ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ভোক্তা চহিদা। রেকর্ডের পথে বার্ষিক খাদ্য ব্যয়। বিনিয়োগের টেকসই সুযোগ। সবমিলিয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্য ও পানীয়ের বাজারে পরিণত হবে এশিয়া। নতুন একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দশকের শুরুতে এশীয় ভোক্তাদের বার্ষিক মোট খাদ্য ব্যয় ৮ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। বাড়তি এ চাহিদা মোকাবেলায় এ অঞ্চলে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘এশিয়া ফুড চ্যালেঞ্জ রিপোর্ট ২০২১’
শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আর্থিক ও বিনিয়োগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসি, রাবোব্যাংক ও টেমাসেক যৌথভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এশিয়ার ভোক্তারা তাদের খাদ্য ব্যয় দ্বিগুণ করতে চলেছেন। ২০১৯ সালে ৪ লাখ কোটি ডলার থেকে দ্বিগুণ হয়ে ২০৩০ সালে এ ব্যয় ৮ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছবে। এ পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের জন্য অধিক লাভজনক ও আরো টেকসই সুযোগ তৈরি করেছে।
অতিরিক্ত এ চাহিদার বেশির ভাগই আসবে ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সচেতন এবং দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা থেকে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৯০ কোটি জনসংখ্যা এবং বিশ্বের মধ্যবিত্তের মধ্যে ৬৫ শতাংশেরই বসবাস এশিয়ায় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
টেমাসেকের কৃষিবাণিজ্যের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনুজ মহেশ্বরী বলেন, মানুষ এখন স্বাস্থ্যকর খাবার চায়, তারা নিরাপদ খাবার চায়। পাশাপাশি তারা অনলাইনে খাবার কিনতে চায় এবং সেগুলো যেন অবশ্যই টেকসই খাবার হয়।
খাবারের পেছনে সবচেয়ে বেশি ব্যয় বাড়বে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। ভারতে বার্ষিক এ বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। যদিও সামগ্রিকভাবে চীন সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রাখবে।
এশিয়া-প্যাসিফিক মহাসাগরীয় ১২টি দেশের ৩ হাজার ৬০০ জন ভোক্তাদের ওপর এ সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছে। পাশাপাশি এ সমীক্ষায় খাদ্য খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথোপকথন এবং তিন হাজারেরও বেশি খাদ্য ও পানীয় কোম্পানির তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রতিবেদনের এ ফলাফল পাওয়া গেছে।
ক্রমবর্ধমান চাহিদা এরই মধ্যে এশিয়ার দুর্বল খাদ্য বাস্তুতন্ত্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। কভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর এ চাপ আরো বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, বাড়তি এ চাহিদা মোকাবেলায় চলতি দশকে খাদ্য বাণিজ্যের পুরো চেইনজুড়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেয়া ৮০ হাজার কোটি ডলার প্রাথমিক বিনিয়োগের চেয়ে এটি ৭৫ হাজার কোটি ডলার বেশি। মহেশ্বরী বলেন, এ পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক সুযোগ তৈরি করেছে। সত্যিকার অর্থেই এটি অনেক বড় একটি সুযোগ।
প্রতিবেদনে এ অঞ্চলে স্বাস্থ্যকর ডায়েট, তাজা উৎপাদন, নিরাপদ ও সন্ধানযোগ্য উৎস, টেকসই ব্যয় এবং বিকল্প প্রোটিন ও অনলাইন ক্রয়সহ ছয়টি জটিল প্রবণতা তুলে ধরা হয়েছে। মহেশ্বরী বলেন, এ প্রবণতাগুলো কৃষিবাণিজ্যের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে। পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে যে, ভোক্তারা এশিয়ার মতো জায়গায় চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে এ ধরনের খাবার পেতে পারেন। খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থার রূপান্তরে বিনিয়োগ করা এগফান্ডারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে কৃষিপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ যথেষ্ট বেড়েছে। এ বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৭৭ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৫০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।