কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই বন্ধ ছিল আকাশপথে যোগাযোগ। ফলে ভয়াবহ মন্দার মুখোমুখি হয় উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থাগুলো। ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে কর্মী ছাঁটাই, বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোসহ নানা ধরনের কার্যক্রম হাতে নিতে হয়। কভিড প্রতিরোধী টিকার প্রয়োগে সংক্রমণ কমতে থাকায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে শুরু করে। তবে আকাশপথ ভ্রমণ মহামারীর আগের অবস্থায় পৌঁছতে আরো দুই-আড়াই বছর লাগতে পারে বলে মনে করছে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং।
প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যিক বিপণন শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যারেন হাস্ট বলেন, ২০১৯ সালে আকাশপথে ভ্রমণে যে রমরমা অবস্থা ছিল, সেটি আবারো ফিরে পেতে ২০২৩ সালের শেষ বা ২০২৪-এর শুরু নাগাদ সময় লেগে যাবে। অভ্যন্তরীণ আকাশপথে যোগাযোগ এ পুনরুদ্ধারের শীর্ষে থাকবে। বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘ দূরত্বের পথে পুনরুদ্ধারে কিছুটা সময় লাগবে।
গত বছর মহামারী শুরু হলে আকাশপথ ভ্রমণ শিল্পে যাত্রীর সংখ্যা ৬০ শতাংশ কমে যায়। ফলে এ খাতের লোকসানের মাত্রা দাঁড়ায় ১২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারেরও বেশি। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) বলছে, গত বছরটি ছিল এ খাতের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ বছর।
বোয়িং বলছে, বৈশ্বিক অর্থনীতির উন্নতিই এ মন্দা থেকে খাতটিকে উদ্ধার করতে পারে। আইএইচএস ইকোনমিকসের তথ্য ব্যবহার করে সংস্থাটি জানিয়েছে, বিশ্বের অর্থনীতি দ্রুত এগোচ্ছে। নভেল করোনাভাইরাস না থাকলেও অর্থনীতি যেমন হতো, এখনো সে পথেই যাচ্ছে।
মহামারীর কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে বিশ্ব। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রত্যাশা করছে যে, চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি বাড়বে ৬ শতাংশ।
তবে বিশ্বের সব দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা না উঠে গেলে এ পুনরুদ্ধারে সময় লাগবে। কারণ এটি অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ড্যারেন হাস্ট বলেন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে ব্যবসা চালু হওয়া, পর্যটন খাতের বিকাশ ও বৈশ্বিক যোগাযোগ জড়িত। ফলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া না হলে অর্থনীতি আগের গতিতে ফিরতে সময় লাগবে।
বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য আকাশপথে যোগাযোগ খাতটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বেসামরিক উড়োজাহাজ চলাচল সংস্থার প্রাক্কলনে বলা হয়েছে, মহামারীর আগে খাতটি বিশ্ব অর্থনীতিতে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ ভূমিকা রাখত। বিশ্বজুড়ে এ খাতে জড়িত কর্মীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৬ কোটি ৫৫ লাখ।
আগামী ২০ বছরে বিশ্বে কী পরিমাণ উড়োজাহাজের প্রয়োজন হবে তার একটি হিসাব কষেছে বোয়িং। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০৪০ সাল নাগাদ গোটা বিশ্বে ৪৩ হাজার ৬১০টি নতুন বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের প্রয়োজন হবে। সব মিলিয়ে এর মোট দাম হবে ৭ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার। ধারণা করা হচ্ছে, উড়োজাহাজ প্রস্তুত খাতের যে ব্যবসা সেটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের দিকে সরে যেতে পারে। আবার মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ায় বাড়বে উড়োজাহাজ কেনার হার। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের জেটগুলোকে সর্বোচ্চ নিরাপদ ও প্রযুক্তিসম্পন্ন করতে কাজ করছে বোয়িং। পাশাপাশি অন্য উড়োজাহাজ পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলোও চেষ্টা করছে কম কার্বন নিঃসরণ ও পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকর জেটের ব্যবহার শুরু করতে। সব মিলিয়ে এ খাতও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।