চাকরিচ্যুত কর্মীদের ফেরানোর নির্দেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুনির্দিষ্ট প্রমাণিত অভিযোগ না থাকলে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই করা যাবে না। একই সঙ্গে গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সুনির্দিষ্ট প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও চাকরিচ্যুত হয়েছেন কিংবা চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের (আবেদনপ্রাপ্তি সাপেক্ষে) বিধি অনুযায়ী চাকরিতে বহাল করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি নীতি বিভাগ থেকে -সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

২০১৫ সালে ব্যাংকের কর্মীদের চাকরির সুরক্ষা বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই প্রজ্ঞাপনে ব্যাংক কর্তৃক ইচ্ছামাফিক ঢালাওভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই রদ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। যদিও গত বছর দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ব্যয় কমানোর অজুহাতে দেশের বেসরকারি অনেক ব্যাংকে কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়।

বিষয়ে গতকাল জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সম্প্রতি কিছুসংখ্যক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সুনির্দিষ্ট প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও কভিডকালীন শুধু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করা বা অদক্ষতার অজুহাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্মীদের চাকরি থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনকি পদত্যাগ করার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পরিপন্থী।

সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনার কারণে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতি থেকে দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে বিপুল অংকের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, যা তফসিলি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নসহ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরবচ্ছিন্নভাবে সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ব্যাংকিং সেবা দিতে গিয়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী কভিড-১৯- আক্রান্ত হয়েছেন এবং অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন।

করোনার কারণে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা হলে ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হবে। কর্মীদের মনোবল কর্মস্পৃহা কমবে। এতে ভবিষ্যতে মেধাবী অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা ব্যাংকে যোগদানে অনীহা প্রকাশ করবেন, যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংক খাতের জন্য ক্ষতিকর হবে।

চলমান মহামারীর সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যাংকের কর্মীদের কর্মস্পৃহা অটুট রাখার স্বার্থে সুনির্দিষ্টভাবে চারটি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনায় বলা হয়, সুুনির্দিষ্ট প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত না করা; করোনাকালে শুধু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা বা অদক্ষতার কারণ প্রদর্শন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত অথবা পদত্যাগ করতে বাধ্য না করা; ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সুনির্দিষ্ট প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও চাকরিচ্যুত হয়েছেন কিংবা চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের (আবেদনপ্রাপ্তি সাপেক্ষে) বিধি অনুযায়ী চাকরিতে বহাল করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

এছাড়া ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে কিংবা যারা চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন, তাদের তথ্য ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে বলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন