গৃহহীনদের ঘর নিয়ে দুদকের তদন্ত চালু রাখতে হবে —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতীয় সংসদের অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে বক্তব্য রাখেন ছবি: পিআইডি

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের দেয়া ঘর নিয়ে দুর্নীতি বা অনিয়মের তদন্ত চালু রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত বন্ধ করবে কেন? তাদের তদন্ত চালু রাখতে হবে। দেখতে হবে, যারা ঘর ভেঙেছে তারা কারা, তাদের উদ্দেশ্য কী? ৩০০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রত্যেকটা তদন্ত তাদের করতে এবং রিপোর্ট দিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, এক সদস্য প্রশ্ন তুলেছেন আশ্রয়কেন্দ্র নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। তদন্ত করে নয়টি জায়গায় দুর্নীতি পাওয়া গেছে। আর ১০-১২টি জায়গায় অতিবৃষ্টির কারণে মাটি ধসে ঘর পড়ে গেছে। ৩০০টি জায়গায় দরজা-জানালার ওপর হাতুড়ির আঘাত দেখা গেছে। ফ্লোরগুলো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তোলা হয়েছে। এসবের ছবি আছে। ইটের গাঁথুনির পিলার ভেঙে ফেলা হয়েছে। এটা তো দুর্নীতির জন্য হয়নি। এটা কারা করল? এর তদন্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু অ্যারেস্ট হয়েছে। অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দারিদ্র্য ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নামিয়েছে। করোনায় কিছু মানুষ কাজ পাচ্ছে না। কিন্তু একেবারে না খেয়ে কেউ নেই। দারিদ্র্যের হার বাড়তে পারে, কিন্তু ২০ ভাগ থেকে ৪০ ভাগ হয়ে গেছে এটা ঠিক না। করোনার মধ্যেও রেমিট্যান্স বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। গড় আয়ু বেড়েছে। বিএনপির সময় রিজার্ভ ছিল দশমিক বিলিয়ন ডলার। আজকে ৪৮ দশমিক শূন্য বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ।

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে তিনি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। বিশ্বব্যাংক বা কেউ এখানে দুর্নীতির প্রমাণ করতে পারেনি। এখন পদ্মা সেতু দৃশ্যমান, মেট্রোরেল দৃশ্যমান। ঢাকাজুড়ে মেট্রোরেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে বলছেন স্বাস্থ্য খাত একেবারে শেষ হয়ে গেছে। আগের সঙ্গে তুলনা করলেই হয়। দেশের অনেকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ চলে যেতেন। করোনার কারণে অনেকে এবার যেতে পারেননি। দেশে চিকিৎসা করতে হয়েছে। দেশে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল দেখে তাদের চক্ষু চড়কগাছ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই যাতে করোনার টিকা পায় সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। টিকার কোনো সমস্যা নেই। ২৪ কোটি ডোজ টিকা কেনা হবে। টিকা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। দেশেও টিকা উৎপাদন করা হবে।

পাকিস্তানে আম পাঠানো নিয়ে বিএনপির হারুনুর রশীদের বক্তব্যের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, কেবল পাকিস্তান নয়, ভারত, পাকিস্তানসহ আশপাশের প্রতিবেশী দেশ এমনকি মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে সব দেশেই আম পাঠানো হয়েছে। আম পাঠানোর একটা কারণ হচ্ছে বন্ধুত্বের নিদর্শন। আর দ্বিতীয়টি হলো বাজারজাত। সেজন্য সবাইকে আম পাঠানো হয়েছে। তবে একাত্তরে পাকিস্তান যে অত্যাচার করেছে, সেটা নিশ্চয়ই ভোলা যায় না। এটা ভুলে গিয়েছিল বিএনপি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি জিয়াকে হত্যা মামলার আসামি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তত্কালীন স্বরাষ্ট্র সচিব রেজাউল হায়াত তাকে জানান, মৃত ব্যক্তিকে আসামি করা যায় না। কারণে তা করা হয়নি। কিন্তু তাকে আসামি করা উচিত ছিল। কারণ জিয়া যে ষড়যন্ত্রে জড়িত তা ফারুক-রশিদ নিজেরাই বলেছেন।

মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু তাকে খেতাব দিয়েছেন, তা সবই সত্য। কিন্তু তার অবদানটা কী? মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কর্নেল আসলাম বেগ তাকে চিঠি লিখেছিল। ওই চিঠি আমার কাছে আছে। সংসদে সেটা তুলে ধরব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার ছিলেন না। অধিনায়ক খালেদ মোশাররফ যখন আহত হলেন, তখন মেজর হায়দার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, মিডিয়া কী লিখল আর টকশোতে কী বলল, সেটা শুনে আমি কখনো দেশ পরিচালনা করি না। দেশ পরিচালনা করি আমার অন্তর থেকে। কারণ আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছেন। দরিদ্র মানুষের জন্য তিনি বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। সেই মানুষগুলোর জন্য কী কাজ করতে হবে, সেটা আমি বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিখেছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন