মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি হয়ে উঠছে ইনস্টাগ্রাম

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্রথমে কেউ প্লাটফর্মটির মাধ্যমে সাহায্য পেয়ে থাকলেও পরবর্তী সময়ে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন ছবি: ইম্প্যাক্ট প্লাস

টিনএজারদের ওপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব নিয়ে অভ্যন্তরীণ গবেষণার তথ্য গোপন রাখায় ফেসবুক মালিকানাধীন ইমেজ শেয়ারিং সাইট ইনস্টাগ্রাম নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। খবর বিবিসি।

সম্প্রতি ইমেজ শেয়ারিং সাইটটি টিনএজার ব্যবহারকারীদের ওপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব নিয়ে এক অভ্যন্তরীণ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে বলে জানা যায়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ওই গবেষণায় হতাশা উদ্বেগজনক অবস্থা তৈরির জন্য টিনএজাররা ইনস্টাগ্রামকেই দোষারোপ করেছে বলে জানা গেছে।

ক্যাম্পেইন গ্রুপ এমপিরা মত প্রকাশ করেন, এটা স্পষ্টকোম্পানি কেবল মুনাফাকেই প্রাধান্য দিয়েছে। ইনস্টাগ্রাম জানায়, গবেষণা পরিচালনার উদ্দেশ্য হলো প্লাটফর্মটিতে জটিল কঠিন সমস্যাগুলো বোঝা সমাধানের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা উদ্ঘাটন করা।

ওয়াল স্ট্রিটের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালের এক চিত্রে দেখা যায়, টিনএজাররা তাদের উদ্বেগ হতাশা বাড়ানোর জন্য ইনস্টাগ্রামকে দায়ী করে। ২০২০ সালের গবেষণায় দেখা যায়, জরিপে অংশ নেয়া ৩২ শতাংশ তরুণী জানায়, তারা যখন নিজেদের নিয়ে হতাশায় ভোগেন, ইনস্টাগ্রাম সেই হতাশাকে আরো বাড়িয়ে তোলে। যুক্তরাজ্য থেকে অংশ নেয়া ১৩ শতাংশ তরুণী এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে অংশ নেয়া শতাংশ তরুণী জানায়, তারা ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে আত্মহত্যার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ফোকাস গ্রুপ, অনলাইন সার্ভে এবং ডায়েরি স্টাডিজের মাধ্যমে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। ২০২১ সালে ইনস্টাগ্রাম কয়েক হাজার ব্যবহারকারীর ওপর বৃহৎ গবেষণা পরিচালনা করে, যাতে নিজস্ব তথ্যের সঙ্গে ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া সংযুক্ত করা হয়। ব্যবহারকারীরা দিনের কতটা সময় ইনস্টাগ্রামে ব্যয় করেন এবং তারা প্লাটফর্মটিতে ঠিক কী কী জিনিস দেখে থাকেন তা বিশ্লেষণ করে তথ্য সংগ্রহ করেছে সাইটটি।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনের উত্তরে একটি ব্লগ পোস্টে গবেষণা কার্যক্রমের যৌক্তিকতা নিয়ে মত প্রকাশ করে ইনস্টাগ্রাম কর্তৃপক্ষ। সেখানে তারা উল্লেখ করে, প্লাটফর্মটিকে সবার জন্য উপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে গবেষণা করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ ব্যবহারকারীর ওপর নির্ভর করে যে তিনি ঠিক কী খুঁজে পেতে চান। কেউ একজন প্রথমে প্লাটফর্মটির মাধ্যমে সাহায্য পেয়ে থাকলেও পরবর্তী সময়ে তিনি সেখান থেকে ক্ষতিকর কিছুর সম্মুখীন হতে পারেন। আমরা গবেষণার আলোকে যেকোনো ধরনের সাইবার বুলিং, আত্মহত্যা আত্মঘাতী পরিকল্পনা এবং খাদ্যজনিত হতাশাকে প্রতিরোধ করার ফিচার সংযুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি।

ইনস্টাগ্রাম জানায়, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল শুধু নেতিবাচক দিকগুলোর প্রতি নিজেদের নিবদ্ধ করেছে। কিন্তু বাস্তবতা আরো জটিল। আমরা গবেষণার আলোকে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য গ্রহণ করব। যাতে লোকজন নিজেদের যেকোনো ধরনের বুলিং থেকে রক্ষা করতে পারে। আমরা ব্যবহারকারীদের জন্য লাইক গণনা করার অপশন গোপন করার ফিচার সংযুক্ত করতে যাচ্ছি, একই সঙ্গে যেসব ব্যবহারকারী হতাশায় ভুগছেন তাদের স্থানীয় সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সহায়তা দেয়া অব্যাহত রাখব। পাশাপাশি ভবিষ্যতে ধরনের গবেষণার ক্ষেত্রে আরো স্বচ্ছতা অবলম্বন করার প্রতিশ্রুতি দেয় ইনস্টাগ্রাম।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলিটি টু চিলড্রেনের অনলাইন চাইল্ড সেফটি বিভাগের প্রধান অ্যান্ডি ব্রুস বলেন, আশঙ্কার বিষয় হলো তারা এসব প্রমাণের ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরিবর্তে নিশ্চুপভাবে নিজ জায়গায় অনড় রয়েছে।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, প্লাটফর্মটিকে আরো নিরাপদ করে গড়ে তোলার বিপরীতে তারা গবেষক, নিয়ন্ত্রক সরকারকে বিভিন্নভাবে বাধা দিচ্ছে। সাইটটি গণসংযোগ লবিংয়ের মাধ্যমে ঠিক বাস্তবতার উল্টোটা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন