বিনিয়োগ দেড় হাজার কোটি টাকা

জামালপুরে দেশের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে জামালপুরের মাদারগঞ্জে দেশের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা করছে সরকার। ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন শেখ হাসিনা সোলার পার্কটি নির্মাণ করবে রাষ্ট্রায়ত্ত রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) ২০২৩ সালের মধ্যে সোলার পার্ক তৈরি করবে সংস্থাটি। এরই মধ্যে প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে।

আরপিসিএল সূত্রে জানা গেছে, ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ৩২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ করেছে আরপিসিএল। ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি-) আওতায় প্রকল্পে সিংহভাগ অর্থায়ন করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত।

আরপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুস সবুর বণিক বার্তাকে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে বিদ্যুৎ প্রাপ্তির লক্ষ্যে জামালপুরে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে। আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পুরো প্রস্তাব জমা দিয়েছি, অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করব। এটির বিদ্যুতের ট্যারিফ এখনো ঠিক হয়নি। তবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১১ টাকার মতো হতে পারে।

খসড়া প্রস্তাব থেকে জানা গেছে, ১০০ মেগাওয়াট সক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রটি মূলত শেখ হাসিনা সোলার পার্ক হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। পুরো প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে হাজার ৫১১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এলওসি--এর আওতায় সোলার প্রকল্পে ভারত হাজার ১১৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে। বাকি ৩১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা সরকারি অর্থায়ন ৭৬ কোটি টাকা আরপিসিএলের।

ইপিসি ঠিকাদারের আওতায় বিদ্যুৎ প্রকল্পটির জন্য ৪৮ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া অধিগ্রহণকৃত জমিতে থাকা ৮৮টি পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এর বাইরে অধিগ্রহণকৃত পুরো জমির স্থায়ী বন্দোবস্ত করা হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।

জামালপুরের মাদারগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে চরাঞ্চলের ভূমিতে। প্রায় এক দশক আগে জেগে ওঠা চরটিতে খুব বেশি জনবসতি নেই। দুই বছর আগে স্থানটিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে পরিকল্পনা নেয় আরপিসিএল। জেগে ওঠা চরটি সরকার অধিগ্রহণ করার পর আরপিসিএলকে জমি বরাদ্দ দেয় ভূমি মন্ত্রণালয় জামালপুর জেলা প্রশাসন।

বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, দেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পটি একনেকে উত্থাপন করা হবে। জ্বালানির বহুমুখী ব্যবহার পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

২০১৭ সাল থেকে দেশে এখন পর্যন্ত সাতটি সোলার পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের মোট উৎপাদন সক্ষমতা ১৩০ মেগাওয়াট। এরই মধ্যে সোলার পার্কগুলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। বেশির ভাগ সোলার পার্ক নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিপিডিবি) স্থাপিত সোলার পার্কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদনক্ষমতা ৫০ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে সরকার আরো বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। জামালপুরের মাদারগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি সেখানে একই সক্ষমতার আরো একটি সোলার পার্ক নির্মাণ করছে বিপিডিবি, আরপিসিএল পাওয়ার জেন। প্রকল্পের জন্য ৩৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রটির বিদ্যুতের ট্যারিফ ১১ টাকা পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা সাড়ে শতাংশের বেশি নয়। বর্তমানে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৭৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, যার মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ থেকে উৎপাদন হচ্ছে ৫৩২ মেগাওয়াট।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ পেতে সরকার জামালপুরে যে কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে, সেটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ধরনের একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমরা দেশের সৌরশক্তির বড় অবদানটা বুঝতে পারব। বিদ্যুতের ট্যারিফ বেশি হলেও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে অন্তত ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন