বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ টিকার সরবরাহ বাড়তে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এক্ষেত্রে আফ্রিকা ও স্বল্প আয়ের দেশগুলোয় আরো ২০ কোটি ডোজ কভিড টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২৭ দেশের এ জোট।
এপির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন নতুন এ অনুদানের ঘোষণা দেন। আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ এ প্রতিশ্রুতির সব টিকা সরবরাহ করা হবে জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্বজুড়ে চলা কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকাদান কার্যক্রমে ব্যাপক অসমতা দেখা দিয়েছে। ধনী দেশগুলো যেখানে নাগরিকদের তৃতীয় কিংবা বুস্টার ডোজ দেয়ার কথা ভাবছে, সেখানে বিশ্বের বেশির ভাগ দরিদ্র দেশ তাদের নাগরিকদের কয়েক শতাংশকেই এখনো টিকার আওতায় আনতে পারেনি।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দেয়া বক্তৃতায় ভন ডার লিয়েন বলেন, আমাদের প্রথম ও সবচেয়ে জরুরি অগ্রাধিকার হচ্ছে বিশ্বজুড়ে টিকাদান কার্যক্রম দ্রুত করা। এরই অংশ হিসেবে আফ্রিকায় টিকা উৎপাদন বাড়াতে ইইউ ১০০ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করছে।
আফ্রিকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, মহাদেশের পুরো জনসংখ্যার ৬০ শতাংশকে টিকা দেয়ার জন্য তাদের মাত্র ৮০ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন। আফ্রিকা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে, গত সপ্তাহ পর্যন্ত ১৪ কোটি ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে। ১৩০ কোটি মানুষের এ মহাদেশের মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশকে পূর্ণ টিকা দেয়া হয়েছে। এমন পিছিয়ে থাকার পেছনে ধনী দেশগুলোর টিকা মজুদ, রফতানি নিয়ন্ত্রণ ও বুস্টার ডোজ প্রয়োগকে দায়ী করেছে সিডিসি।
ভন ডার লিয়েনের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ ইউরোপের পরিচালক জাগোডা মিউনিচ বলেন, ইইউর উচিত কভিড টিকা ও চিকিৎসা সবার জন্য উন্মুক্ত করা। আমরা টিকাদান কার্যক্রমে বর্ণবাদী আচরণ দেখছি। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মানুষ জলবায়ু সংকটের জন্য খুব কম দায়ী হলেও তারাই সবচেয়ে কম সুরক্ষিত। এখন তারা মহামারীতেও অরক্ষিত রয়ে গেছে। অসমতার এ চিত্র ইউরোপীয় মূল্যবোধ ও সংহতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ভন ডার লিয়েন বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রয়োগ করা টিকার ১ শতাংশেরও কম নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে প্রয়োগ করা হলে, সেটি অবিচার চিত্র ফুটিয়ে তোলে এবং জরুরি সহায়তার বিষয়টিকে ত্বরান্বিত করে।
যদিও ইইউ কভিডের টিকা রফতানি উন্মুক্ত রেখেছিল। এমনকি যখন নিজস্ব জনসংখ্যার জন্য ব্লকটি টিকা পাওয়ার লড়াই করছিল, তখন বিশ্বকে টিকা সরবরাহ করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, আসুন আমরা নিশ্চিত করি, টিকা না দেয়া মানুষের মধ্যে যেন মহামারীটি পুনরায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে। অসতর্কতার কারণে ইইউর টিকাদান কার্যক্রম শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পেছনে পড়ে যাওয়ার বিষয়টিও স্বীকার করেন ভন ডার লিয়েন।