুংয়ের কমিউনিস্ট তত্ত্ব প্রয়োগ চর্চা নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং চীন এখন এই প্রবল তাড়ায় যেকোনোদিকে চলে যেতে পারে। এটি আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের দিকে দেশটিকে ঠেলে দিতে পারে। ইতিহাসের গতি যে পরিণতি নির্দেশ করে, তাতে সম্ভাবনাই বেশি যে কমিউনিস্ট শাসনের পতন ঘটবে এবং তার সঙ্গে মাও সে তুংয়েরও।

তবে একই মাসে (নভেম্বর ১৯৬৬) প্রকাশিত বিখ্যাত জার্নাল সায়েন্টিফিক আমেরিকান-এর সংখ্যায় চীনের শিল্পায়নসহ উন্নয়নের বিশ্লেষণ করে লেখেন একজন জাপানি। সেই লেখা চীনের একটি ভিন্ন চিত্র এবং ভবিষ্যতের একটি ভিন্ন সম্ভাবনা হাজির করে। সেখানে বলা হয়,

চীনে এখন মাথাপিছু আয় ১০০ ডলার, মোট জাতীয় আয় ৬০ বিলিয়ন ডলার। এদেশ এখন উত্তরণ (টেকঅফ) স্তর পার হয়ে শিল্পায়ন স্তরে প্রবেশ করেছে। চীন যদি জাপানের অভিজ্ঞতা অনুসরণ করে, তাহলে খুব দ্রুত পরিবর্তনের জন্য এদেশ শিল্প জ্ঞান পুঁজি সঞ্চয় করতে সক্ষম হবে এবং উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পর্বে প্রবেশ করবে। ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে দেশ জাপানের বর্তমান মাথাপিছু আয়ের স্তরে (৬২০ মার্কিন ডলার) প্রবেশ করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আয়ের শতকরা ৭০ ভাগের কাছে পৌঁছে যাবে।

১৯৬৬ সালের ২৮ জুলাই রেড গার্ড প্রতিনিধিরা বিপ্লব রক্ষার জন্য আহ্বান জানিয়ে মাও সে তুংকে একটি চিঠি লেখেন। এর উত্তরে মাও বিশাল পোস্টার আকারে তার বক্তব্য উপস্থিত করেন, যার শিরোনাম ছিল, বোম্বার্ড দ্য হেডকোয়ার্টার্স, তা ছিল প্রতিবিপ্লবের কেন্দ্রে আঘাত করার আহ্বান। মাও লেখেন, কমিউনিস্ট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও চীনে বুর্জোয়া দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন এলিট ব্যক্তিরা এখনো সরকার কমিউনিস্ট পার্টির কর্তৃত্বমূলক অবস্থান ধরে আছে। সবার দৃষ্টি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা লিউ শাও চী এবং দেং জিয়াও পিংয়ের দিকে গেলেও তারা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে কখনো বহিষ্কার হননি। তবে পার্টি সরকারে তাদের প্রভাব কমে যায়, আপেক্ষিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। আরেকজন নেতা লিন পিয়াও মাওয়ের খুবই অনুগত হিসেবে তখন সামনের সারিতে জায়গা করে নেন। তবে শিগগিরই তিনি চক্রান্তকারী হিসেবে অভিযুক্ত হন এবং ১৯৭১ সালে এক প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত হন। সাংস্কৃতিক বিপ্লবকালে সাংগঠনিকভাবে মূল ভূমিকায় ছিল রেড গার্ড সারা দেশে প্রধানত তরুণদের নিয়ে গঠিত সংগঠন বিভিন্ন অঞ্চলে সমাজতান্ত্রিক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বক্তব্য প্রচার করত, জমায়েত করত মানুষকে, নাটক-গান-বিতর্কসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করত, গ্রাম-শহর কমিউন কারখানায় সন্দেহভাজন প্রতিবিপ্লবী বা গণবিরোধী তত্পরতায় লিপ্ত ব্যক্তিদের গণশুনানির সম্মুখীন করত। সমালোচনা হতো, তাদের আত্মসমালোচনার সুযোগ দেয়া হতো। মাও সে তুং তরুণদের উদ্দেশেই বলেছিলেন,

বিশ্ব একই সঙ্গে তোমাদের আমাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি তোমাদের। তোমরা তরুণরা, জীবনের প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ, সকাল -৯টার সূর্যের মতো। তোমাদের ওপরই আমাদের ভরসা... বিশ্ব তোমাদের। চীনের ভবিষ্যৎ তোমাদেরই হাতে।

সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ১৬ দফা কর্মসূচি

১৯৬৬ সালের আগস্ট সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্পর্কে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি আনুষ্ঠানিক অবস্থান ঘোষণা করে, যা ১২ আগস্ট পিকিং রিভিউ- প্রকাশিত হয়। এর শিরোনাম ছিল মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্পর্কে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত। সাধারণভাবে ১৬ দফা নামে পরিচিত সিদ্ধান্তই সাংস্কৃতিক বিপ্লবের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হিসেবে ধরা হয়।

এর প্রথম দফা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের একটি নতুন পর্যায়, দ্বিতীয় দফায় বর্তমান প্রবণতা এবং এর ওঠানামা শিরোনামে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কারণ, এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, নেতৃত্ব দানকারী বিভিন্ন অংশ, প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। তৃতীয় দফায় সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সাফল্যের জন্য পার্টি নেতৃত্বের দৃঢ় ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। চতুর্থ দফায় জোর দিয়ে বলা হয়, আন্দোলনে জনগণকে নিজেরাই নিজেদের শিক্ষিত করতে হবে। যদি ভুল বা বিশৃঙ্খলা হয়, তবুও জনগণের নিজেদের চিন্তাশক্তির ওপর ভরসা করতে হবে। পঞ্চম দফায় পার্টির শ্রেণী লাইন দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষায়তনে সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, প্রতিক্রিয়াশীল স্বেচ্ছাচারী বিদ্বান এবং কর্তা ব্যক্তি আর সাধারণভাবে বুর্জোয়া ধ্যান-ধারণাসম্পন্ন ব্যক্তিদের এক করে দেখা চলবে না। ষষ্ঠ দফায় জনগণের মধ্যে বিভিন্ন দ্বন্দ্বকে যথাযথভাবে সমাধান করার কথা বলা হয়। ধারায় বিভিন্ন মত বিতর্ক নিয়ে সতর্ক থাকার কথা বলা হয় এভাবে, বিতর্কে তথ্য যুক্তির ওপরই গুরুত্ব দিতে হবে, তার ভিত্তিতেই অগ্রসর হতে হবে। ভিন্নমত প্রকাশকারী যদি সংখ্যালঘু অংশ হয়, তাকে সংখ্যাগুরুর মতের পক্ষে আনার জন্য যেকোনো ধরনের চাপাচাপি বা জোর করা গ্রহণযোগ্য নয়। সংখ্যালঘু অংশকে বরং রক্ষা করতে হবে, কেননা অনেক সময় সত্য আসে সংখ্যালঘু অংশের কাছ থেকেই। যদি তারা ভুলও হয়, তবুও তাদের অবস্থানের পক্ষে যুক্তিতর্ক করার সুযোগ দিতে হবে। যখনই কোনো বিষয়ে বিতর্ক হবে, তা পরিচালনা করতে হবে যুক্তি দিয়ে, কোনোভাবেই বলপ্রয়োগ বা চাপাচাপি দিয়ে নয়।

সপ্তম দফায় সতর্ক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে, যারা বিপ্লবী জনতাকে প্রতিবিপ্লবী বলে আখ্যায়িত করে। অষ্টম দফায় বিপ্লবের ক্যাডারদের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নবম দফায় বিভিন্ন অঞ্চলে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পক্ষে গড়ে ওঠা নানা গ্রুপ কমিটির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। ধারায় বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে অনেক নতুন ঘটনা ঘটছে। বহু স্কুল অঞ্চলে জনগণ যেভাবে নতুন নতুন সংগঠন গড়ে তুলছেন তা খুবই তাত্পর্যপূর্ণ এবং ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।... এরা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে নিজেরাই নিজেদের শিক্ষিত করছে। জনগণের সঙ্গে জনগণের সংযোগ স্থাপনের জন্য এরা এক অসাধারণ সেতু। ধারায় আরো বলা হয়, এসব সংগঠন যথাযথভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্যারী কমিউনের মতো সাধারণ নির্বাচন চালু করতে হবে।

শিক্ষা সংস্কারের কথা বলা হয় দশম দফায়। এখানে শিক্ষার পাঠ্যসূচি নিয়ে আলোচনা ছাড়াও বলা হয়, স্কুলের সময় কমাতে হবে, কোর্স আরো কমাতে উন্নত করতে হবে। শিক্ষা উপকরণগুলোর মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো সহজ করতে হবে। ১১তম দফায় প্রকাশ্যে বা সংবাদপত্রে নাম ধরে কারো সমালোচনা প্রসঙ্গে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট পার্টি কমিটির আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে কারো নাম ধরে সমালোচনা প্রচার ঠিক হবে না। পত্রিকায় কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি ধরে নয়, বরং প্রবণতা ধরে সাধারণ সমালোচনা রাখতে হবে। ১২তম দফায় বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ কর্মীদের সম্পর্কে বলা হয়, তারা যদি পার্টি এবং সমাজতন্ত্রের বিরোধী না হয়, যদি দেশপ্রেমিক হিসেবে কাজ করে তাহলে তাদের কাজে বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির যথাযথ পরিবর্তনে সব সহযোগিতা দেয়া হবে। এক বছর আগে শুরু হয়েছিল সমাজতান্ত্রিক শিক্ষা আন্দোলন এর সঙ্গে শহর গ্রামে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কর্মসূচি সমন্বয়ের বিষয়ে বলা হয় ১৩তম দফায়। ১৪তম দফায় বিপ্লবকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া হয়। বলা হয়, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে, উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। সাংস্কৃতিক বিপ্লবে গণমুক্তি বাহিনীসহ সামরিক বাহিনীর ভূমিকা বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয় ১৫তম দফায়। ১৬তম দফায় বলা হয়, মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে আমাদের সব কাজের দিশা নিতে হবে মাও সে তুং চিন্তাধারা থেকে।

১৬ দফা ঘোষণার শুরুতেই বলা হয়েছিল, চীন বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যদিও বুর্জোয়াদের উচ্ছেদ করা হয়েছে তবুও তারা শোষক শ্রেণীর পুরনো ধ্যান-ধারণা, সংস্কৃতি, প্রথা অভ্যাস দিয়ে মানুষকে দূষণ করে আবারো ফিরে আসার চেষ্টা করছে। তাদের মধ্যে ক্ষমতাবানও অনেকে আছে যাদের পরাজিত করে বিপ্লবকে রক্ষা তাকে এগিয়ে নেয়ার কর্মসূচি হিসেবেই সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ঘোষণা।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত সমাজতন্ত্রী পত্রিকা মান্থলি রিভিউ- সম্পাদক পল সুইজি হ্যারি ম্যাগডফ চীন বিপ্লবকে প্রথম থেকেই ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ রাখছিলেন। তারা ১৯৬৭ সালের জানুয়ারিতে নিজেদের পত্রিকায় এই ঘোষণার সারসংক্ষেপ মূল্যায়ন প্রকাশ করেছিলেন। তাদের মূল্যায়নে ১৬ দফা ঘোষণা ছিল যৌক্তিক, বিপ্লবী মানবিক দলিল। মাও সে তুংয়ের নেতৃত্ব, তার প্রতি চীনের মানুষের বিপুল আস্থার বিষয়টি তারা গুরুত্বপূর্ণ বলেছিলেন, তবে ভালোবাসা আস্থা ব্যক্তিপূজায় পরিণত হওয়ার বিষয়ে তারা সতর্কও করেছিলেন। [চলবে]

 

আনু মুহাম্মদ: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন