মুক্ত অঞ্চলে চৌ এবং মাও

আনু মুহাম্মদ

চীন বিপ্লবের অন্যতম সংগঠক চৌ এন লাই

পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্র। ইরান, ভারত, ইনকা, মায়ার মতো প্রাচীন চীনের সভ্যতা। ১৯৪৯ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে বিপ্লবের পর এক নতুন চীনের যাত্রা হয়। নানা রকম সংস্কার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান বিশ্বে চীন অন্যতম এক পরাশক্তি। জিডিপির হিসাবে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ফসল নয়া চীন এখন পুঁজিবাদী বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র। ঐতিহাসিক বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে চীনের শক্তি-দুর্বলতা, সাফল্য-ব্যর্থতা ধারাবাহিক পরিবর্তনগুলো নিয়ে লিখেছেন আনু মুহাম্মদ

মুক্ত অঞ্চলে কয়েকদিন চলার পর এক গ্রামে পৌঁছলেন এডগার স্নো। সেখানে এক ব্যক্তি যখন স্নোর সঙ্গে ইংরেজিতে কথা শুরু করলেন, বিস্ময়ের ঘোর কাটার পর পরিচয় পাওয়া গেল, তিনিই চৌ এন লাই। চীন বিপ্লবের এবং বিপ্লবোত্তর নির্মাণের অন্যতম প্রধান স্থপতি চৌ এন লাই। স্কুলে পড়ার সময়ই সান ইয়াৎ সেনের চিন্তার প্রভাবে তিনি সংগঠন করা শুরু করেন। দাদার পরিবার ছিল শিক্ষিত, পণ্ডিত পরিবার। সানসহ অনেকেই জাপানে নির্বাসন নিয়েছেন। চৌ জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। দেশে ফিরে মে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে পাঁচ মাস জেলে ছিলেন। ফ্রান্সে আরো পড়াশোনার জন্য যাওয়ার আগেই কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো, কার্ল কাউটস্কির শ্রেণী সংগ্রাম এবং অক্টোবর বিপ্লব বইয়ের অনুবাদ পড়ার সুযোগ পান। এগুলো প্রকাশিত হয়েছিল চেন তু সিউ সম্পাদিত নতুন তারুণ্য প্রকাশনায়, পরে যিনি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার ভূমিকা পালন করেছিলেন।

১৯২০ সালে চৌ ফ্রান্সে যান এবং সেখানে প্রথমে চায়না সোস্যালিস্ট ইয়ুথ কর্পস- যোগ দেন, পরে তিনি (চাইনিজ) কমিউনিস্ট ইয়ুথ লিগ প্রতিষ্ঠা করেন। চার শতাধিক চীনা শিক্ষার্থী এর সদস্য হয়েছিলেন। ফ্রান্স, ইংল্যান্ড জার্মানি হয়ে চৌ দেশে ফেরেন তিন বছর পর। এসে চিয়াং মস্কোর উপদেষ্টাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে থাকেন এবং কুওমিনটাং পার্টির বিভিন্ন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯২৬ সালে সাংহাইতে ছয় লাখ শ্রমিকের ধর্মঘট সংঘটিত করার ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৭ সালের ২১ মার্চ সাংহাইতে শ্রমিকরা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নাগরিক সরকার-এর ঘোষণা দেয়। 

১২ এপ্রিল চিয়াং কমিউনিস্টদের সঙ্গে ঐক্য ভেঙে দিয়ে নানকিংয়ে ঘাঁটি গাড়ে। এর কিছুদিনের মধ্যেই চিয়াংয়ের বাহিনী আকস্মিকভাবে কমিউনিস্টদের ওপর আক্রমণ শুরু করে। সাংহাইয়ের শ্রমিকদের ওপর জোতদার অপরাধ জগতের সন্ত্রাসীদের সমন্বয়ে চিয়াং বাহিনী ছদ্মবেশে এসে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। কয়েকদিনের মধ্যে পাঁচ হাজার মানুষ নিহত হন। চৌ কোনোভাবে রক্ষা পান তার ছাত্রের কারণে। এরপর কয়েক বছর আত্মগোপনে কাজ করেন এবং পরে সোভিয়েত অঞ্চলে যোগ দেন।

এডগার স্নো চৌকে দেখলেন বিপ্লবী আন্দোলন সংগঠনের অন্যতম নেতা হিসেবে। তাঁর প্রধান কার্যালয় পেলেন একটা গুহার ভেতর, কথা বললেন সব বিষয় নিয়ে। সবকিছু জানার, দেখার এবং কথা বলার জন্য পুরো অঞ্চল সফরের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলো। ৯২ দিন হাঁটা বা ঘোড়ায় চড়ে বিভিন্ন সোভিয়েত অঞ্চল দেখার অসাধারণ সুযোগ পেলেন স্নো। এক পর্যায়ে মাও সে তুংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থাও হলো। মাও তখন আরো দূরে। স্নো এটাও দেখলেন, লালফৌজ এবং পার্টির বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই দক্ষ। হাতে চালানো জেনারেটরের মাধ্যমে একটা পোর্টেবল ওয়্যারলেস সেট দিয়ে রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত। এর মাধ্যমে সব গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট সোভিয়েত অঞ্চল সংযুক্ত, এর মধ্য দিয়েই বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ এবং পার্টি সভাসহ সব কার্যক্রমে নেতাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়। চৌ, মাও এবং চু তে কয়েকশ মাইল দূরে থাকলেও তাদের নিয়মিত যোগাযোগে কোনো সমস্যা হয়নি। চিয়াং বাহিনী বহুবার চেষ্টা করলেও যোগাযোগ বিনষ্ট করতে পারেনি, রেডিও কোড ভাঙতে পারেনি। উত্তর-পশ্চিমে পাও আন নামে সোভিয়েতের অস্থায়ী রাজধানীর একটি বিশেষ কেন্দ্রে ৯০ জন শিক্ষার্থীকে রেডিও ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছিল তখন।

চৌয়ের সঙ্গে কথা বলার দিন পর আরো বহু পথ অতিক্রমের পর পাওয়া গেল মাও সে তুংকে। সবার পোশাক, খাবারের ব্যবস্থা একইরকম। মাওয়ের থাকার জায়গাও চৌয়ের মতো একটি গুহার ভেতর। তার বিলাসিতা একটাইমশারি।

স্নোর সাক্ষাতের দুবছর পর মাও সে তুংয়ের সঙ্গে দেখা হয় ভারতীয় এক প্রতিনিধি দলের। জাপানি আক্রমণের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের প্রতিরোধ যুদ্ধে ভারতীয় জনগণের সমর্থনের প্রতীক হিসেবে ১৯৩৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের (তখন সভাপতি ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু) পক্ষ থেকে একটি মেডিকেল মিশন প্রেরিত হয়। তারা তিন বছর চীনে কাজ করেছেন। ১৯৩৯ সালের ১৫ মার্চ ইয়েনানে তাদের সঙ্গে প্রথম মাও সে তুংয়ের সাক্ষাৎ হয়। সাক্ষাৎ নিয়ে সেই দলের একজন সদস্য ডা. বিজয়কুমার বসুর একটি স্মৃতিকথা ১৯৭৭ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর সংখ্যা অনীকে প্রকাশিত হয়। ভারত থেকে আনা নিজেদের অ্যাম্বুলেন্স গাড়ি নিয়ে তারা কাজ করছিলেন। সেই গাড়ি নিয়েই তারা হাজির হন মাওয়ের কেন্দ্রে, যার চারপাশে তখন জাপানি আক্রমণে ধ্বংসস্তূপের সারি।

তিনি লিখেছেন,

এবড়োখেবড়ো অসমান রাস্তা দিয়ে শহরের পশ্চিম প্রান্তে উঁচু পাহাড়ের গায়ে এসে পৌঁছলাম।... মাটির দেয়ালঘেরা একটা উঠোনের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড়াল। উঠোন পেরিয়ে দেখি, পাশাপাশি তিনটি গুহাদরজা, জানালা আর অর্ধবৃত্তাকার ওপরের অংশটা সরু কাঠের জালে তৈরি, শীত এড়ানোর জন্য সেগুলোতে আবার কাগজ সাঁটা।... (পরে জানলাম) ওগুলো নাকি গরিব নাগরিকদের তৈরি বাড়ি। ছাদের ওপর মাটি ফেলে পাহাড়ের গায়ের সঙ্গে রঙ মিলিয়ে দেয়া, বাইরে থেকে যা বোঝাই সম্ভব নয়। সেজন্যই এগুলো জাপানি বোমার হাত থেকে বেঁচে গেছে। ঘরের ভেতর লম্বা নড়বড়ে একটা কেরোসিন কাঠের টেবিল এবং বসার জন্য কয়েকটা টুল।... মাওয়ের পরনে ছিল আর্মি ইউনিফর্মফিকে ধূসর বর্ণের তুলোভর্তি গলাবন্ধ কোট পাতলুম, বহুদিন ব্যবহারে কিছুটা ঢিলে ঢিলে দাগলাগা। পকেট দুটো আছে ফুলেবছর পঁয়তাল্লিশের মতো বয়স, ক্ষীণ চেহারা, দেখে মনে হয়কয়েক বছর আগেকার লংমার্চের ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি।’...

ডা. বিজয় আরো লেখেন,

সাধারণ একজন যোদ্ধার পোশাকে তাঁকে প্রথমেই চিনে ওঠার অসুবিধা থাকলেও দীর্ঘকায় কৃশ ব্যক্তিটির প্রশস্ত ললাট, দীপ্ত চক্ষু ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মুখচ্ছবি লাখ মানুষের মধ্যেও তাঁকে চিনিয়ে দেয় সেই বহুশ্রুত, প্রায় কিংবদন্তির নায়ক মাও সে তুংফটোতে যাঁর নগণ্যতম অংশও প্রতিফলিত হয় না।’...

লালফৌজ বিশ্ববিদ্যালয়

চীনে জাপানি আগ্রাসনবিরোধী মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যথাযথ নীতি কৌশলই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ক্রমাগত শক্তিবৃদ্ধি, জনভিত্তি সম্প্রসারণ এবং চিয়াং বাহিনীর নেতৃত্বে জোতদার সামন্তপ্রভু সমরপ্রভুদের নতুন নতুন আক্রমণ পরাস্ত করতে সক্ষম করেছে। ১৯২৭ সাল থেকে চিয়াং বাহিনী কমিউনিস্ট পার্টিকে ধ্বংস করার প্রতিজ্ঞায় ব্রিটিশ-মার্কিন-জাপানের সমর্থন নিয়ে, দেশী বৃহৎ মালিক-জোতদারদের সহযোগী বানিয়ে একের পর এক আক্রমণ পরিচালনা করেছে। অসংখ্য মানুষ হতাহত হয়েছে। বহু অঞ্চল দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে। লালফৌজ অনেকবারই পশ্চাদপসরণ করেছে ঠিকই, কিন্তু পার্টির নেতৃত্বেমুক্ত সোভিয়েত অঞ্চলগঠিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকায়।

পার্টি একদিকে যুদ্ধ করেছে, অন্যদিকে চিয়াং কাই শেকসহ সবার প্রতি জাপানবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যফ্রন্ট গড়ার আহ্বান অব্যাহত রেখেছে। জাপানি আগ্রাসনের মুখে ঐক্যফ্রন্ট না করে কমিউনিস্টদের ধ্বংস করার চিয়াং লাইন জনগণ গ্রহণ করেনি বলেই নতুন নতুন মুক্ত অঞ্চল গঠিত হয়েছে। যারা চীনের স্বার্থে জাপান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, সেই কমিউনিস্টদের ধ্বংস করার নীতি এমনকি চিয়াং বাহিনীর কাছেও গ্রহণযোগ্য হয়নি। যে কারণে, আগেই বলেছি, সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন সময় সরকারি পক্ষ ত্যাগ করে লালফৌজে যোগদান করেছে। রকম অনেকে পরে পার্টির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নেয়ার মতো যোগ্যও হয়ে উঠেছেন। চিয়াং বাহিনীর আক্রমণ মোকাবেলার সময় পার্টি ধ্বংস হয়নি বরং তার বিকাশ দ্রুততর হয়েছে। ১৯২৭ থেকে ১৯৩৬ সময়কালে পার্টির সদস্যপদ ৪০ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ লাখ।

মুক্তাঞ্চলে বছরের পর বছর ধরে বস্তুত নতুন রাষ্ট্র, সামাজিক সম্পর্ক, অর্থনীতি, সমরনীতি, ভূমি ব্যবস্থা, আবাসন, প্রশাসনিক কাঠামো ইত্যাদি দাঁড় করানো হয়েছে। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের আগেই তাই বহু অঞ্চলে মানুষ নতুন সমাজকে চিহ্নিত করতে পেরেছে। অন্যান্য অঞ্চলের নিপীড়িত নারী-পুরুষকে তা আরো বেশি করে লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করেছে। রকম এক অঞ্চলে ভূমি ব্যবস্থা পরিবর্তনের অসাধারণ প্রামাণ্য দলিল উইলিয়াম হিনটনের ফানশেন বইটি।

এডগার স্নো তার বইতে উল্লেখ করেছেন মুক্তাঞ্চলের এক ভিন্ন রকমের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। এর নামলালফৌজ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ২৮ বছরের আর্মি কমান্ডার লিন পিয়াও, যার সম্পর্কে জনশ্রুতি ছিল যে তিনি কখনো কোনো যুদ্ধে পরাজিত হননি। আর শিক্ষার্থীদের বয়স ছিল গড়ে ২৭, যদিও অনেকের যুদ্ধ অভিজ্ঞতা কয়েক বছরের। তাদের প্রায় সবারই মাথার ওপর লাখ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা।

এডগার স্নো বলেন, সম্ভবত এটি বিশ্বের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে কাগজের অভাবে ব্যবহার করা হয় শত্রুপক্ষের লিফলেটের উল্টোপিঠের সাদা অংশ, ক্লাস হয় বোমা নিরোধক গুহাসহ নানা উন্মুক্ত স্থানে, চেয়ার-টেবিল হলো ইট আর পাথর, ব্ল্যাকবোর্ড হলো মাটি আর পাথরের দেয়াল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা ছিল, ‘যারা জাপান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং জাতীয় বিপ্লবী সংগ্রামে নিজেদের নিয়োজিত করতে আগ্রহী শ্রেণী নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই এর জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন।বয়সসীমা ১৬ থেকে ২৮। লালফৌজের সব সদস্যের কখনো না কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠগ্রহণ বাধ্যতামূলক। পাঠ্যসূচির মধ্যে ছিল: রাষ্ট্র, চীন বিপ্লবের সমস্যা, রাজনৈতিক অর্থনীতি, পার্টি গঠন, প্রজাতন্ত্রের কৌশলগত সমস্যা, লেনিনবাদ গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক ভিত্তি, জাপানের রাজনৈতিক সামাজিক শক্তি। এছাড়া সামরিক বিষয়ের মধ্যে জাপানবিরোধী জনযুদ্ধের নানা নীতি কৌশলের বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসব মুক্ত অঞ্চলে আরো ছিল রেড থিয়েটার, শিশু থিয়েটার। গ্রামে গ্রামে মুক্তমঞ্চ করে গ্রামের মানুষদের নিয়েই পরিবেশিত হতো নাটক-গান।

জাপানি আগ্রাসন বিস্তার, সে সঙ্গে দখল লুণ্ঠন নির্যাতন বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে লালফৌজই হয়ে দাঁড়ায় তার বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধের একমাত্র অবলম্বন। বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত চিয়াং কাই শেক সরকার কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সমঝোতায় আসতে সম্মত হয়। ১৯৩৬ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত বা বিপ্লবী সরকারের রাজধানী স্থানান্তর করা হয় ইয়েনানে। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত চীন-জাপান দ্বিতীয় পর্বের যুদ্ধ সংঘটিত হয় কমিউনিস্ট পার্টি কুওমিনটাংয়ের ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বেই। ঐক্য গড়ে তোলার জন্য কমিউনিস্ট পার্টি অনেক ছাড়ও দেয়।শ্রমিক-কৃষকের লালফৌজনাম বদলে সরকারি সেনাবাহিনীর শাখা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, মুক্তাঞ্চলের নামচীন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রবদল করেবিশেষ অঞ্চলরাখা হয়। তবে নাম যা- করা হোক, লালফৌজের অংশ এবং মুক্তাঞ্চল পুরোপুরি পার্টির নিয়ন্ত্রণেই ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান-জার্মানি অক্ষ সবদিক থেকে পর্যুদস্ত হলে চীনেও তার আধিপত্যের অবসান ঘটে। এরপর আবারো কমিউনিস্ট পার্টি কুওমিনটাংয়ের যুদ্ধ শুরু হয়। এটি হলো তৃতীয় পর্বের এবং শেষ যুদ্ধ (১৯৪৬-১৯৪৯) [চলবে]

 

আনু মুহাম্মদ: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন