বাউবিতে যুগ্ম পরিচালক পদ পাঁচটি, কর্মরত ৫১ জন

সাইফ সুজন

সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিয়োগ পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম অনুসরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও ইউজিসির অনুমোদনের ভিত্তিতে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যুগ্ম পরিচালকের পদ রয়েছে পাঁচটি। যদিও পাঁচ পদের বিপরীতে কর্মকর্তা রয়েছেন ৫১ জন।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় ১১টি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হলো প্রশাসন, পরিকল্পনা উন্নয়ন, মিডিয়া, পাবলিশিং, প্রিন্টিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড স্টেট, ইনফরমেশন, ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস, কম্পিউটার, এক্সামিনেশন, স্টুডেন্ট সাপোর্ট সার্ভিস লাইব্রেরি। এর মধ্যে প্রশাসন, ইনফরমেশন, ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস, এক্সামিনেশন, স্টুডেন্ট সাপোর্ট সার্ভিস শুধু পাঁচটি বিভাগে একটি করে যুগ্ম পরিচালক পদ রয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ১১টি বিভাগেই কর্মরত রয়েছেন প্রায় অর্ধশত যুগ্ম পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা। এমনকি ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেলেও (আইকিউএসি) দুজন যুগ্ম পরিচালক কর্মরত রয়েছেন। যদিও আইকিউএসিতে যুগ্ম পরিচালকের কোনো পদই নেই।

বিষয়ে বাউবি কর্তৃপক্ষের দাবি, আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে এসব কর্মকর্তার পদায়ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটছে না। বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তফা আজাদ কামাল বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির দায়িত্ব গ্রহণ করেছি বেশিদিন হয়নি। দায়িত্ব গ্রহণের পর দেখলাম, আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে এসব কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে। প্রশাসন থেকে অনুমোদনের কারণে আমরা এসব কর্মকর্তার বেতন-ভাতা দিয়ে থাকি। এখন পর্যন্ত আগের ধারাবাহিকতায়ই চলছে। আপগ্রেডেশনের বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ধরনের নির্দেশনা বা আপত্তি কোনো নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা পাইনি।

অন্যদিকে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে আপগ্রেডেশনের ভিত্তিতে এক পদের বিপরীতে ঢালাওভাবে পদায়নের সুযোগ নেই। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক . মুহাম্মদ আলমগীর বণিক বার্তাকে প্রসঙ্গে বলেন, আপগ্রেডেশন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বেশ অস্বচ্ছতা রয়েছে। একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক ধরনের নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। তবে কোনো নীতিমালা দিয়েই পাঁচজনের পদের বিপরীতে ৫০ জন কর্মকর্তা রাখার কোনো সুযোগ নেই। নীতিমালায় আপগ্রেডেশনের আনুপাতিক হারসহ বিভিন্ন শর্ত উল্লেখ থাকে। যেমনপদের বিপরীতে কত শতাংশ আপগ্রেডেশন করা যাবে অথবা একজন কর্মকর্তা কতবার আপগ্রেডেশনের সুযোগ পাবেন। এমনকি নিয়ম অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা পরপর দুটি পদে আপগ্রেডেশনের সুযোগ পাবেন না। যদিও ধরনের শর্ত নিয়ম অনুসরণ না করেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আপগ্রেডেশন দেয়া হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্মকর্তাদের একটি অংশ আপগ্রেডেশনের নামে প্রশ্নবিদ্ধ পদায়নের জন্য দুষছেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমএ মাননানকে। তাদের অভিযোগ, সাবেক উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। একইভাবে কর্মকর্তাদের মুখ বন্ধ রাখতে তাদেরও বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বাউবির একজন কর্মকর্তা বলেন, অধ্যাপক এমএ মাননান দুই মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি প্রশ্নবিদ্ধ নীতিমালার মাধ্যমে একদিকে নিজে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন, অন্যদিকে অন্যদেরও ধরনের সুবিধা নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। ডিগ্রিধারীদের সনদে স্বাক্ষর করা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের দৈনন্দিন কার্যাবলির মধ্যে পড়লেও কাজটির জন্য আলাদা করে পারিশ্রমিক নিতেন তিনি। আগে কোনো রেওয়াজ না থাকলেও দায়িত্ব গ্রহণের পর সনদ স্বাক্ষরের জন্য একটি ভাতা চালু করেন তিনি। এক্ষেত্রে নিজের পাশাপাশি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সংশ্লিষ্ট শাখার অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও অতিরিক্ত পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা রাখা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন