জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য লড়বে ১৪ সিনেমা

ফিচার প্রতিবেদক

রুপালি পর্দায় ধূসর ছবির বছর ২০২০। মহামারীর কারণে মুক্তি পায়নি উল্লেখযোগ্য কোনো সিনেমা। শুটিং বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। লকডাউন, বিধিনিষেধের নানা সমীকরণে না গিয়ে বড় বাজেটের অনেক সিনেমাই মুক্তির তারিখ পিছিয়েছে। তার পরও বেশ কয়েকটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে মহামারীর বছরে।  

এদিকে চলচ্চিত্র নির্মাণকে উৎসাহ দিতে প্রতি বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করে তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। গত আগস্টে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২০২০ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা আহ্বান করা হয়। গত রোববার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ছিল ছবি জমা দেয়ার সময়সীমা। সময়ের মধ্যে জমা পড়ে মোট ১৪টি পূর্ণদৈর্ঘ্য, সাতটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছয়টি প্রামাণ্যচিত্র। নিটক অতীতে জাতীয় পুরস্কারের জন্য এত কম ছবি জমা পড়েনি।

পুরস্কারের জন্য জমা পড়া পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমাগুলো হলো বীর, শাহেনশাহ, গোর, একজন মহান নেতা, হলুদ বনি, ঊনপঞ্চাশ বাতাস, গণ্ডি, রূপসা নদীর বাঁকে, আমার মা, চল যাই, জয় নগরের জমিদার, সুবর্ণরেখা, হূদয় জুড়ে বিশ্বসুন্দরী। স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা কোথায় পাব তারে, আতর, সাদা গোলাপ, ফেরা, আড়ং, দ্য স্কায়ার্স আমার বাবার নাম এবং প্রামাণ্যচিত্র স্বাধীনতার ডাকটিকিট, রথযাত্রার বাকি ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন বাংলাদেশের অভ্যুদয়, বায়োগ্রাফি অব নজরুল, দ্য ফ্রন্ট পিয়ার্সম্যান ফজলুল হক নীলমুকুট।

শাকিব খান বুবলীর সিনেমা বীর মুক্তি পায় করোনা আসার আগে, ভালোবাসা দিবসে। শতাধিক সিনেমা হলে মুক্তি পায় বীর। বীর পরিচালক কাজী হায়াতের ৫০তম সিনেমা। ৫০তম সিনেমা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলে সেটা হবে কাজী হায়াতের জন্য অনন্য অর্জন। বীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতলে এটি হবে কাজী হায়াতের ১০ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

শাকিব খানের আরেক ছবি শাহেনশাহ মুক্তি পেয়েছিল মার্চ। এর ঠিক দুদিন পরই বাংলাদেশে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়। ফলে শুরুতেই ধাক্কা খায় শাকিব খান-নুসরাত ফারিয়াকে নিয়ে শামিম আহমেদ রনীর সিনেমা।

গাজী রাকায়েতের বহুল আলোচিত সিনেমা গোর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুক্তি পেয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল। মে মাসে যুক্তরাজ্যের হলে মুক্তি পায় গোর সিনেমার ইংরেজি ভার্সন দ্য গ্রেভ। একজন গোরখোদকের জীবনের গল্পে নির্মিত সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন গাজী রাকায়েত। গত বছরের প্রশংসিত সিনেমা ঊনপঞ্চাশ বাতাস। ১৩ মার্চ মুক্তির কথা থাকলেও মহামারী পিছিয়ে দেয় এর মুক্তি। ২৩ অক্টোবর দেশের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে মুক্তি পায় সিনেমাটি। গত বছরে মুক্তি পাওয়া ছবি এর আগেই জিতে নিয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। ফলে বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের ঊনপঞ্চাশ বাতাস। ছবির প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শার্লিন বর্ষণ। ফখরুল আরেফিনের পরিচালনায় গণ্ডি সিনেমাটাও জিতে নিয়েছে আন্তর্জাতিক পুরস্কার। সব্যসাচী চক্রবর্তী সুবর্ণা মোস্তফা অভিনীত গণ্ডিও থাকবে পুরস্কার প্রত্যাশী সিনেমার তালিকায়।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২০ নিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সচিব মো. মমিনুল হক জানান, ২০১৯   সালে এই পুরস্কারের জন্য জমা পড়েছিল ২৯টি পূর্ণদৈর্ঘ্য, ১১টি স্বল্পদৈর্ঘ্য তিনটি প্রামাণ্যচিত্রসহ মোট ৪৩টি সিনেমা। তিনি বলেন, গতবারের চেয়ে এবার সিনেমা প্রামাণ্যচিত্র কম জমা পড়েছে। কারণ করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা কম। তিনি জানান, -একদিনের মধ্যে সভা আহ্বান করে কবে থেকে সিনেমা দেখা শুরু করবেন সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালে ছবি মুক্তি পেয়েছে কম। মুক্তির জন্য প্রস্তুত থাকলেও অনেক নির্মাতাই বছর ছবি মুক্তি দিতে চাননি। এর প্রধান কারণ, বছরের বেশির ভাগ সময় প্রেক্ষাগৃহ ছিল বন্ধ। মহামারীর ভেতরে সিনেমার প্রতি দর্শকের আগ্রহও ছিল তুলনামূলক কম। বিনিয়োগ উঠে না আসার শঙ্কায় সময়ে প্রযোজক-পরিচালকরা তাদের সিনেমা মুক্তি দিয়ে লগ্নি ঝুঁকিতে ফেলতে চাননি। যদিও বছর ওটিটি প্লাটফর্মে বেশকিছু ছবি মুক্তি পেয়েছে, যেগুলো নিয়ে পরে আলোচনাও হয়েছে।

উল্লেখ্য, এবারো ২৮টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হবে। পুরস্কারের জন্য মনোনীত বিভাগগুলো হচ্ছে আজীবন সম্মাননা, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (প্রধান চরিত্রে), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (প্রধান চরিত্রে), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (পার্শ্বচরিত্রে), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (পার্শ্বচরিত্রে), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা-অভিনেত্রী (খল চরিত্রে), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা-অভিনেত্রী (কৌতুক চরিত্রে), শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী, শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক, শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক, শ্রেষ্ঠ গায়ক, শ্রেষ্ঠ গায়িকা, শ্রেষ্ঠ গীতিকার, শ্রেষ্ঠ সুরকার, শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার, শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা, শ্রেষ্ঠ সম্পাদক, শ্রেষ্ঠ শিল্পনির্দেশক, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক, শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক, শ্রেষ্ঠ পোশাক সাজসজ্জাশিল্পী এবং শ্রেষ্ঠ রূপসজ্জাকার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন