যুক্তরাষ্ট্রের আদালত

রোহিঙ্গাবিদ্বেষীদের তথ্য দিতে ফেসবুককে নির্দেশ

বণিক বার্তা ডেস্ক

রোহিঙ্গাবিদ্বেষী অ্যাকাউন্টগুলোর তথ্য দিতে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুককে নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারপতি। খবর রয়টার্স।

রোহিঙ্গাদের গণহত্যার অভিযোগ তদন্তে এসব অ্যাকাউন্টের রেকর্ড তলব করেন আদালত। এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি তাদের প্লাটফর্ম থেকে এসব অ্যাকাউন্ট সরিয়ে নিয়েছিল। একই সঙ্গে বিষয়ে ফেসবুকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সম্পর্কিত আবেদনও নাকচ করে দিয়েছে আদালত এবং নীতিমালাকে বিড়ম্বনায় সমৃদ্ধ বলে আখ্যাও দিয়েছেন।

আদালতের আদেশে দেখা যায়, ওয়াশিংটন ডিসির বিচারক তদন্তকারীদের কাছে এসব তথ্য হস্তান্তরে ব্যর্থ হওয়ায় ফেসবুকের কঠোর সমালোচনা করেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে গণহত্যার অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলা দায়েরের জন্য তদন্তকারীদের এসব অ্যাকাউন্টের তথ্য প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয়। এর আগে ফেসবুক এসব তথ্য প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি জানায়, ব্যবহারকারীদের যোগাযোগ সম্পর্কিত এসব তথ্য প্রকাশ যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশন পরিষেবা-সংক্রান্ত আইনের লঙ্ঘন।

ফেসবুকের এমন প্রতিক্রিয়ায় আদালত জানান, এটি ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশন পরিষেবা-সংক্রান্ত আইনের আওতায় থাকে না এবং এসব তথ্য তদন্তকারীদের কাছে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। বিচারক জানান, ফেসবুকের গোপনীয়তা-সংক্রান্ত আইনটি বিড়ম্বনায় আচ্ছাদিত। সংবাদমাধ্যমগুলোর একটি শাখাই রয়েছে, যা ফেসবুকের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ইতিহাস দ্বারা পরিপূর্ণ।

বিষয়ে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্টটির একজন মুখপাত্র জানান, ফেসবুক সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করেছে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি জাতিসংঘের একটি পর্ষদের কাছে স্বেচ্ছাসেবী বৈধ প্রকাশ হিসেবে তথ্য প্রদান করেছে। জাতিসংঘের পর্ষদ মিয়ানমার নিয়ে স্বাধীন তদন্ত পদ্ধতি ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে।

২০১৮ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার এক তদন্তের তথ্যানুযায়ী, মিয়ানমারে ঘৃণামূলক বক্তব্য অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরিতে ফেসবুক মূল ভূমিকা পালন করছে। একই সময়ে রয়টার্সের এক তদন্তে দেখা যায়, এক হাজারের বেশি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিকৃত ভাষায় কটাক্ষ করা হয়। এমনকি তাদের গুলি করে হত্যার অনুরোধও করা হয়। ফেসবুক জানায়, সে সময় তাদের ভুয়া তথ্য এবং ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য কনটেন্ট প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনেকটা ধীরগতিতে চলছিল।

আদালতের আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন-সংক্রান্ত বিচারক জিয়া এম ফারুকি বলেন, ফেসবুক তাদের প্লাটফর্ম থেকে গণহত্যায় উসকানি দেয়া-সংক্রান্ত কনটেন্ট সরিয়ে ঘৃণামূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ সম্পন্ন করেছে। তবে তারা এসব অ্যাকাউন্টের তথ্য হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতির মাধ্যমে পদক্ষেপ সম্পূর্ণ করার প্রক্রিয়ায় হোঁচট খেয়েছে।

বিচারক বলেন, একজন সার্জন টিউমার অপারেশন করার পর তা আবর্জনার স্তূপে ফেলে দেন না। বরং তিনি তা সংরক্ষণ করেন এবং রোগ শনাক্তের কাজে ব্যবহার করেন। ঘৃণামূলক বক্তব্য-সংক্রান্ত এসব কনটেন্ট হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানালে তা রোহিঙ্গা গণহত্যা কীভাবে শুরু হয়েছে তা নির্ণয় করতে ব্যর্থ হবে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এসব অভিযোগ প্রমাণের ক্ষেত্রে নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন