ইভ্যালির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

অনিয়মের অভিযোগ ওঠা ইভ্যালি, -অরেঞ্জ, ধামাকাসহ ১০টি -কমার্স প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিতে অপারগতা জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে -কমার্স-সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি। তবে শুরুতে তারা কেবল ইভ্যালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বাকি নয়টি -কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গতকাল সচিবালয়ে কমিটির বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) কমিটির প্রধান হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের তথ্য জানান। তিনি একই সঙ্গে ডিজিটাল -কমার্স সেলেরও প্রধান। হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

হাফিজুর রহমান বলেন, সভায় ইভ্যালি, -অরেঞ্জ, ধামাকাসহ ১০টি -কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু এরই মধ্যে আইন অমান্য করেছে, সুতরাং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সরাসরি কোনো দায়িত্ব না নিয়ে বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রেফার করে দেয়া হবে। তারা যাতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে। এটা হলো কমিটির সুপারিশ বা সিদ্ধান্ত। এজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠানো হবে। অন্য সাতটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, কিউকুম, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিড ডটকম ডটবিডি আলেশা মার্ট।

মহাপরিচালক বলেন, আরো দু-একটির (-কমার্স প্রতিষ্ঠান) বিষয়ে ছোটখাটো সিদ্ধান্ত আছে। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সচিবের কাছে আমরা কমিটির সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করব। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে আমরা এক্ষেত্রে আরো কিছু করতে পারব কিনা। এর আগেও আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। এরই মধ্যে তারা কিছুটা কাজও করেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক একটা অনুরোধ করেছিল যে স্বাধীন তৃতীয় পক্ষ দিয়ে কোম্পানিগুলোর আয়-ব্যয়ের তথ্য যাচাই করা যায় কিনা। কিন্তু এটার একটা আইনগত সমস্যা রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজটা সরাসরি করতে পারবে কিনা তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। আমরা যদি আইনগত মতামত পাই, তবে তৃতীয় পক্ষের অডিটর দিয়ে অডিট করানো হবে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কিংবা মামলা লাগে। এক্ষেত্রে সে রকম কিছু হবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা করলে করবেন ভোক্তা কিংবা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে যে তথ্য পেয়েছি, ওখানে আমাদের একটা অসংগতি চোখে পড়েছে। আর সেটা হলো, ইভ্যালির দায় সম্পদের মধ্যে বড় যে পার্থক্য সেটা কোথায় গেছে? এছাড়া গ্রাহকের কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছে, বিনিময়ে সে পণ্য না দিয়ে গ্রাহককে প্রতারণা করেছে। মামলার ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়গুলো উঠে আসবে।

হাফিজুর রহমান আরো বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায়ও ডিজিটাল প্রতারণা আছে, সেখানেও এটা অপরাধ। ভোক্তা অধিকার আইনেও কিছু অপরাধ আছে। জায়গাগুলো চিহ্নিত করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাচ্ছি, আগেও জানিয়েছি। মিটিংয়ের রেফারেন্সে আবার জানানো হবে।

ইভ্যালি নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর এক বছর আগেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রাথমিক একটি তদন্ত করেছে জানিয়ে -কমার্স সেলের প্রধান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে কিছু অপরাধ হয়েছে বলে ধারণা করায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাতটি সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে। তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছু করেনি এমনটি বলা যাবে না। মহামারীর কারণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে দেরি হয়েছে। তবে এটা ঠিক, সে সময় যদি আরো কঠোর অবস্থানে যাওয়া যেত, তাহলে হয়তো এত ক্ষতি হতো না। কিন্তু আমরা তখন থেকেই কাজ শুরু করেছি।

ইভ্যালির গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া টাকা কোথায় গেছে, সেই বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন আমরা ধামাকার কাছে সে তথ্যটা চাচ্ছি। জানতে চাচ্ছি পরিস্থিতিটা কী, তাদের এক্সিটের কোনো প্ল্যান আছে কিনা। ইভ্যালি যে প্ল্যানটা দিয়েছে, সেটা দিয়ে এগোতে পারব কিনা, সেটা এখনো বিবেচনাধীন। একেবারে পরিত্যক্ত করা হয়নি।

যে টাকার খোঁজ পাওয়া যায়নি তা পাচার হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করেছি টাকা কোথায় গেছে, সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সন্দেহ আছে। পাচার হতে পারে বা অন্য কোথাও সরানো হতে পারে। এটি যেন তারা তদন্ত করে বের করে। তদন্ত এখনো অব্যাহত আছে।

এত কিছুর পর গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা সম্ভব হবে কিনা, জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব বলেন, এটা পুরোপরি নিশ্চয়তা দিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। সরকার জনগণের জন্যই চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা ইভ্যালির প্রতিও কোনো মায়া দেখাচ্ছি না। ক্রেতারা যেন প্রতারিত হওয়া থেকে রক্ষা পায় সেই চেষ্টা করছি। কারণে অনেক ক্রেতা আছে যারা না বুঝেই যুক্ত হয়ে গেছে। আমরা চাই তারা এখান থেকে যেন প্রতারিত না হয়, তারা যেন পণ্যটা বুঝে পায়।

এর আগে জালিয়াতি বা আত্মসাতের তদন্ত চলমান থাকায় ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং তার স্বামী কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন