উৎপাদনে ফিরছে আরএসআরএম

রাশেদ এইচ চৌধুরী, চট্টগ্রাম ব্যুরো

দীর্ঘ আট মাস বন্ধ থাকার পর উৎপাদনে ফিরছে ইস্পাত খাতে দেশের অন্যতম বৃহৎ স্টিল উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠান রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড (আরএসআরএম) আগামী সপ্তাহেই পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইস্পাত খাতের কোম্পানিটি। এর পরই শুরু হবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন।

দ্বিতীয় প্রজন্মের কোম্পানি হিসেবে ১৯৮৬ সালে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে আরএসআরএম। প্রতিষ্ঠানটির এমএস রড উৎপাদনের কারখানা চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী রোডে অবস্থিত। বছরে প্রায় তিন লাখ টন রড উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে কারখানায়। যান্ত্রিক ত্রুটিতে বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত হাতিরঝিল, উড়াল সড়কসহ বড় বড় প্রকল্পের স্থাপনা নির্মাণে নিয়মিত সরবরাহ হয়েছে আরএসআরএম ব্র্যান্ডের রড। ব্যবসা পরিচালনায় পণ্যের গুণগত মানের সুনাম থাকায় প্রতিষ্ঠানটি বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের সর্বোচ্চ পুরস্কার, ডিঅ্যান্ডবি করপোরেট পুরস্কার, ইনস্টিটিউট আব চাটার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ কর্তৃক করপোরেট গভর্ন্যান্স কমপ্লায়েন্সের ওপর ভিত্তি করে ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে ব্রোঞ্জসহ বেশকিছু পুরস্কার অর্জন স্বীকৃতি লাভ করে।

আরএসআরএম কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চলতি বছরের শুরুতে আরএসআরএমের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর প্রতিষ্ঠানটির ১৩২/১১ কেভি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী করোনা আক্রান্ত হয়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীন সময়ে ভুল ইঞ্জিনিয়ারিং অপারেশনের কারণে সাব-স্টেশনটির জাতীয় গ্রিডের জিআইএস ব্রেকার সুইচ গিয়ার নষ্ট হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে দেশীয় প্রকৌশলীদের দিয়ে সাব-স্টেশন মেরামতের চেষ্টা করা হলেও চীন থেকে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী আনা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। চীনা বিশেষজ্ঞ দলের প্রস্তাব অনুযায়ী যন্ত্রপাতি যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছিল আরো আগে। কিন্তু দুষ্প্রাপ্য মডেলের যন্ত্রপাতি হওয়ায় বিদেশ থেকে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কয়েক দফায় সময় নেয়ায় উৎপাদন কার্যক্রম পেছাতে থাকে।

আরএসআরএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকছুদুর রহমান প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, দীর্ঘ আট মাস বন্ধ থাকার পর আগামী সপ্তাহে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাচ্ছি আমরা। তার পরেই শুরু হবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন। এরই মধ্যে কারখানায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন সংস্কারের কাজ শেষ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিলের যে বকেয়া ছিল, সেটাও সেটেল করা হয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে। দেশে অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় আমরাও উৎপাদন সম্প্রারণের ব্যাপারে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেব।

যন্ত্রপাতি ত্রুটির বিষয় ছাড়াও সাব-স্টেশন মেরামত পিছিয়ে যাওয়ার আরো কিছু কারণ উল্লেখ করেছে আরএসআরএম কর্তৃপক্ষ। করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় চীনা প্রকৌশলীরা সে সময়ে বাংলাদেশে আসতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন। এর মধ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণে দেশে কয়েক দফা কঠোর বিধিনিষেধ দেয়া হয়। আবার অন্যান্য কাজ যখন এগিয়ে আনা হয় তখন দীর্ঘ সময়ে উৎপাদন বন্ধ থাকায় যন্ত্রপাতি ওভারহোলিংয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

তাই সব ধরনের প্রস্তুতি শেষে এখন পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করে চলতি মাসেই বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

১৯৭৩ সালে ইস্পাত ট্রেডিং ব্যবসা শুরু করেন মাকছুদুর রহমান। ব্যবসার পরিধি ধাপে ধাপে বাড়তে থাকলে ১৯৮৬ সালে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠা করেন রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড, যেটি সংক্ষেপে আরএসআরএম নামেই বেশি পরিচিতি লাভ করেছে। ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ক্যাটাগরির আরএসআরএম।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন