বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে নেপথ্য ব্যক্তিদের পরিচয় বের হবে —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা ছিল। অনেক অপপ্রচার চালিয়েও তাকে জনগণের কাছ থেকে দূরে সরাতে পারেনি। আর সেজন্যই হত্যাকাণ্ডটা ঘটিয়েছে। এটা হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, যারা পাশে ছিল অথবা ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে, সবাই সমানভাবে দোষী। আমি আরো অনেক ঘটনা জানি। আগে হত্যার বিচার করাটা খুবই জরুরি ছিল, সেটা করেছি। ধীরে ধীরে হত্যায় যারা নেপথ্যে ছিলেন তাদের পরিচয়ও বের হয়ে আসবে।

গতকাল বঙ্গবন্ধুর ৪৬তম শাহাদতবার্ষিকী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারপ্রধান গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের পর যখন ফিরে এলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশ। দেশ গড়ে তোলার কাজে হাত দিলেন। আমার নিজের মনে কয়েকটি প্রশ্ন আসে, একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, যেটি পাকিস্তানের প্রদেশ ছিল। দারিদ্র্য যেখানে নিয়মিত সঙ্গী, তার ওপর যুদ্ধের একটা বছর কোনো ফসল হয়নি। গোলায় খাদ্য নেই, কোনো কারেন্সি নেই। রাস্তাঘাট সব ভাঙা। সেই অবস্থায় তিনি দেশ পরিচালনা শুরু করেছেন।

সরকারপ্রধান বলেন, বাহাত্তর সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরেছেন, সেই বাহাত্তর সাল থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তি হলো, জাসদ হলো। যারা পাকিস্তান বাহিনীর দোসর, যারা বড় নেতা ছিল, তারা তো পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে অনেক আগেই চলে গেছে। আর যারা দেশে ছিল তারা কোথায় গেল? হঠাৎ উধাও হয়ে গেল। তারা সব গিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির সঙ্গে মিশে গেল।

তিনি বলেন, আর আমাদের দেশের, আপনারা যদি পত্রপত্রিকা পড়েন। আপনারা এর পেছনে কে আছে না আছে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। বেশি তো খোঁজার দরকার নেই। অনেক খবর আপনাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বছরের পর বছর লেগে যায়। কিন্তু একটি বছরও সময় দেয়া হলো না। সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনা শুরু হলো। আর ধৈর্য ধরা হলো না। এটা হলো না কেন, এটা নাই কেন, নানা কথা লেখা হলো। কারা লিখেছিল? কাকে খুশি করতে এবং কারা হত্যাকাণ্ডের গ্রাউন্ড তৈরি করছিল? আমি জানি যারা সরাসরি হত্যা করেছে, যারা নিজেরা স্বীকার করেছে। বিবিসি ইন্টারভিউতে রশিদ-ফারুক বসে বলেছে, তারা হত্যা করেছে।

তিনি বলেন, কাজেই তখন যারা সমালোচনা লিখেছে, তারা তো এদেরই দোসর হিসেবে গ্রাউন্ড তৈরি করছিল। সেটা একটু আপনারা স্মরণ করে রাখবেন। তাহলে আর আপনাদের বেশি দূর যেতে হবে না খুঁজতে।

মৃত্যুর ভয়ে ভীত নন জানিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, জাতির পিতা রক্ত দিয়েছেন দেশের জন্য। রক্ত দিয়েছেন আমার মা-ভাইয়েরা। আমিও রক্ত দিতেই বাংলাদেশে এসেছি। কাজেই আমি জানি, আমার জীবনের কোনো মায়া নেই। আমার কোনো চাওয়াও নেই। আমার একটাই চাওয়া, যে আদর্শ নিয়ে আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছেন সে আদর্শ মানুষের কাছে পৌঁছে দেব।

তিনি বলেন, মৃত্যুকে সামনাসামনি দেখেছি, কখনো ভীত হইনি। হবও না। আমি তো প্রস্তুত। আমি তো জানি, যেকোনো সময় আমাকে চলে যেতে হবে। যতটুকু সময় আছে দেশের জন্য কতটুকু করতে পারি যেন আমার আব্বার আত্মাটা শান্তি পায়।

বাবা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, একটা মানুষ তার জীবনের সবটা উজাড় করে দিয়েছিল একটি জাতির জন্য। নিজের জীবনের কোনো চাওয়া-পাওয়া ছিল না। তিনি শুধু দেশের কথা ভাবতেন, মানুষের কথা ভাবতেন। শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। দেশের মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় তিনি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।

তিনি বলেন, বঙ্গভূমিতে কোনোদিনই মাটির কোনো সন্তান কিন্তু এখানে সরকার গঠন করেনি বা রাজত্ব করেনি। সবসময় বাইরের মানুষ এসে শাসন করেছে। সেই মোগল আমল থেকে ব্রিটিশ আমলেও আমরা দেখেছি। পাকিস্তান হওয়ার পরেও একই অবস্থা আমরা দেখেছি। একমাত্র বাংলাদেশের মাটির সন্তান বঙ্গবন্ধু।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, একটি জাতিকে তিনি দীর্ঘ সংগ্রামের পথ ধরে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় এনে দিয়েছিলেন। বিজয় যে আসবে তিনি জানতেন। তিনি সে কথা সবসময় বলেছেন। আর দেশকে নিয়ে তার যে স্বপ্ন ছিল, সেটা তো আমি বড় সন্তান হিসেবে তার কাছে সে গল্প শুনতাম। আমরা তো খুব কম সময় পেয়েছি।

তিনি বলেন, বেশির ভাগ সময় তো আব্বা জেলে থাকতেন। তার পাশে ছিলেন আমরা মা, শেখ ফজিলাতুন নেছা। সংগ্রামে যেমন সবসময় পাশে, সংসারের সব দায়িত্ব তার নিজের। কোনোদিন সংসারের কোনো কিছু নিয়ে বাবাকে উত্ত্যক্ত করা বা কোনো কিছু চাওয়া, দাবি করা কিছু ছিল না। মা একটা কথাই বলতেন, দেশের জন্য তুমি কাজ করে যাও, সংসার নিয়ে ভাবতে হবে না।

দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনকেই নিজের লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছেন বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। ক্ষুধামুক্তি, দারিদ্র্যমুক্তি দেয়া, তাদের জীবনটা উন্নত করা, তাদের জীবনটা সুন্দরভাবে গড়ে তোলা, যেটা আমার বাবার আজীবন লালিত স্বপ্ন। সেটা যেদিন করতে পারব, আমি মনে করব হত্যার প্রকৃত প্রতিশোধ সেদিনই নিতে পারব। আজ আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন