দেশ ছাড়তে কাবুল বিমানবন্দরে জনস্রোত

বণিক বার্তা ডেস্ক

তালেবানরা আফগানিস্তানের দখল নেয়ার পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সোমবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দেশত্যাগে মরিয়া মানুষজন ঢুকে পড়ে বিমানবন্দরের টারমাকেও। রানওয়ে পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।

অবস্থা এতটাই নাজুক হয়ে পড়ে যে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে বিমানবন্দরটির নিয়ন্ত্রণে থাকা মার্কিন সেনারা। পরে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। যদিও তারা পদদলিত হয়ে নাকি গুলিতে মারা গেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এদিন দেশ ছাড়ার জন্য হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দরে ভিড় করে। তৈরি হয় চরম বিশৃঙ্খলা। হট্টগোল।

নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিমানে উঠতে মরিয়া চেষ্টা চালায় অনেকে। বিমানে ওঠার সিঁড়িতে হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে অনেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায়। কে আগে উঠবে তা নিয়ে চলে ধাক্কাধাক্কি। কেউ কেউ সিঁড়ির রেলিংয়ে ঝুলেই চেষ্টা করে বিমানে উঠতে।

কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবস্থা বর্ণনা করে বিবিসির সাংবাদিক ইয়ালদা হাকিম লিখেন, যেন ভয়ংকর সিনেমার দৃশ্য। টুইটারে জুড়ে দেয়া ভিডিওতে দেখা যায়, একটি উড়োজাহাজ টেক অফ করছে আর তার সঙ্গে দৌড়াচ্ছে চারপাশ ঘিরে রাখা অসংখ্য মানুষ। কেউ কেউ উঠতে ব্যর্থ হয়ে ঝুলেছে বিমানের নিচের অংশে বা বাইরে। উড্ডয়নের পরে অনেকে রানওয়েতে কিংবা মাটিতে ছিটকে পড়ছে, এমন দৃশ্যও ধারণ করেন অনেকে। বিমানের চাকা ধরে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেছে কেউ কেউ। প্লেনের চাকায় পিষ্ট হয়েও বহু মানুষ আহত বা নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।

ব্যাপক উত্তেজনার মধ্যেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বিমানবন্দর থেকে সব ধরনের বেসামরিক বিমান চলাচল। আফগান নাগরিকদের বিমানবন্দরে আর না আসার অনুরোধ জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। জানানো হয়েছে, এখন শুধু বিদেশী নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সামরিক প্লেন চলাচল করবে। এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, বিদেশী নাগরিকদের দেশত্যাগ নিরাপদ নির্বিঘ্ন করতে মার্কিন সেনারা কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে ছয় হাজার মার্কিন সেনা।

এর আগে দেশ ছাড়তে আগ্রহীদের বাধা না দেয়ার আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ৬৫টি দেশ। এসব দেশের পক্ষে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, যারা দেশত্যাগ করতে চায় তারা যেন হয়রানির শিকার না হয়। তাদের যেন কোনো ধরনের বাধা দেয়া না হয়। অন্যথায় এর দায় তালেবানকে নিতে হবে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কাতার, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান দক্ষিণ কোরিয়া।

১৫ আগস্ট তালেবানরা কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর দেশত্যাগ করেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। তবে তিনি উজবেকিস্তান নাকি তাজিকিস্তান গেছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে প্রেসিডেন্ট ভবন দখলে নেয় তালেবান যোদ্ধারা। জরুরি ভিত্তিতে দূতাবাস কর্মীসহ নিজ নিজ নাগরিকদের ফেরত নিতে জরুরি বিমান সেনা পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য। এছাড়া ডেনমার্ক, নরওয়ে, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, সুইডেনসহ বেশ কয়েকটি দেশ দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে কাবুলে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন