আইসিবি ওয়ালটন বার্জার

১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে বিএসইসির নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে ন্যূনতম ১০ শতাংশ ফ্রি ফ্লোট শেয়ার নিশ্চিতের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এজন্য তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ লিমিটেড (আইসিবি), ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডকে এক বছরের মধ্যে ১০ শতাংশ ফ্রি ফ্লোট শেয়ার নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গতকাল বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে তিন কোম্পানির কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত বছর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ফ্রি ফ্লোট শেয়ার রয়েছে মাত্র দশমিক ৯৭ শতাংশ। ১০ শতাংশের বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে হলে কোম্পানিটিকে আরো দশমিক শূন্য শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। বাজারে আইসিবির ফ্রি ফ্লোট শেয়ারের পরিমাণ দশমিক ১৯ শতাংশ। ফলে আরো দশমিক ৮১ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে কোম্পানিটির। বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার পেইন্টসের ফ্রি ফ্লোট শেয়ারের পরিমাণ শতাংশ। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, কোম্পানিটিকে আরো শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে।

কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকদের ধারণ করা শেয়ার থেকেই শেয়ার ছাড়তে হবে। এক্ষেত্রে নতুন করে কোনো শেয়ার ইস্যু করা হবে না। শেয়ার ইস্যুর জন্য কোম্পানিগুলো সর্বোচ্চ এক বছর সময় পাবে। এক্ষেত্রে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ শতাংশ করে শেয়ার ছাড়া যাবে। বিদ্যমান বাজারদরে শেয়ার ছাড়তে হবে। প্রতি মাসে শেয়ার ছাড়ার বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে কমিশনকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।

বিএসইসির কর্মকর্তারা বলছেন, পাবলিক ইস্যু রুলস অনুসারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে কোম্পানিকে পুঁজিবাজার থেকে ন্যূনতম এর পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের সমপরিমাণ শেয়ার ইস্যু করতে হয়। এক্ষেত্রে সব কোম্পানির মধ্যে সাম্য বজায় রাখার জন্য যাদের ফ্রি ফ্লোট শেয়ার ১০ শতাংশের কম রয়েছে তাদের শেয়ার ছাড়তে বলা হয়েছে। এতে বাজারে এসব কোম্পানির শেয়ার সরবরাহ বাড়বে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও তখন এসব ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারবেন।

জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, পুঁজিবাজারে সবারই আইন পরিপালন করতে হবে। পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। আইন মেনে সবকিছু পরিচালনা করা হলে বাজারে কোনো সমস্যা থাকবে না। বাজারে শৃঙ্খলা আনার জন্য আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই কাজ করছি।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ন্যূনতম ১০ শতাংশ ফ্রি ফ্লোট শেয়ার বাজারে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কমিশনের উদোগের সঙ্গে বাজারসংশ্লিষ্টরাও একমত। তারা বলছেন, এতে বহুজাতিকসহ ভালো কোম্পানির শেয়ারের সরবরাহ বাড়বে। তবে বর্তমানে বাজারে যে গতিশীলতা ফিরে এসেছে সেটি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। কমিশনের নির্দেশনা পরিপালন করতে হলে গতকালের বাজারদর অনুসারে তিন কোম্পানির হাজার ১৫৭ কোটি টাকার শেয়ার ছাড়তে হবে। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালকেরা বিদ্যমান বাজারদরে শেয়ার বিক্রি করে লাভবান হবেন। অন্যদিকে শেয়ার বিক্রির কারণে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। লকইন থাকার কারণে মুহূর্তে ওয়ালটনের উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পাশাপাশি পাবলিক ইস্যু রুলসের সংশোধনী আনা হয়েছে বেশি দিন হয়নি। অবস্থায় বাজার স্থিতিশীলতার স্বার্থে ন্যূনতম ১০ শতাংশ ফ্রি ফ্লোট শেয়ার ইস্যুর বিষয়টি নমনীয় দৃষ্টিতে দেখতে বিএসইসিকে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজির উল্লেখ করে বাজারসংশ্লিষ্টরা আরো বলছেন, বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বীমা কোম্পানির উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশ শেয়ারধারণের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। সময়সীমা আরো আগেই শেষ হয়ে গেলেও আইডিআরএ এখন পর্যন্ত বিষয়টিকে নমনীয়ভাবেই দেখেছে। একইভাবে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) ছয় মাসের মধ্যে শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল। যদিও নানা জটিলতায় পাওয়ার গ্রিডসহ বেশকিছু সরকারি কোম্পানি এখনো এটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এক্ষেত্রে এফআরসির পক্ষ থেকে বিষয়টি নমনীয়ভাবে দেখা হয়েছে। তাই নূ্যূনতম ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়ার বিষয়টি আরো সময় নিয়ে কার্যকর করার জন্য কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি ১৯৭৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর পরিশোধিত মূলধন ৮০৫ কোটি ৮১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৮০ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৫২৭। এর ৬৯ দশমিক ৮১ শতাংশ কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক, ২৭ শতাংশ সরকার, দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাকি দশমিক ৩৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে দশমিক ৮১ শতাংশ হারে প্রতিষ্ঠানটির কোটি ৪৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭টি শেয়ার ছাড়তে হবে; গতকালের বাজারদর অনুসারে যার মূল্য ৭৭৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের উদ্যোক্তা পরিচালক সরকার। কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়টি আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করব। মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা আসবে আমরা সেভাবেই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব।

২০২০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের পরিশোধিত মূলধন ৩০২ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩০ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩। এর মধ্যে ৯৯ দশমিক শূন্য শতাংশ শেয়ারই রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক ৩৯, বিদেশী দশমিক ১০ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক ৪৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে দশমিক শূন্য শতাংশ হারে ওয়ালটনের উদ্যোক্তা পরিচালকদের কোটি ৭৩ লাখ ৫৪ হাজার ৪২৯টি শেয়ার ছাড়তে হবে। গতকালের বাজারদর অনুযায়ী শেয়ারের মূল্য হাজার ৯৩২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বার্জার পেইন্টসের পরিশোধিত মূলধন ৪৬ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা কোটি ৬৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮০। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে দশমিক ৭১, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের হাতে দশমিক ১৪ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে শতাংশ হারে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ২৩ লাখ ১৮ হাজার ৮৯৪টি শেয়ার ইস্যু করতে হবে; গতকালের বাজারদর অনুসারে যার মূল্য ৪৪৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

বিষয়ে বার্জার পেইন্টসের কোম্পানি সচিব খন্দকার আবু জাফর সাদিক বণিক বার্তাকে বলেন, পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কমিশন নির্দেশনা দিয়েছে। আশা করছি এটি বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমাদের যারা উদ্যোক্তা পরিচালক রয়েছেন, কমিশনের নির্দেশনার বিষয়টি তাদের অবহিত করব। ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন