চারু মজুমদার ও জীবনানন্দ দাশের স্ত্রীর চরিত্রে জয়া

ফিচার প্রতিবেদক

জয়া আহসান

সত্তরের দশকে ভারতের এক বিরাট অংশ কেঁপে উঠেছিল সশস্ত্র মাওবাদী আন্দোলনে। দার্জিলিংয়ের নকশালবাড়িতে ১৯৬৭ সালে সূচনা হয়েছিল সে আন্দোলনের। আর তাই মাওপন্থী বাম আন্দোলন নকশাল আন্দোলন নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিত হয়ে ওঠে। রাজনীতির ময়দানে তো বটেই, বাংলা ভাষার সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও গভীর আর স্থায়ী প্রভাব রেখে যায় আন্দোলন। নেতা চারু মজুমদারের গ্রেফতার পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর পর থেকে ধীরে ধীরে স্তিমিত হতে থাকে প্রবল আলোড়ন তোলা সশস্ত্র আন্দোলন। পশ্চিমবঙ্গের তরুণসমাজকে আমূল কাঁপিয়ে দেয়া আন্দোলন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বহু কবিতা, গল্প, উপন্যাস, চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সে ধারবাহিকতায় এবার বিনোদন দুনিয়ার নতুন ফেনোমেনা ওয়েব সিরিজে ফুটে উঠবে নকশাল আন্দোলন। আর কাজটি করছেন পরিচালক সায়ন্তন মুখার্জি। সিরিজে চারু মজুমদারের ভূমিকায় অভিনয় করবেন  নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী আর তার স্ত্রী লীলা মজুমদারের চরিত্রে দেখা যাবে বাংলাদেশের জয়া আহসানকে। সম্প্রতি আনন্দবাজার অনলাইনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বয়ং সায়ন্তন মুখার্জি।

সে সময়ের পুলিশ কর্মকর্তা রুণু গুহ নিয়োগীর লেখা সাদা আমি কালো আমি উপন্যাস অবলম্বনে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি তিনটি ভাষায় নির্মিত হবে সিরিজ। সায়ন্তনের কথায়, এতে চারু মজুমদার হবেন নওয়াজ (নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী) জয়া (জয়া আহসান) তার স্ত্রী লীলা মজুমদার। ২০২২ সালের দুর্গা পূজার আগে তিনি ক্যামেরাবন্দি করবেন তার প্রথম রাজনৈতিক ওয়েব সিরিজ।

সায়ন্তন মুখার্জির কথায়, পুলিশ অফিসারের চোখ দিয়েই দেখানো হবে গোটা সিরিজ। রুণু গুহ নিয়োগীর চরিত্রে দেখা যাবে রণিত রায়কে। এছাড়া প্রাথমিক কথা হয়েছে সব্যসাচী চক্রবর্তীর সঙ্গে। তাকে দেখা যাবে তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের ভূমিকায়। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে ভাবা হয়েছে চারু মজুদারের অন্যতম সঙ্গী কানু সান্যালের চরিত্রে। এছাড়া জ্যোতি বসুর চরিত্রের জন্য প্রাথমিকভাবে বাছা হয়েছে দুই বলিউড অভিনেতার নাম। এরা হলেন পরেশ রাওয়াল বোমান ইরানি। সায়ন্তনের প্রথম পছন্দ পরেশ রাওয়াল। জানা যাচ্ছে চলতি বছরের দুর্গা পূজার পরে ওয়েব সিরিজের আরো তারকার নাম সামনে আনবেন সায়ন্তন। দেড় বছর ধরে চিত্রনাট্যের খসড়া তৈরি করেছেন পরিচালক। কাজে তাকে সাহায্য করেছেন অন্ধাধুন ছবির লেখক অরিজিৎ বিশ্বাস।

হিন্দি ভাষায় রাজনৈতিক ওয়েব সিরিজ হিসেবে সেক্রেড গেমস মির্জাপুর ভারতসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এবার সে পথে বাংলা ওয়েব সিরিজ। ভারতীয় গণমাধ্যমকে সায়ন্তন মুখার্জি বলেছেন, মুহূর্তে ভারতীয় সিরিজে উত্তর প্রদেশের গল্প রয়েছে, মহারাষ্ট্রের রয়েছে, রয়েছে বিহারের কথাও; যা সহজেই আন্তর্জাতিক ওটিটি প্লাটফর্মের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে। কিন্তু বাংলার ইতিহাসের গল্প কেউ বলছেন না। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলার সামাজিক রাজনৈতিক আন্দোলনের একটা বড় জায়গা আছে। গত ১৫-২০ বছরে কোনো মাধ্যমের চিত্রনাট্যেই তার কোনো প্রতিফলন নেই। বামপন্থী আন্দোলন সারা বিশ্বে সাড়া ফেলেছিল। নকশাল আন্দোলন তার অন্যতম ল্যান্ডমার্ক, যা শুরু হয়েছিল বাংলা থেকেই। তাই আন্দোলনের কাহিনীই তুলে ধরতে চেয়েছি ভারতীয় আন্তর্জাতিক দর্শকের কাছে।

প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনটি সিজনে দেখানো হবে সিরিজ। প্রথম সিজনে থাকবে ১৯৪৭-১৯৭২ সাল। ১৯৭২-১৯৯০ পর্যন্ত উঠে আসবে দ্বিতীয় সিজন। শেষটায় থাকবে তার পরের সময় থেকে বর্তমান প্রেক্ষাপট। সিরিজে চারু মজুমদার ছাড়াও দেখা যাবে ভারতের সংশ্লিষ্ট ইতিহাসের বেশ কয়েকজন বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে। সায়ন্তনের ইচ্ছা কলকাতা, মুম্বাই, কেরালা, অন্ধ্র প্রদেশের পাশাপাশি চীন, রাশিয়ায়ও ছবির শুট করার।

সায়ন্তনের চমক অবশ্য এখানেই শেষ নয়। আরো জানা গেছে চলতি বছর দুর্গা পূজার পরেই মুক্তি পাবে তার ছবি ঝরা পালক। কবি জীবনানন্দ দাশের জীবন নিয়ে তৈরি ছবিতে কবির স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। ছবিতে তরুণ বয়সের কবির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রাহুল অরুণোদয় ব্যানার্জি। পরিণত কবির ভূমিকায় ব্রাত্য বসু।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন