ইইউর প্রভাবশালী তিন দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে ঢাকা

মনজুরুল ইসলাম

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রভাবশালী তিন দেশ জার্মানি, ফ্রান্স ইতালির সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা। এরই মধ্যে জার্মানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে নিয়ে গেছে ঢাকা। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় অন্তর দেশটির সঙ্গে সচিব পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত সংলাপ আয়োজনের কথা ভাবা হচ্ছে। বিষয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জার্মানির পর ফ্রান্স ইতালির সঙ্গে সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করতে কাজ করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ব্রেক্সিটের পর নতুন করে ইইউতে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা দেখছে বাংলাদেশ। কারণ ইইউ থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে যাওয়ায় সেখানে বাংলাদেশের বিষয়গুলো উপস্থাপনে নতুন অংশীদার প্রয়োজন। এরই অংশ হিসেবে ইইউ জোটের শক্তিশালী দেশ হিসেবে শুরুতে জার্মানির সঙ্গে সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে উন্নয়ন করেছে ঢাকা। পাশাপাশি ফ্রান্স, ইতালিসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মূলত গতানুগতিক ফরেন অফিস কনসালটেশনের (এফওসি) পরিবর্তে গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে কৌশলগত সংলাপ চালুর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।

প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানান, জার্মানির সঙ্গে সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে উন্নয়ন এবং নিয়মিত কৌশলগত সংলাপ করতে প্রস্তাব তৈরির কাজ চলছে। পরে ফ্রান্স ইতালির সঙ্গেও সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে নেয়ার কাজ হবে। মূলত ইইউর অভ্যন্তরে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উপস্থাপনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ এসব দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশের সম্পর্ক বেশ জোরালো। সেই সম্পর্ক দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে প্রতিফলিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জার্মানির সঙ্গে সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে নেয়ার অংশ হিসেবে গত মাসে (আগস্ট) প্রথমবারের মতো ঢাকা বার্লিনের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নিতে সে সময় জার্মানি সফর করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠকে দুই দেশের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, ব্লু ইকোনমি, জঙ্গিবাদ মোকাবেলা, সাইবার নিরাপত্তা, মানব মাদক পাচার, অবৈধ অনুপ্রবেশ, জার্মানি থেকে নথিবিহীন বাংলাদেশীদের ফেরত আনার বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়।

পাশাপাশি আফগানিস্তান পরিস্থিতি, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, রোহিঙ্গা ইস্যু, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, কানেকটিভিটি এবং আঞ্চলিক সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই), জাপানের প্রস্তাবিত বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ ইনিশিয়েটিভ (বিগ বি), বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল সংযুক্তির (বিবিআইএন) মতো বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রায় এক হাজার অবৈধ বাংলাদেশীর তালিকা পাঠায় ইইউযার বড় একটি অংশই আটক রয়েছে জার্মানিতে। এসব বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে না আনার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বাংলাদেশীদের ভিসা প্রদান সাময়িক বন্ধ রাখার প্রস্তাব করেছে ইইউ কমিশন। অবৈধ বাংলাদেশী নাগরিকদের ফেরত আনা নিয়ে অসহযোগিতার কারণে ইউরোপীয় কাউন্সিলে প্রস্তাব করা হয়।

ইইউ কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, স্বল্প সময়ের জন্য যেসব বাংলাদেশী ইউরোপ সফর করতে চায় শুধু তাদের ভিসা সাময়িকভাবে স্থগিত করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাব বাংলাদেশের নাগরিকদের পাশাপাশি ইরাক জাম্বিয়ার নাগরিকদের জন্যও করা হয়েছে। অবৈধ নাগরিকদের ফেরত আনার ক্ষেত্রে দেশগুলো থেকে যথাযথ সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ইইউ কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেয়, যেসব দেশ তাদের অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নেবে না, তাদের ভিসা প্রদান বন্ধ করে দেয়া হবে। সে অনুয়ায়ী ২০১৬ সালেই ইইউর সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই করে বাংলাদেশ। এতে নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নিজ নাগরিককে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ।

ইইউর পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ইইউতে ৯৩ হাজার বাংলাদেশী অবৈধ অবস্থায় ছিল। এরপর বর্তমানে সংখ্যা লাখের উপরে গিয়েছে। শুধু ২০১৯ ২০২০ সালে প্রায় ২৩ হাজার ৭০০ বাংলাদেশী রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছে ইউরোপে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন