শীর্ষ পাঁচ ইস্পাত উৎপাদক প্রতিষ্ঠান

মেহেদী হাসান রাহাত

নির্মাণ খাতের অব্যাহত প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় গত দুই দশকে দেশে নির্মাণসামগ্রীর বাজারও সম্প্রসারিত হয়েছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্প আবাসন খাতে বিপুল চাহিদা থাকায় ইস্পাতের মতো অত্যাবশ্যকীয় নির্মাণ উপকরণে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগও বেড়েছে। লংকাবাংলা ইবিএলের গবেষণা প্রতিবেদন এবং ইস্পাত খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনায় দেশের শীর্ষ পাঁচ ইস্পাত উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের চিত্র পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্মাণ খাতের আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রড উৎপাদনও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, গত আট বছরে সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ভর করে দেশের নির্মাণ খাতের আকার দ্বিগুণ হয়েছে। বড় ধরনের প্রবৃদ্ধির কারণে দেশের প্রতিষ্ঠিত বড় কয়েকটি শিল্প গ্রুপ খাতের ব্যবসায় বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করেছে। এসব শিল্প গ্রুপ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বিএসআরএম, আবুল খায়ের, কেএসআরএম, জিপিএইচ অন্যতম। পাশাপাশি চীনা জাপানি উদ্যোক্তারাও দেশের ইস্পাত শিল্পে বড় আকারের বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন।

দেশের ইস্পাত শিল্পে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবার ওপরে রয়েছে ১৯৫২ সালে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানে স্টিল রি-রোলিং মিল স্থাপনের মাধ্যমে ইস্পাত শিল্পের ব্যবসায় যুক্ত হওয়া বিএসআরএম গ্রুপ। বর্তমানে বিএসআরএম গ্রুপের দুটি কোম্পানি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (বিএসআরএম) বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা সাত লাখ টন। বিএসআরএমের আরেকটি ইউনিটে বিলেট উৎপাদন করা হয়, যেটির উৎপাদন সক্ষমতা বছরে দেড় লাখ টন। গ্রুপের আরেকটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা সাত লাখ টন। সব মিলিয়ে বিএসআরএম গ্রুপের রড উৎপাদন সক্ষমতা বছরে ১৭ লাখ টন এবং বিলেট উৎপাদন সক্ষমতা ১৯ লাখ টন। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও কার্যক্রম রয়েছে বিএসআরএমের। হংকংয়ে গ্রুপটির একটি সাবসিডিয়ারি রয়েছে। কেনিয়ায়ও বিএসআরএম বিনিয়োগ করেছে। তাছাড়া প্রতিবেশী ভারতের কলকাতায়ও কয়েক বছর ধরে ব্যবসা করছে বিএসআরএম।

 

ইস্পাত খাতের অন্যতম আরেক শীর্ষ প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির আবুল খায়ের স্টিল বা একেএস এখন ইস্পাতের বাজারে শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ১৪ লাখ টন। ১৯৯৩ সালে ঢেউটিনের মাধ্যমে প্রথমে ইস্পাত শিল্পের ব্যবসায় আসে আবুল খায়ের গ্রুপ। পরে ২০০৯ সালে তারা রড উৎপাদন শুরু করে।

ইস্পাত শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) তথ্যানুসারে দেশে বর্তমানে ইস্পাত শিল্পের বাজারের আকার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। অ্যাসোসিয়েশনের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪০। বর্তমানে দেশের ইস্পাত খাতের সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা ৯০ লাখ টন। এর মধ্যে বর্তমানে ব্যবহূত হচ্ছে ৫৫ লাখ টন। যদিও করোনার কারণে গত বছর তা ৩০-৩৫ লাখ টনে নেমে গিয়েছিল। বছর দেশের ইস্পাত খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। খাতে উদ্যোক্তাদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকা। দেশে নির্মাণ খাতের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ভবিষ্যতে রডের চাহিদা আরো বাড়বে। তবে বিদ্যমান যে সক্ষমতা রয়েছে তা দিয়ে আগামী ২০-২৫ বছর চাহিদা মেটানো সম্ভব। একসময় রড আমদানি করা লাগলেও বর্তমানে বাংলাদেশ খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

দেশের ইস্পাত শিল্পে ১৯৮৪ সালে যাত্রা করে কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড (কেএসআরএম) বর্তমানে বছরে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন সক্ষমতা আট লাখ টন।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জিপিএইচ ইস্পাত খাতের ব্যবসায় যুক্ত হয় ২০০৮ সালে। বর্তমানে কোম্পানিটির বার্ষিক লাখ ১০ হাজার টন এমএস বিলেট দেড় লাখ টন এমএস রড উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। সম্প্রতি জিপিএইচের নতুন প্লান্টের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এর কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। নতুন প্লান্টের সক্ষমতা যোগ করলে জিপিএইচ ইস্পাতের বার্ষিক এসএম বিলেট উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ১০ লাখ ৫০ হাজার টনে। লাখ ৯০ হাজার টনে উন্নীত হবে এমএস রড উৎপাদন সক্ষমতা।

১৯৭৮ সাল থেকে দেশের ইস্পাত শিল্পের ব্যবসায় যুক্ত রয়েছে আনোয়ার গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক লাখ ৬০ হাজার টন সিমেন্ট উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।

চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা ইস্পাত জায়ান্ট কুনমিং আয়রন অ্যান্ড স্টিল হোল্ডিং কোম্পানি বার্ষিক ২০ লাখ টন সক্ষমতার কারখানা স্থাপনে ২৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। এটি দেশের উৎপাদন খাতে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। এছাড়া জাপানের সবচেয়ে বড় ইস্পাত উৎপাদক নিপ্পন স্টিল সুমিতমো মেটাল স্থানীয় কোম্পানি ম্যাকডোনাল্ড স্টিল বিল্ডিং প্রডাক্টসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কারখানা স্থাপনে কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। কারখানাগুলো উৎপাদনে এলে দেশের ইস্পাত খাতে প্রতিযোগিতা আরো তীব্র হয়ে উঠবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন