সাউথ বাংলা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেন

অনিয়মের ধারাপাত

হাছান আদনান

সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসি) চেয়ারম্যান এসএম আমজাদ হোসেন। নামে-বেনামে পরিবার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে নিজ ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়েছেন প্রায় ২৬০ কোটি টাকার। অভিযোগ রয়েছে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেয়ারও। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নেয়া ঋণের প্রক্রিয়ায় ছাড়ও পেয়েছেন নজিরবিহীন। সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘিত হয়েছে ব্যাংকিং-সংক্রান্ত যাবতীয় আইন রীতিনীতি। এতে সহায়তা করেছেন তারই নিয়োগ দেয়া অনুগত কিছু কর্মকর্তা। পরিশোধের সময় পেরোলেও এখনো খেলাপি হিসেবে দেখানো হচ্ছে না তাকে। ব্যাংকের পর্ষদ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ঋণ পরিশোধের জন্য বারবার তাগিদ দিলেও তাতে লাভ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ আত্মসাতেরও। সরকারি-বেসরকারি অন্য চারটি ব্যাংকেও তার ঋণ রয়েছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। এগুলোরও আদায় পরিস্থিতি সুবিধাজনক নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদকে) তদন্তেও অনিয়মগুলোর কথা উঠে এসেছে।

দুর্নাম অর্জন করেছেন ব্যবসায়ী হিসেবেও। হিমায়িত খাদ্যের কথা বলে বন্ডেড সুবিধায় কাগজ আমদানি করে তা খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২৫০ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে এরই মধ্যে তার মালিকানাধীন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করেছে মোংলা কাস্টম হাউজ। ঋণ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে গত বছর তার বিদেশযাত্রার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল দুদক।

এসবিএসি ব্যাংক অনুমোদন পায় ২০১২ সালে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন এসএম আমজাদ হোসেন। খুলনা বাগেরহাটভিত্তিক চিংড়িসহ হিমায়িত খাদ্য রফতানির প্রতিষ্ঠান লকপুর গ্রুপের চেয়ারম্যান তিনি। মাছ রফতানি ছাড়াও পাট, পলিমার প্রিন্টিং-প্যাকেজিংয়ের ব্যবসা রয়েছে তার। সাম্প্রতিক সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতি, শুল্ক ফাঁকিসহ বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডের কারণে এসএম আমজাদ হোসেনের নাম বারবার আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। তবে মুহূর্তে এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হচ্ছেন তিনি।

তথ্য অনুযায়ী, আমজাদ হোসেন, তার পরিবার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে শুধু এসবিএসি ব্যাংক থেকেই ঋণ বেরিয়ে গেছে ২৬০ কোটি টাকা। নামে-বেনামে নেয়া অর্থ ফেরত পাচ্ছে না ব্যাংক। পর্ষদের প্রতিটি সভায় চেয়ারম্যানকে তার ঋণের অর্থ ফেরত দেয়ার তাগাদা দেয়া হচ্ছে। নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে নেয়া ঋণের অর্থ ফেরত দিতে তাগাদা দিচ্ছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষও। যদিও এর সবই আমজাদ হোসেন উপেক্ষা করে চলছেন বলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ অভিযোগ তুলেছে।

অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংকিং-সংক্রান্ত যাবতীয় আইন রীতিনীতি সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব ঋণ নিয়েছেন তিনি। এতে সহযোগিতা করেছেন তারই নিয়োগ দেয়া অনুগত কিছু কর্মকর্তা। পরিশোধের সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো খেলাপি হিসেবে দেখানো হচ্ছে না তাকে।

এসবিএসি ব্যাংকে অনিয়মের বড় উদাহরণ হয়ে রয়েছে আমজাদ হোসেনের মালিকানাধীন রূপসা ফিশের ঋণ গ্রহণের ঘটনাটি। কোম্পানিটির নামে ৩৭৪ কোটি টাকার একটি ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যাংক চেয়ারম্যানের কোম্পানিটির ঋণপত্র খোলার কথা শতভাগ মার্জিনে। যদিও সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ঋণপত্রটি খোলা হয়েছিল মাত্র শতাংশ মার্জিনে। ব্যাংকিং রীতিনীতি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে কিছুদিনের মধ্যেই মার্জিনের অর্থ আমজাদ হোসেনকে ফেরতও দেয়া হয়। এছাড়া আইন অনুযায়ী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে ঋণপত্রটি খোলার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নেয়ার কথা। ব্যত্যয় ঘটেছে এক্ষেত্রেও।

শুধু রূপসা ফিশ নয়, আমজাদ হোসেনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর প্রায় প্রতিটিই বড় মাত্রায় ছাড় পাচ্ছে এসবিএসিতে। এমনকি গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থেকেও সাড়ে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের নামে। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৯ সালে নেয়া সে অর্থ এখনো ফেরত দেননি তিনি। নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগপত্রে এসবিএসি ব্যাংকের পরিচালক ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেনের নামেও আরেক গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থেকে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলা হয়েছে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তদন্তেও অনিয়মের বিষয়টি উঠে এসেছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যবস্থাপক শরফুদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে এসবিএসি ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।

তদন্তের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাসহ এসবিএসবি ব্যাংকের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বিষয়ে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, গ্রাহকের জমা দেয়া ব্লাংক চেক ব্যবহার করে চেয়ারম্যানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে বলা হয়েছিল, এক সপ্তাহের মধ্যে ঋণটি সমন্বয় করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দায়টি সমন্বয় হয়নি। বিষয়টি দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানানো হয়নি। এমনকি ঋণের বিষয়ে সিআইবিতেও তথ্য জমা দেয়া হয়নি। ঋণের কোনো কিস্তি আদায় না হলেও ব্যাংক কর্মকর্তারা সেটি খেলাপি হিসেবে নথিভুক্ত করেননি। যেসব অপরাধ এসবিএসি ব্যাংকে সংঘটিত হচ্ছে, সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের লাইসেন্সও বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা।

গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে গত ২২ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেয়া হয়। অভিযোগপত্রে এসএম আমজাদ হোসেনের ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসবিএসি ব্যাংকের অর্থ বের করে নেয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, এর আগে চেয়ারম্যান ব্যাংকের খুলনা কাটাখালী শাখা থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ বের করে নিয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক এক নিরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এসএম আমজাদ হোসেন নতুন পদ্ধতিতে অর্থ আত্মসাতের পথ উদ্ভাবন করেছেন। এসবিএসি ব্যাংকের মতিঝিল শাখার গ্রাহক আল-আমিন কনস্ট্রাকশনের মালিক মো. মাসুদুর রহমানের নামে মঞ্জুরীকৃত এসওডি ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে লকপুর গ্রুপের কর্মচারী কামরুলের মাধ্যমে নগদ সাড়ে কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের জুন জুলাইয়ের বিভিন্ন তারিখে এসব অর্থ তোলা হয়েছিল।

অন্যদিকে মতিঝিল শাখা থেকেই এসবিএসি ব্যাংকের পরিচালক ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন যৌথভাবে মেসার্স আদর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে কোটি টাকার এসওডি ঋণসীমা মঞ্জুর করেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রোপ্রাইটর হিসেবে দেখানো হয়েছে ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেমের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান -সিকিউরিটিজের কর্মচারী জহিরুল ইসলামকে। পরে ঋণের অর্থ আমজাদ হোসেনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের অনুকূলে কোটি ফারইস্ট সোস্যাল ফাউন্ডেশনের নামে কোটি টাকার পেমেন্ট অর্ডার ইস্যু করা হয়। এভাবে মতিঝিল শাখার রাফি-মাহি করপোরেশনের মালিক একেএম আসিফ উদ্দিনের অনুকূলে কোটি টাকা এসওডি মঞ্জুর করা হয়, যা পর্যায়ক্রমে কোটি ১৫ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এই একেএম আসিফ উদ্দিনও লকপুর গ্রুপের একজন কর্মচারী।

গত ১৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত এসবিএসি ব্যাংকের পর্ষদ সভায় আমজাদ হোসেন ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম হোসেন দুটি ঋণের ক্ষেত্রেই নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, সভায় ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম হোসেন এক বছরের মধ্যে ওই ঋণের অর্থ ফেরত দেবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন।

আমজাদ হোসেনের ভাতিজি, লকপুর গ্রুপের কর্মচারীসহ বিভিন্ন নামে এসবিএসি ব্যাংক থেকে ঋণ বের করে নেয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা বিএফআইইউসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক তদন্তে উঠে এসেছে। অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার পর তার চেয়ারম্যান পদে থাকা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেছিল বিএফআইইউ। তবে এখন পর্যন্ত আমজাদ হোসেনকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণের কোনো সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, এর আগেও এসবিএসি ব্যাংক নিয়ে অভিযোগ এসেছিল। তা নিয়ে তদন্তও করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটি নিয়ে আবারো কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে দেখা হবে। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

হিমায়িত খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ রফতানির জন্য চারটি কোম্পানি আছে এসএম আমজাদ হোসেনের। এগুলো হলো রূপসা ফিশ অ্যান্ড অ্যালাইড ইন্ডাস্ট্রি, বাগেরহাট সি ফুড ইন্ডাস্ট্রি, লকপুর ফিশ প্রসেসিং কোম্পানি, শ্রিম্প আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে এসব কোম্পানির ব্যবসায়িক পরিস্থিতি খুবই নাজুক।

মাছ রফতানি প্রক্রিয়াসহ অন্য খাতের পাঁচটি কোম্পানি আছে আমজাদ হোসেনের। এর মধ্যে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে বাংলাদেশ পলি প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রি, ইস্টার্ন পলিমার মুন স্টার পলিমারের লাইসেন্স বাতিল করেছে মোংলা কাস্টম হাউজ। পাশাপাশি আমজাদ হোসেনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আলফা অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড এক্সপোর্ট লিমিটেডেরও লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। লাইসেন্স বাতিলের পাশাপাশি বড় অংকের অর্থদণ্ডের মুখেও পড়েছে চার প্রতিষ্ঠান। মূলত হিমায়িত খাদ্য রফতানির কথা বলে বন্ডেড সুবিধায় কাগজ এনে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান চারটির বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ এসেছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার। এর আগেও আমজাদ হোসেনের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ তুলেছিল মোংলা কাস্টম হাউজ। সব মিলিয়ে বর্তমানে আমজাদ হোসেনের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে বলে শুল্ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বিষয়ে মোংলা কাস্টম হাউজের কমিশনার হুসাইন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, এসএম আমজাদ হোসেনের মালিকানাধীন চারটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স আমরা বাতিল করেছি। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। আমাদের আদেশের বিরুদ্ধে তারা আদালতে আপিল করেছেন। বিষয়টি এখন আমাদের প্রধান কার্যালয় দেখছে।

তিনি বলেন, প্রভাবশালী শুল্ক ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে আমরা পেরে উঠছি না। এসএম আমজাদ হোসেনের সব প্রতিষ্ঠানের দায়, দেনা শুল্ক ফাঁকির বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে বিষয়ে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এসবিএসির বাইরেও সরকারি-বেসরকারি অন্য চারটি ব্যাংক থেকেও আমজাদ হোসেনের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর নামে ৭০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা, অগ্রণী রূপালী ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক থেকে এসব ঋণ নিয়েছেন তিনি। এসবিএসির মতো অন্য ব্যাংকগুলো থেকে নেয়া ঋণের আদায় পরিস্থিতিও ভালো নয় বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, দফায় দফায় পুনঃতফসিলের মাধ্যমে এসব ঋণ নিয়মিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আমজাদ হোসেনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মুন স্টার পলিমার ইস্টার্ন পলিমারের অনুকূলে খোলা ঋণপত্রের ক্ষেত্রে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় থেকে খুলনা করপোরেট শাখায় বিষয়ে নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে।

অন্যদিকে এসবিএসি ব্যাংকে সংঘটিত বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে একাধিক তদন্ত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ, দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থা। প্রায় প্রতিটি তদন্তেই ঋণ বিতরণে আইন, রীতিনীতির লঙ্ঘন অনিয়মের সঙ্গে চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের নাম উঠে এসেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন, ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি নিয়ে বণিক বার্তার পক্ষ থেকেও অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।

তাতে দেখা যায়, ব্যাংকিং রীতিনীতির শতভাগ উপেক্ষা করে যখন তখন ব্যাংকটি থেকে ঋণ নিচ্ছেন চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন। টাকা বের করে নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করছেন নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী থেকে শুরু করে স্বজনদের নামও। বছরের পর বছর পার হলেও অর্থ ফেরত দিচ্ছেন না তিনি। আবার ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলেও তাকে ঋণখেলাপি হিসেবে দেখানো হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতেও নিয়ে অভিযোগ তোলা হচ্ছে না।

জানতে চাইলে এসবিএসি ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তা পরিচালক থার্মেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির মোল্লা বণিক বার্তাকে বলেন, চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসহ নামে-বেনামে যেসব ঋণ এসবিএসি ব্যাংক থেকে নিয়েছেন, তা ফেরত দেয়ার জন্য প্রতিটি পর্ষদ সভায়ই আলোচনা হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত ঋণ আদায়ের পরিস্থিতি ভালো নয়। ব্যাংক পরিচালনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রেই চেয়ারম্যান নীতিনৈতিকতার মানদণ্ড সম্পূর্ণ উপেক্ষা করছেন। বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে বারবার তদন্তও চলছে। পরিস্থিতি যা তাতে পরিচালক হিসেবে আমিও বিব্রত।

সামগ্রিক বিষয়ে এসএম আমজাদ হোসেনের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। নিয়ে আমজাদ হোসেনের সেলফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। বিভিন্ন মাধ্যমে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন