ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ অভিযানের সময় মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। গতকাল বুধবার এ ব্যাপারে ঘোষণা দেয়া হয়।
নেদারল্যান্ডের হেগ শহর থেকে পরিচালিত আইসিসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তিসঙ্গত কারণেই এ তদন্ত করা হবে। নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড মূলত একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। এতে সুনির্দিষ্টভাবে আইনের ব্যত্যয় ঘটে। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট দুতার্তের নির্দেশে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অভিযানের সময় শিশুসহ হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
অবশ্য আইসিসির তদন্তের এ ঘোষণায় বিচলিত নন রদ্রিগো দুতার্তে। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদের ‘চড় মারার’ হুমকি দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার ম্যানিলা-ভিত্তিক রেডিও স্টেশন ডিজেডবিবিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্টের আইনি পরামর্শদাতা সালভাদর প্যানেলো বলেন, দুতার্তে প্রশাসন এই তদন্তে কোনো সহযোগীতা করবে না। এমনকি তদন্তকারীদের ফিলিপাইনে প্রবেশেরও অনুমতিও দেয়া হবে না।
গত জুনে অবসর গ্রহণের আগে ফিলিপাইনে মানবতাবিরোধী এ অপরাধ তদন্তের জন্য আবেদন করেন আইসিসির প্রাক্তন প্রসিকিউটর ফাতু বেনসৌদা। সে সময় তিনি বলেছিলেন, রাষ্ট্রীয় নেতা, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সরকারি আইন প্রয়োগকারী অভিযানের সময় হাজার হাজার সন্দেহভাজন মাদক ব্যবহারকারী এবং বেসামরিক লোকদের হত্যা করেছে। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত এবং সম্ভাব্য বিচার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পেয়েছেন তার উত্তরসূরী প্রসিকিউটর করিম খান।
ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের এই ক্যাম্পেইনের বিরুদ্ধে তদন্তের আদেশে সই করেছেন বিচারক পিটার কোভেস, রাইন অ্যাডালয়েড সোফি আলাপিনি-গ্যানসু এবং মারিয়া দেল সোকোরো ফ্লোরেস লায়রা। আইসিসির প্রি ট্রায়াল চেম্বার বলছে, মাদক চোরাচালান এবং আসক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে ফিলিপাইনে তথাকথিত মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ক্যাম্পোইনকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও এটিকে আইন প্রয়োগকারী অভিযান হিসেবে দেখা যায় না। হত্যাকাণ্ডগুলোও বৈধ নয়।
আদালত বলেছেন, ২০৪ জন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে পাওয়া সাক্ষ্যপ্রমাণ বিবেচনা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় নীতির বাইরে গিয়ে বেসামরিক লোকজনের ওপর বিভিন্ন পন্থায় ব্যাপক আক্রমণ হয়েছে। ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত বা বিচারের জন্য অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়ে যারা হত্যাকাণ্ডমূলক অপরাধ করেছেন, পুরষ্কার হিসেবে তাদের পদোন্নতি, নগদ অর্থ দেয়া হয়েছিল।