বিল্ড-ইউনিডোর যৌথ জরিপ

কভিডকালীন প্রণোদনা পেয়েছে ৬% ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিডকালীন সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের সহায়তা পেয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত মাত্র শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান। সারা এশিয়ায় এর গড় ৩৬ শতাংশ। চলতি বছর মার্চ-জুলাই সময়ে দেশের সব এসএমই বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে। একই সময়ে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিডোর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে চিত্র উঠে এসেছে।

গতকাল বিল্ডের আয়োজনে ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কিং কমিটির (এফএসডিডব্লিউসি) নবম বৈঠকে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে কো-চেয়ার ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট এনকেএ মবিন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য ব্যাংক-ক্লায়েন্ট সম্পর্কই একমাত্র শর্ত নয়; প্রজ্ঞাপন অনুসারে বুক অব অ্যাকাউন্টসের ওপর ভিত্তি করেও ঋণ দেয়া যেতে পারে। কোলাটেরালমুক্ত ঋণের জন্য সিজিএস বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দেশের প্রত্যেক বিভাগে কোলাটেরালমুক্ত ঋণ প্রদানের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১০ শতাংশ কোলাটেরালমুক্ত ঋণ প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মোট ঋণের শতাংশ নারী উদ্যোক্তাকে শতাংশ সুদে দিতে হবে।

তিনি জানান, কটেজ, মাইক্রো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ট্রেড লাইসেন্সের বিকল্প নিয়ে আসতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে এরই মধ্যে অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স সমস্যার সমাধান হয়। এছাড়া গ্রামীণ অতিদরিদ্র ব্যক্তি ব্যবসায়ীদের অর্থায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং, এমএফএস ব্যাংকের উপশাখার মাধ্যমে ৫০০ কোটি টাকার কোলাটেরালমুক্ত ঋণ প্রদানের একটি নতুন স্কিম গ্রহণ করেছে।

ডেপুটি গভর্নর আরো বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমনভাবে নীতি বাস্তবায়ন করছে, যার ফলে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সহায়তা নিশ্চিত হবে এবং বেসরকারি খাত, বিশেষ করে সিএমএসএমইদের ওপর তহবিলসংক্রান্ত বোঝার ব্যয় কমে আসবে। তিনি জানান, সিএমএসএমইদের পেমেন্ট গেটওয়ের জন্য একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশ্বব্যাংক যৌথভাবে কাজ করছে।

এনকেএ মবিন বলেন, সিএমএসএমইর সংজ্ঞার বিষয়টি সমাধান করা হলে সিএমএসএমইদের অর্থায়নের চ্যালেঞ্জগুলো নিরসন করা সহজ হবে। সিএমএসএমই উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব প্রতিষ্ঠান, যেমন এসএমই ফাউন্ডেশন, বিসিক, পিকেএসবি, পিকেএসএফ ইত্যাদিকে একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আওতায় নিয়ে আসা যেতে পারে।

২০২১ সালে ডিসিসিআইয়ের সদস্যদের ওপর পরিচালিত একটি জরিপের বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য আবেদনকারী ৪৫ শতাংশ উদ্যোক্তাই ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমোদন পায়নি। অনুমোদিত ঋণের অর্ধেকই সঠিক সময়ে বিতরণ করা হয়নি। তার মতে, ব্যাংক-ক্লায়েন্ট সম্পর্ক এক্ষেত্রে একটি বাধা।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিতে ৮২ শতাংশ অবদান রাখছে সিএমএসএমইরা, কিন্তু প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে খাতটি খুব কমই সহায়তা পাচ্ছে। ব্যাংকের উচিত ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ তিন মাস বা ছয় মাসের নগদ প্রবাহের ওপর গুরুত্ব দেয়া। তিনি স্টিমুলাস প্যাকেজ বিতরণের জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস, এসএমই ব্যাংক বেসরকারি খাতের জন্য কর সুবিধা প্রদানের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

বৈঠকে রিডিজাইনিং কভিড স্টিমুলাস লিংকিং টু এমপ্লয়মেন্ট, কনজাম্পশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফর নেক্সট রাউন্ড সাপোর্ট শিরোনামে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন বিল্ডের গবেষণা সহযোগী মো. কামরান হাসনাইন। তিনি চলতি বছরের মার্চ-জুলাই সময়ে বিল্ড-ইউনিডোর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি জরিপের প্রাথমিক ফাইন্ডিংস তুলে ধরেন। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাত্র শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে সহায়তা পেয়েছে, যা কিনা এশিয়ায় গড় হিসাবে ৩৬ শতাংশ। মার্চ-জুলাই সময়ে দেশের সব এসএমই বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে। অন্যদিকে এশিয়ার ঘাত সক্ষম ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিক্রিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে সময়ে বাংলাদেশে ভোক্তা চাহিদা কমেছে। জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে দেশে এশিয়া অঞ্চলের এসএমই বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মী ছাঁটাইয়ের হার উচ্চ।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের হেড অব এসএমই মোরেটরিয়াম সম্প্রসারণ সংক্রান্ত বিল্ডের প্রস্তাব সমর্থন করেন। তার মতে, এর ফলে ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটের মুখোমুখি হবে না।

এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক . নাদিয়া বিনতে আমিন বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজ বিতরণের ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত। ক্রেডিট লাইন, ট্রেড লাইসেন্স লেনদেনের পরিমাণসংক্রান্ত যেসব বিধান রয়েছে, সেগুলো নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ করা প্রয়োজন।

প্রিজমের টিম লিডার আলী সাবেত বলেন, ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ব্যাংক পৃথক একটি এনটিটির বিষয়ে বিবেচনা করতে পারে। কটেজ শিল্পের উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছতে তিনি বিসিকের বিশাল নেটওয়ার্ক কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন।

ঢাবির সেন্টার ফর মাইক্রোফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক . এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, একই রকম দেশগুলোর মধ্যে (জিডিপির সাপেক্ষে) বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের তুলনা করে জরিপ পরিচালনা করা হলে প্রকৃত অবস্থা আরো ভালোভাবে বোঝা যাবে।

ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, তফসিলি ব্যাংকের প্রতিনিধি, একাডেমিশিয়ান, বিজনেস চেম্বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা আরো অনেকে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন