জলবায়ু পরিবর্তন

২০৫০ সাল নাগাদ বাস্তুচ্যুত হবে সাড়ে ২১ কোটি মানুষ

বণিক বার্তা ডেস্ক

পূর্ব কেনিয়ার দাদাবের বাইরে ইফো শরণার্থী শিবিরে সোমালিরা ফাইল ছবি: এপি

জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে তাপমাত্রা। গলছে মেরু অঞ্চলের বরফ। বিপত্সীমা ছাড়াচ্ছে সমুদ্র ও নদীর পানি। তলিয়ে যাচ্ছে নিচু অঞ্চল। ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে ভারি বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের। বসতঘর ছেড়ে বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যাও। বিশ্বব্যাংকের একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আগামী তিন দশকে ২১ কোটি ৬০ লাখ মানুষকে ঘর-বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করবে। বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং সম্পদের ব্যবধান কমিয়ে আনতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে সতর্ক করেছে বৈশ্বিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি।

এপির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি প্রকাশিত গ্রাউন্ডসওয়েল প্রতিবেদনের দ্বিতীয় অংশে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানির অভাব, ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়া ও সমুদ্রের স্তর বাড়ছে। ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে লাখ লাখ মানুষজলবায়ু অভিবাসী হতে পারে। প্রতিবেদনটিতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেয়া উদ্যোগগুলোর মাত্রার ওপর তিন ধরনের পরিস্থিতির বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

এ প্রভাব মোকাবেলায় জরুরি উদ্যোগ ব্যতীত উচ্চমাত্রার কার্বন নিঃসরণ এবং সম্পদের অসমতা বাড়ার সঙ্গে ছয়টি অঞ্চল থেকে ২১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ অভিবাসী হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সেই অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে লাতিন আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা, সাব-সাহারান আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল।

অন্যদিকে নিম্নস্তরের কার্বন নিঃসরণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি ও টেকসই উন্নয়নসহ সবচেয়ে জলবায়ুবান্ধব উদ্যোগ নেয়া হলেও ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হবে।

বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষাটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের স্বল্পমেয়াদি প্রভাব যেমন চরম আবহাওয়া ও দেশের সীমানার মধ্যে জলবায়ু অভিবাসনের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে ভঙ্গুর উপকূল রেখা ও কৃষির ওপর জনসংখ্যার নির্ভরতার কারণে সাব-সাহারান আফ্রিকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সবচেয়ে বেশি অভিবাসী দেখতে পাবে। সেখানকার ৮ কোটি ৬০ লাখ মানুষ দেশের সীমানার মধ্যেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাড়ি জমাচ্ছে।

তবে উত্তর আফ্রিকায় জলবায়ু অভিবাসীদের সবচেয়ে বড় অনুপাত রয়েছে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সেখানকার ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ জলবায়ু অভিবাসী হচ্ছে, যা তার জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশের সমান। প্রধানত উত্তর-পূর্ব তিউনিসিয়া, উত্তর-পশ্চিম আলজেরিয়া, পশ্চিম ও দক্ষিণ মরক্কো এবং কেন্দ্রীয় অ্যাটলাসের পাদদেশে পানি সংকট বৃদ্ধির কারণে এত বড় অনুপাতে মানুষ অভিবাসী হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু অভিবাসীর অর্ধেকই হবে বাংলাদেশ থেকে। জরুরি উদ্যোগ ব্যতীত বন্যা ও ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটির প্রায় দুই কোটি মানুষ অভিবাসী হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী রয়েছে।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট ক্লাইমেট সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক মার্টেন ফন অ্যালস্ট বলেন, এ মুহূর্তে এটি আমাদের মানবিক বাস্তবতা। আমরা আরো উদ্বিগ্ন যে দুর্বল অঞ্চলগুলোতে এ পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে চলেছে।

অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, কার্বন নিঃসরণ কমাতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সুতরাং এতটা ভয়াবহ নাও হতে পারে। প্রতিবেদনে আরো সতর্ক করা হয়েছে, পরবর্তী দশকের মধ্যে অভিবাসন হটস্পট দেখা দিতে পারে এবং ২০৫০ সাল নাগাদ তা আরো তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এজন্য জলবায়ু অভিবাসীরা যেসব এলাকায় স্থানান্তরিত হবে এবং তাদের ছেড়ে যাওয়া অঞ্চলে যারা থাকবে তাদের সহায়তার জন্য দ্রুত পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন