শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার কারণে টানা ১৭ মাস বন্ধের পর গতকাল খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রাজধানীর একটি স্কুল থেকে তোলা ছবি: মো. মানিক

দীর্ঘ দেড় বছর পর প্রাণ ফিরে পেয়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আঙিনা। দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমতে থাকায় করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী গতকাল থেকে খুলে দেয়া হয়েছে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার দ্বার। মেনে চলতে হচ্ছে নানা বিধিনিষেধ। তবু শুরুটা যে হয়েছে, তাতেই খুশি বেশির ভাগ শিক্ষার্থী তাদের অভিভাবকরা।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকদিন ধরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নেয়া হচ্ছিল নানা ধরনের প্রস্তুতি। জীবাণুমুক্ত করা হয় সব প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্ট সবার হাত ধোয়ার জন্য বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই স্থাপন করা হয়েছে বেসিন বা কল। গতকাল শুরুর দিনেই সব শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরতে পারেনি। নিয়ম অনুযায়ী, শুরুতে প্রতিদিন ক্লাস করবে কেবল পিএসসি, এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন করে সশরীরে শ্রেণীকক্ষে যাবে। তবে কোন ক্লাস কবে যাবে, সেটি নির্ধারণ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। সে অনুযায়ীই সাজানো হয়েছে রুটিন।

ক্লাস শুরুর দিনে সব স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। আগে থেকেই নির্ধারণ করে দেয়া হয় কোন শ্রেণী কখন আসবে, কোন রোল নম্বর কোন কক্ষে বসবে। যেহেতু প্রতি বেঞ্চে একজন করে বসতে হয়েছে, তাই যেসব ক্লাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি তারা কয়েকটি আলাদা কক্ষে বসে ক্লাস করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়। কোথাও কোথাও রঙিন বেলুন-

ফেস্টুনে সাজানো হয় পুরো চত্বর। বেশির ভাগ স্কুল-কলেজে সচেতনতা বৃদ্ধির অংশ

হিসেবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা-সংক্রান্ত পোস্টার লাগানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সেদিকে কড়া দৃষ্টি রেখেছেন শিক্ষকরা।

অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, এখন থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সারপ্রাইজ ভিজিট চলবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা পাওয়া গেলে প্রতিষ্ঠান বা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতকাল রাজধানীর আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে কথা বলেন তিনি। 

মন্ত্রী বলেন, করোনা ডেঙ্গু থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণে গিয়ে কোনো অনিয়ম পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের যে ঘাটতি হয়েছে, তা পূরণে যথাযথ ক্লাস নেয়ার কথাও জানান তিনি। পরিস্থিতি ভালো হলে পিএসসি, এসএসসি এইচএসসির পাশাপাশি জেএসসি পরীক্ষাও হবে। 

সময় সংক্রমণ বাড়লে শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে না নিয়ে অনলাইনে পাঠদান অ্যাসাইনমেন্টে ফিরিয়ে নেয়ার ইঙ্গিত দেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে, সবার মাঝে একটা সাজ সাজ রব আছে। একই সঙ্গে আমার কাছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার অনুরোধ জানিয়ে শত শত মেসেজ -মেইল বার্তা এসেছে।

ক্লাস শুরু নিয়ে অনেক অভিভাবকের মনে সংশয় থাকলেও সারা দেশের শিক্ষার্থীরাই বিপুল উৎসাহ নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেছে। দীর্ঘদিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ার উত্তেজনা ছিল তাদের মধ্যে। তারাও চেষ্টা করেছে নিয়মনীতি মেনে স্কুল-কলেজে প্রবেশ করতে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে রাজধানীতে যানজট বেড়েছে। বিশেষ করে দুপুরে রাজধানীর সড়কগুলোতে দেখা গেছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন