রাজবাড়ীতে পদ্মায় চায়না দুয়ারী জালের ফাঁদ

নির্বিচারে নিধন হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির পোনা মাছ

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী

রাজবাড়ীর পদ্মায় চায়না দুয়ারী জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন জেলেরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থানে চায়না দুয়ারী নামের বিশেষ ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করে নির্বিচারে মাছ শিকার করছেন স্থানীয় জেলেরা। খুব সহজে বেশি মাছ ধরার এই ফাঁদ ব্যবহারে ভবিষ্যতে দেশী প্রজাতির মাছ অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, মাছের প্রজনন মৌসুমে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের পর এবার ভয়ংকর চায়না দুয়ারী নামক ফাঁদে দেশীয় প্রজাতির সব মাছ ধরা পড়ছে। সহজেই সব ধরনের মাছ ধরার আশায় পদ্মা নদীজুড়ে জেলেরা অহরহ ব্যবহার করতে শুরু করেছেন জাল।

ধরনের ক্ষতিকর ফাঁদ ব্যবহার বন্ধে মৎস্য বিভাগের সুনির্দিষ্ট কোনো আইন না থাকায় সংশ্লিষ্টরা অভিযান চালিয়েও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। পদ্মায় থাকা মিঠাপানির সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ সূক্ষ্ম জালের ফাঁদে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে নদীর পানি বৃদ্ধি, হ্রাস মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা চিংড়ি, পুঁটি, টেংরা, কৈ, শিং, মাগুর, তেলাপিয়া, বেলে, বোয়াল, শোল, টাকিসহ দেশী প্রজাতির সব মাছ চায়না দুয়ারী জালে নিধন হচ্ছে। এতে ক্রমেই মাছশূন্য হয়ে পড়ছে নদ-নদী, খাল-বিল ছোট নদীগুলো।

চায়না দুয়ারী জাল সাধারণত এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতা এবং ৬০ থেকে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ক্ষুদ্র ফাঁসবিশিষ্ট ঢলুক আকৃতির হয়ে থাকে। লোহার চারটি রড রডের রিং দিয়ে খোঁপ খোঁপ আকারে বক্স তৈরি করে চারপাশ সূক্ষ্ম জাল দিয়ে ঘিরে তৈরি করা হয়। এই ফাঁদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো নদীর তলদেশে লম্বালম্বিভাবে লেগে থাকে। ফলে কোনো ধরনের খাদ্যদ্রব্য ছাড়াই দুদিক থেকেই মাছ ঢুকে আটকা পড়ে। তবে কেউ কেউ অতিরিক্ত মাছের আশায় ঘ্রাণ জাতীয় মাছের খাবার দিয়ে থাকে। একটি চায়না দুয়ারীর দাম (মানভেদে) -১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রথম দিকে ফাঁদ জেলেদের কাছে খুব একটা পরিচিত না থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অধিক মাছ শিকারের আশায় জেলেদের কাছে খুব অল্প সময়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। শুরুতে ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, মাগুরা, পাবনায় ফাঁদ তৈরি হলেও অতিরিক্ত চাহিদার কারণে বর্তমানে নদীবেষ্টিত সব এলাকায় জাল তৈরি হচ্ছে।

স্থানীয় জেলেরা জানান, চায়না দুয়ারীতে সব ধরনের মাছ ছেঁকে উঠে, সহজেই মাছ ধরা যায় এবং দাম কম হওয়ায় বেশির ভাগ জেলে বর্তমানে দুয়ারী ব্যবহার করছেন। এছাড়া অনেক সৌখিন মৌসুমী মৎস্য শিকারিরা মাছ ধরতে নেমেছেন। ফলে যারা পুরনো কৌশলে মাছ ধরতেন, তাদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে চায়না দুয়ারী কিনছেন।

পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, বিকেল হলেই ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে এই চায়না দুয়ারী নদীতে ফেলা হয়। সারারাত নদীতে রাখার পর সকালে তুলে আনা হয় পাড়ে। সময় জালে ধরা পড়ে দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় সব মাছ, নদীতে থাকা জলজ প্রাণী এমনকি ছেঁকে ওঠে মাছের ডিমও। জাল দিয়ে মাছ ধরলে কিছুদিন পর হয়তো নদীতে আর কোনো মাছ পাওয়াই কঠিন হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকারি জেলেরা বলেন, চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ ধরা ঠিক না, তার পরও জীবিকার তাগিদে মাছ ধরি।

গোয়ালন্দ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রেজাউল শরীফ জানান, দেশী মাছ ধ্বংস করতে মাছ শিকারের মরণ ফাঁদ চায়না দুয়ারী নতুন সংযোজন। এই ফাঁদ বন্ধে মৎস্য আইনে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। তাই চায়না দুয়ারী বাজারে বিক্রি বন্ধে কারেন্ট জালের মতো কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। তবে নদীতে ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাছ ধ্বংসের ধারা প্রয়োগে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। আমরা সেভাবেই অভিযান পরিচালনা করছি। এছাড়া প্রাথমিকভাবে সব ধরনের নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে প্রচারণা চলমান রয়েছে। চায়না দুয়ারীসহ মাছের জন্য ক্ষতিকর সব জাল যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে এবং আরো জোরাল করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন