করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সব ধরনের কার্যক্রম। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে জ্বলে উঠেছে দুটি মঞ্চের আলো। সরে গেছে বিধিনিষেধের পর্দা। প্রথম দিনেই জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে মৈত্রী থিয়েটারের ‘কেনারাম বেচারাম’
এবং এক্সপেরিমেন্টাল হলে আরণ্যক নাট্যদলের ‘কহে ফেসবুক’
পরিবেশনার মধ্য দিয়ে কেটেছে মঞ্চের খরা। করোনা মহামারীর কারণে জনসাধারণের সুরক্ষার জন্য সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী লকডাউন থাকায় একাডেমির সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল টানা পাঁচ মাস। সরকারি প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা অনুযায়ী লকডাউন শেষে একাডেমির সব কার্যক্রম যথারীতি চালু আছে। সংগঠনের চাহিদা অনুযায়ী নীতিমালা অনুসরণ করে মিলনায়তন, মহড়াকক্ষ, সেমিনার কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এর আগে করোনাভাইরাসের কারণে জনসমাগম এড়াতে রাজধানীতে নিজেদের সব মিলনায়তন বন্ধ ঘোষণা করেছিল শিল্পকলা একাডেমি।
শিল্পকলা একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ বণিক বার্তাকে জানান, নাট্যদলগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার দুটি হল বরাদ্দ কমিটি ১৪ সেপ্টেম্বর একটি সভার আয়োজন করে। এরপর জাতীয় নাট্যশালায় স্টুডিও থিয়েটার হল ও এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল ১৭ তারিখ থেকে নাটকের জন্য উন্মুুক্ত করে দেয়া হয়। এ মাসের ২২ তারিখ জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে এম্পটি স্পেসের নাটক ‘আ নিউ টেস্টামেন্ট অব রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’, স্বপ্নদলের ‘হেলেন কিলার’, তীরন্দাজের ‘তামসিক’, উৎস নাট্যদলের ‘মা এর আহ্বান’সহ বেশ কয়েকটি নাটক পরিবেশিত হবে। এছাড়া এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের ‘ঘুম নেই’, প্রাচ্যনাটের ‘রাজা এবং অন্যান্য’সহ বেশকিছু নাটক মঞ্চস্থ হবে। এছাড়া অক্টোবরের বেশির ভাগ দিনের থিয়েটার বুকিং সম্পন্ন হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
এদিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় স্টুডিও থিয়েটার হলে এম্পটি স্পেসের নাটক আ নিউ টেস্টামেন্ট অব রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট মঞ্চস্থ করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানান নাটকটির নির্দেশক নূর জামান রাজা। তিনি জানান, উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ‘দ্য ট্র্যাজেডি অব রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’-এর আখ্যানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে লেখা হয়েছে নাটকটি; যার মাধ্যমে একজন কবির মুখোমুখি হবেন রোমিও-জুলিয়েট ও শেক্সপিয়ার। এম্পটি স্পেস নাট্যদল প্রযোজিত নাটকটি লিখেছেন সাইমন জাকারিয়া। কভিড মহামারীর দীর্ঘ বিরতির পর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে নাটকটির সপ্তম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
তিনি জানান, এর আগে দেশ ও দেশের বাইরে নাটকটির ছয়টি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। একঝাঁক তরুণ নাট্যশিল্পীকে সঙ্গে নিয়ে নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন দলের শিল্পনির্দেশক নূর জামান রাজা। নাটকের মঞ্চসজ্জা, আলোক ও পোশাক পরিকল্পনাসহ আবহসংগীত পরিকল্পনাও করেছেন তিনিই।
নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র এ সময়ের একজন কবি। যিনি পূর্ণিমা রাতে সমাধিতে ফোটা ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা হন, গেয়ে ওঠেন নিষ্ঠাপ্রেমের গান। সে রকম এক রাতে তার গানে রোমিও আর জুলিয়েট এসে হাজির হয় কবির সামনে। কবি জুলিয়েটকে জানিয়ে দেন, রোমিও আসলে জুলিয়েটের আগে ভালোবাসত রোজালিনকে। তাকে দেখার জন্য বন্ধুদের সঙ্গে রাতের এক ভোজসভায় যায় সে। সেখানেই জুলিয়েটের রূপে মুগ্ধ হয়ে ভুলে যায় রোজালিনকে। একথায় অসহায় বোধ করে প্রেমিক যুগল। তারা সাহায্য চায় ফাদার ফায়ারের।
এই ফাদার গোপনে রোমিও-জুলিয়েটের বিয়ে সম্পন্ন করেছিলেন। সত্য প্রকাশ না করে তিনিই আবার প্যারিসের সঙ্গে জুলিয়েটের বিয়ে দিতে রাজি হয়েছিলেন। নিজের এ গোপন কর্ম আড়াল করতে জুলিয়েটকে আত্মহত্যায় বাধ্য করেছিলেন। কবি সেটাও মনে করিয়ে দেন। কবির এসব কাণ্ডে ফাদার আহ্বান করেন উইলিয়াম শেক্সপিয়ারকে। কবি শেক্সপিয়ারকেও ছাড়েননি। প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে তিনি শেক্সপিয়ারের দ্য ট্র্যাজেডি অব রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট নাটকের গঠন ভেঙে দেন।
নির্দেশক নূর জামান রাজা বলেন, ‘রোমিও জুলিয়েটের বিখ্যাত বিয়োগান্তক প্রেমোপাখ্যানকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছেন এর রচয়িতা সাইমন জাকারিয়া। একজন সমালোচকের অবস্থান থেকে তিনি রোমিও-জুলিয়েটের প্রেম, পরিণয় ও বিয়োগের ঘটনাপ্রবাহগুলো দেখিয়েছেন একজন কবির চরিত্রের মধ্য দিয়ে। ধর্ম থেকে রাজনীতি কিংবা সংস্কৃতি যে ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের বাইরে নয়, তা উঠে এসেছে নাটকীয়তার মাধ্যমে।’
নাটকে জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয় করেছেন লোবা আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘জুলিয়েট একজন আদর্শ প্রেমিকা। বিখ্যাত এ চরিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য নিজেকে অনেক প্রস্তুত করতে হয়েছে। দেশে যতটা প্রশংসিত হয়েছি, ভারতেও একাধিক শোতে দর্শকের প্রশংসা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। কভিড মহামারীর পর আবারো মঞ্চের আলোয় দাঁড়াতে পারছি, এটা খুব আনন্দের। সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই প্রাণের মঞ্চে।’
তিনি ছাড়াও এ নাটকে অভিনয় করেছেন গোলাম শাহরিয়ার সিক্ত, স্বাধীন বিশ্বাস, নূর জামান রাজা, নাসিমুল হোসাইন বাধন, বাপ্পি সরদার, শুভ্র আহম্মেদ ও আরিফুল ইসলাম। আবহসংগীত প্রক্ষেপণ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা ইসমাইল হোসেন নয়ন। নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয় ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে।