সংকোচনের মুখে ভারতের তুলা উৎপাদন খাত

বণিক বার্তা ডেস্ক

২০২১-২২ মৌসুমে ভারতে ২ কোটি ৮৩ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হবে ছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশের তুলার বাজারে বড় হিস্যা রয়েছে ভারতের। স্থানীয় চাহিদার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ প্রতিবেশী দেশটি থেকে আমদানির মাধ্যমেই পূরণ করে বাংলাদেশ। তবে চলতি বছর বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে তুলা সরবরাহ সংকুচিত হতে পারে। কারণ বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেশটির তুলা উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফিচ সলিউশন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২১-২২ মৌসুমে ভারতে তুলা উৎপাদন শতাংশ কমতে পারে। মৌসুম শেষে মোট উৎপাদন দাঁড়াতে পারে কোটি ৮৩ লাখ বেলে (প্রতি বেলে ৪৮০ পাউন্ড)

জুলাই আগস্ট তুলা আবাদের উপযুক্ত সময়। দুই মাসেই পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাব তুলা উৎপাদনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের প্রধান তুলা উৎপাদনশীল রাজ্য গুজরাট। দেশটির বার্ষিক উৎপাদিত তুলার এক-তৃতীয়াংশই আসে রাজ্য থেকে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের হার ছিল গড় পরিমাণের ৩০ শতাংশেরও নিচে। ফলে আবাদ উৎপাদন দুটিই চাপের মধ্যে পড়েছে।

এদিকে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে কীটপতঙ্গের আক্রমণও। তুলা উৎপাদনে ভারতের অন্যতম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য পাঞ্জাবের ভাটিণ্ডা মানসা জেলায় পিংক বোলওয়ার্মের (এক ধরনের পতঙ্গ) প্রাদুর্ভাব হয়েছে। ফলে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যদিও ২০২২-২৩ মৌসুমে উৎপাদন আবারো প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসবে বলে মনে করছে ফিচ সলিউশন। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, সময় আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি পিংক বোলওয়ার্মের প্রকোপও কমে আসবে। অন্যদিকে ভারতে কভিড-১৯ মহামারীর চলমান প্রভাব টেক্সটাইল খাতের কাঁচামাল উৎপাদন ব্যবহারে দীর্ঘ সময় টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে।

বহুমুখী প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে ভারত সরকারও নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি দেশটির সরকার পাঁচ বছর মেয়াদি উৎপাদন-সংক্রান্ত প্রণোদনা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে স্থানীয় টেক্সটাইল খাতের উৎপাদকদের অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারতের টেক্সটাইল উৎপাদন লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পেতে পারে।

ফিচ সলিউশন জানায়, চলতি বছর তুলার বৈশ্বিক চাহিদা নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। এক্ষেত্রে প্রত্যাশার তুলনায় বেশি চাহিদা তৈরি হবে বাংলাদেশ তুরস্কে। বছর তুলার বৈশ্বিক চাহিদা ১৪ দশমিক শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর মহামারীর প্রভাবে চাহিদা ১৩ দশমিক শতাংশ কমে গিয়েছিল। বছরের শুরুর দিকে ফিচ ১৮ লাখ টন তুলার ঘাটতির পূর্বাভাস দিয়েছিল। কিন্তু বৈশ্বিক চাহিদা সরবরাহের প্রবল ভারসাম্যহীনতার কারণে বর্তমানে ঘাটতি বেড়ে ৪৪ লাখ বেলে পৌঁছানোর আশঙ্কা করছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে নিম্নমুখী চাপের মুখে পড়বে তুলার বৈশ্বিক মজুদ। বাজারে এমন সংকোচন তৈরি হলে পণ্যটির দাম হু হু করে বাড়বে।

ফিচের দেয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশ ভিয়েতনামের টেক্সটাইল খাতে দ্রুত প্রসার ঘটছে। ফলে বৈশ্বিক তুলা ব্যবহারে দেশ দুটির অংশীদারিত্ব লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়বে। এদিকে স্বল্প ব্যয়ের উৎপাদনে স্থানান্তরিত হওয়ায় লাভবান হবে ভারত, ইন্দোনেশিয়া পাকিস্তান। বিপরীতে পোশাক রফতানিতে বিশ্ববাজারে হিস্যা বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে চীন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন