নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জে রপ্তানীমুখী একটি রেক্সিন উৎপাদনকারি কারখানার কেমিক্যালের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটেছে। খবর পেয়ে ঢাকা, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ ও রূপগঞ্জের কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিসের ১৪ টি ইউনিট এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। প্রায় আড়াই ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
বুধবার দুপুরে উপজেলার তারাব পৌরসভার মৈকুলী এলাকার এম হোসেন কটন এন্ড স্পিনিং মিলের ভেতরে অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড লেদার কারখানার দুই তলা বিশিষ্ট গুদামে অগ্নিকান্ডের এ ঘটনা ঘটে। তবে আগুনে কেউ হতাহত হয়নি বলে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক আল আমিন জানান, আগুন নেভাতে গিয়ে একজন শ্রমিক আহত হয়েছে। তাকে উদ্বার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার আবির হোসেন জানান,আগুন লাগার সময়ই রুপগঞ্জ থানার সাব ইন্সপেক্টর মেহেদী ইসলাম অন্য একটি কাজে যাচ্ছিলেন। সেসময় কারখানার ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে ওসিকে জানান, ওসি তাকে কারখানায় ঢুকে খোঁজ নেয়াসহ ব্যবস্হা নেয়ার নির্দেশ দেন। মেহদী কারখানায় ঢুকে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। কারখানার ভেতরে যাতে উৎসুক জনতা ভীড় করতে না পারে সেই ব্যবস্হা গ্রহন করেন সে। পরে তার সাথে অতিরিক্ত পুলিশ এসে অংশ নেয়। বর্তমানে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
শ্রমিকদের কয়েকজন জানান, ইউনাইডেট লেদার কারখানার ৪ শতাধিক শ্রমিক কাজ করতো। এই কারখানায় আর্টিফিসিয়াল লেদার উৎপাদন করে। লকডাউনের কারণে কারখানাটি বন্ধ ছিল। দুপুর বারোটার কিছুক্ষণ আগে ইউনাইটেড লেদার কারখানার কেমিক্যালের গুদামের উপরের তলায় হঠাৎ করে আগুন ধরে যায়। এ সময় পুরো গুদাম ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে কারখানার অন্য ভবনের শ্রমিকরা ছুটাছুটি করতে থাকে।
আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ্ নূসরাত জাহান, জেলা পুলিশের গ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
আগুন নিয়ন্ত্রনে আনার পর ঢাকা ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লে কর্ণেল জুলফিকার রহমান জানান, গুদামে কেমিক্যালসহ বিভিন্ন প্রকারের দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে ফায়ার সার্ভিসের দমকল কর্মীরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ায় আগুনের ভয়াবহতা বাড়তে পারেনি। তিনি বলেন, গুদামের দ্বিতীয় তলার পেছন দিকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট নাকি কোন কিছুর আগুন থেকে এই অগ্নিকান্ড ঘটেছে তা তদন্ত করে জানা যাবে। তবে গুদামে কোন লোকজন না থাকায় আগুনে এখন পর্যন্ত কোন হতাহতের আলামত পাওয়া যায়নি। গুদামে কেমিক্যাল মজুদ করে রাখতে সরকারি বিধি নিষেধ মানা হিয়েছিল কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
লেদার কারখানার জেনারেল ম্যানেজার দলিল উদ্দিন জানান, ইউনাইটেড লেদার ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ নামের প্রতিষ্ঠানটি এন হোসেন স্পিনিং এন্ড কটন মিলস এর অংগ প্রতিষ্ঠান। লকডাউনের কারনে ঈদের আগে থেকেই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ছিলো। আগামী এগারো তারিখে লকডাউন শেষে কারখানাটি খোলার প্রস্তুতি হিসেবে আজ কারখানার মেশিনারিজ মেরামত ও ধুলো পুরিস্কারের কাজ চলছিলো। আট-দশজন শ্রমিক এ কাজ করছিলেন। বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে মিলের গুদামের একটি অংশের বাল্ব বিস্ফোরিত হয়ে কৃত্রিম চামড়ার নিচে আস্তর হিসেবে ব্যান্ডেজের কাপড়রে মতো যে পাতলা কাপড় দেয়া হয় সেটির রোলের উপরে পড়ে। ফলে আগুন ধরে যায়। এর অল্প দূরেই কৃত্রিম চামড়া জোড়া লাগানোর আঠা, রেজিন ইত্যাদি রাসায়নিক দ্রব্যের ড্রাম ছিলো। আগুন এসব ড্রামে ধরে যায়।
ইউনাইটেড লেদারের অল্প দূরেই তাদের মূল প্রতিষ্ঠান এন হোসেন স্পিনিং এন্ড কটন মিলস অবস্থিত। এ প্রতিষ্ঠানটি চালু ছিলো। এছাড়া দুই প্রতিষ্ঠানেরই নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং সরঞ্জাম রয়েছে। আগুন লাগার পরপরই প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষিত ফায়ার ফাইটাররা আগুন নেভানো শুরু করে।