১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলবের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠনের ১১ নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) দেয়া চিঠি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাব। একই সঙ্গে ঘটনার পেছনে কোনো বিশেষ মহলের পরিকল্পনা অসৎ উদ্দেশ্য আছে কিনা, সে বিষয়ে তদন্তও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)

জানা গেছে, গত সপ্তাহে সরকারের একটি সংস্থার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোকে বিষয়ে একটি চিঠিতে ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংক হিসাবের তথ্য দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। ব্যাংকগুলোকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনাদের শাখায় ১১ সাংবাদিকের নামে কোনো ধরনের ব্যাংক হিসাব বর্তমানে বা আগে পরিচালিত হয়ে থাকলে সব হিসাবের যাবতীয় তথ্যের সফট কপি (যাবতীয় কাগজপত্রসহ হিসাবগুলোর তালিকা), হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি, প্রোফাইল ফরম, টিপি এবং অনুরূপ দলিল হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। ঘটনায় আলাদাভাবে গতকাল দুটি সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে।

সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের নির্বাচিত নেতাদের ব্যাংক হিসাব বিবরণী চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া চিঠিতে তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটি। গতকাল প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মাঈনুল আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে কথা জানানো হয়।

গতকাল ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় বিষয়টিতে বিস্ময় প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, প্রচলিত আইনে কোনো ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত হতেই পারে। কিন্তু শুধু একটি পেশার সব সংগঠনের নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের নামে ঢালাও সিদ্ধান্ত বিশেষ উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ঢালাও ব্যাংক হিসাব তলবে সাংবাদিক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে, এমনকি নজিরবিহীনভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে, যা কখনো কোনোকালে ঘটেনি। নির্বাচিত সাংবাদিক নেতাদের জনসমক্ষে হেয় সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাব সাংবাদিক সমাজকে হেয় প্রতিপন্নকারী সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল বৃহৎ ছয় সংগঠনের ১১ শীর্ষ নেতার ব্যাংক হিসাব তলবের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটি। গতকাল ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটি এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক মো. জাফর ইকবাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে কথা জানানো হয়।

ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটি মনে করে, কোনো ব্যক্তিবিশেষের ব্যক্তিগত দুর্নীতি বা অপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত হতে পারে। কিন্তু সাংবাদিকতা পেশার সব সংগঠনের নির্বাচিত শীর্ষ নেতাদের নামে ঢালাও সিদ্ধান্ত উদ্দেশ্যমূলক। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের সব সংগঠন প্রতিষ্ঠানের প্রতি অশ্রদ্ধা অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়েছে। সাংবাদিকতা পেশাকে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। বিষয়টি কিছুটা যুক্তিসংগত হতো যদি অন্যান্য পেশাজীবী সব সংগঠনের সব নির্বাচিত নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করা হতো। কিন্তু তা না করে শুধু সাংবাদিক নেতাদের নামে সিদ্ধান্ত সুস্থ স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকির শামিল। কোনো বিশেষ মহলের পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা, এর পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে কিনা, সে বিষয়ে তদন্ত খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। দুর্নীতিবাজ আমলা চক্র এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটি সন্দেহ পোষণ করছে।

উল্লেখ্য, ১১ জন সাংবাদিক নেতার মধ্যে রয়েছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আব্দুল কাদের গণি চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু। এছাড়া বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি মোল্লা জালাল ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালীন নোমানী সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন