২০২৫ সাল নাগাদ

মহামারীতে দরিদ্র দেশগুলো ১২ লাখ কোটি ডলার হারাবে

বণিক বার্তা ডেস্ক

দক্ষিণ আফ্রিকার একটি হাসপাতালে টিকা নেয়ার অপেক্ষায় থাকা মানুষ ছবি: এপি

কভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে পুনরুদ্ধার হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। ব্যাপকভাবে কভিড-১৯ টিকাদানের পর শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের পথে উন্নত অর্থনীতিগুলো। দেশগুলোয় শুরু হয়েছে প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তবে পিছিয়ে আছে দরিদ্র দেশগুলো। চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে পাওয়া যাচ্ছে না টিকার চালান। ফলে দেশগুলো এখনো কভিডের প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে দেখা দিয়েছে ধীরগতি। পরিস্থিতিতে মহামারীর প্রভাবে দরিদ্র দেশগুলো ২০২৫ সাল নাগাদ ১২ লাখ কোটি ডলার হারাবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

বার্ষিক বাণিজ্য উন্নয়নবিষয়ক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের বাণিজ্য উন্নয়নবিষয়ক সম্মেলন (আঙ্কটাড) বলেছে, নিম্ন আয়ের দেশগুলো ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের তুলনায় কভিড-১৯ মহামারীতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহামারীটি দেশগুলোর ঋণ পাবলিক ফাইন্যান্সের ওপর চাপ বাড়িয়েছে।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক শাখা বলেছে, স্বল্প আয়ের উন্নয়নশীল দেশগুলো চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে কভিডের টিকা পাচ্ছে না। ফলে দেশগুলো ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছে। যদিও পশ্চিমা নেতারা সংকট আরো ভালোভাবে মোকাবেলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার পরও বিশ্ব অর্থনীতি শক্তিশালীভাবেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

আঙ্কটাড জানিয়েছে, ২০২০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোর দেয়া বিপুল পরিমাণ প্রণোদনা বিশ্ব অর্থনীতিকে শক্তিশালীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে। এক্ষেত্রে উন্নত অর্থনীতিগুলোতে বিস্তৃত টিকাদান কার্যক্রম বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে।

সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতি দশমিক শতাংশ বাড়বে। এটি গত পাঁচ দশকের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম প্রবৃদ্ধি। যেখানে ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনীতি দশমিক শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল।

জাতিসংঘের সংস্থাটি সতর্ক করেছে, কভিডের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে। এরই মধ্যে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জরুরি সহায়তাও কমানো হয়েছে। ২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনীতি দশমিক শতাংশ এবং ২০২৩ সাল থেকে দশমিক শতাংশ গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উৎপাদন ২০১৬-১৯ প্রবণতায় ফিরে আসবে।

উন্নত অর্থনীতির নীতিনির্ধারকরা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কভিডের ধাক্কা কিংবা দৃঢ় প্রভাব সম্পর্কে এখনো প্রত্যাশিত সাড়া দিতে পারেনি বলে সতর্ক করেছে জেনেভাভিত্তিক সংস্থাটি। আঙ্কটাড জানিয়েছে, দরিদ্র দেশগুলোর ঋণমুক্তির জন্য ধনী দেশগুলোর মধ্যে আরো সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। কিছু ক্ষেত্রে ঋণমুক্তি এতটাই প্রয়োজন যে, পরিবর্তে উন্নয়ন অগ্রগতির ক্ষেত্রে দেশগুলো এক দশক পেছনে চলে যাবে।

কভিড-১৯ টিকার মেধাস্বত্ব মওকুফ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে উন্নত দেশগুলোর অনীহা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, বিলম্বিত টিকাদানের ক্রমবর্ধমান ব্যয় ২০২৫ সালের মধ্যে লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার হতে পারে। আর ব্যয়ের পুরোটাই বহন করবে উন্নয়নশীল বিশ্ব। এছাড়া সরকারি সহায়তা কমিয়ে আনা, দুর্বল শ্রমবাজারের নিয়ম এবং অসম বাণিজ্য বিনিয়োগ চুক্তি আন্তর্জাতিক উন্নয়নকে ঝুঁকিতে ফেলবে।

আঙ্কটাডের বিশ্বায়ন উন্নয়ন কৌশল বিভাগের পরিচালক রিচার্ড কোজুল-রাইট বলেন, একদিকে উন্নত অর্থনীতিগুলোর আকার আরো বড় হচ্ছে, অন্যদিকে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো ঋণে জর্জরিত হচ্ছে। ৪০ বছর ধরে আমরা প্রবণতা দেখছি। শুধু তা- নয়, বিশ্বায়নের পৃথিবীতে অসমতা একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন