সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি নূরানী ডায়িং অ্যান্ড সোয়েটার লিমিটেডের কারখানা ও করপোরেট কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তারা। এ সময় এক্সচেঞ্জটির কর্মকর্তারা কোম্পানিটির উৎপাদন ও অন্যান্য কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার প্রমাণ পান। অথচ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন ও স্টক এক্সচেঞ্জে দাখিল করা তথ্য বলছে কোম্পানিটির কার্যক্রম চালু আছে।
ডিএসইর পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অবহিত করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৭৮৬তম কমিশন সভায় নূরানী ডায়িংয়ের পর্ষদ পুনর্গঠন করার পাশাপাশি কোম্পানিটির বিগত বছরের নিরীক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
নূরানী ডায়িং অ্যান্ড সোয়েটার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৭ সালের মে মাসে। তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত তিন বছর কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন মাফেল হক অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। আর গত ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ হিসাব বছরের নিরীক্ষক ছিলেন সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস।
কোম্পানির উৎপাদন বন্ধের বিষয়টি আর্থিক প্রতিবেদনে উপস্থাপন না করা বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের পার্টনার রামেন্দ্র নাথ বসাক বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করেছি। সে সময় এর উৎপাদন কার্যক্রম চালু ছিল। তাছাড়া কোম্পানির আর্থিক বিষয়ে আমরা সে সময় কোয়ালিফায়েড অপিনিয়ন দিয়েছিলাম। আর ২০২০-২১ হিসাব বছরের নিরীক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে আমাদের কোনো কিছুই জানানো হয়নি। তারা এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেনি। এমনকি আমাদের
আগের বছরের নিরীক্ষা ফি এখনো পরিশোধ করা হয়নি এবং ফি আদায়ের জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
নূরানী ডায়িংয়ের ২০১৯-২০ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে ২০২০-২১ হিসাব বছরের নিরীক্ষক হিসেবে সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে পুনর্নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। অথচ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পার্টনার রামেন্দ্র নাথ বসাক বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন। এ বিষয়ে নূরানী ডায়িং অ্যান্ড সোয়েটারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০-২১ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকের (জুলাই-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, আলোচ্য সময়ে নূরানী ডায়িংয়ের শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে ৯৫ পয়সা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময় শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ৪২ পয়সা। এ বছরের ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ২৬ পয়সা।
৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল নূরানী ডায়িং অ্যান্ড সোয়েটার। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪১ পয়সা। ৩০ জুন ২০২০ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ২৩ পয়সা।
২০১৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১২২ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ১২ কোটি ২৬ লাখ ২৫ হাজার ৩০টি। এর মধ্যে ৩০ দশমিক ৯৩ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৭ দশমিক ২৮ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বাকি ৫১ দশমিক ৭৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
ডিএসইতে গতকাল নূরানী ডায়িংয়ের শেয়ার সর্বশেষ ৯ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। গত এক বছরে শেয়ারটির দর ৫ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১১ টাকা ২০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করেছে।