বস্তি ছেড়ে গ্রামে ফিরলে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়া হবে —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ঘরে ফেরা কর্মসূচি নিয়েছি। কোনো বস্তির বাসিন্দা যদি নিজ গ্রামে যায়, তাকে ঘর করে দেয়া, কর্মসংস্থান আয়ের সুযোগ করে দেব, ঋণ দেব। তিনি বলেন, বস্তিতে তারা মানবেতর জীবনযাপন করেন, এটি অস্বাস্থ্যকর বসবাসের অনুপযোগী। এজন্য তাদের জন্য সুন্দর আধুনিক ব্যবস্থাপনায় থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

গতকাল মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ঢাকায় নির্মিত হাজার ৪৭৪টি ফ্ল্যাট সংবলিত পাঁচটি আবাসন প্রকল্প, মাদারীপুরে নির্মিত সমন্বিত অফিস ভবন উদ্বোধন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের স্ব-অর্থায়নে বস্তিবাসীদের জন্য মিরপুরে নির্মিত ভাড়াভিত্তিক ৩০০টি ফ্ল্যাট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারপ্রধান বলেন, আজকে ৩০০ পরিবারকে ৩০০ ফ্ল্যাট দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ফ্ল্যাট দেব। কেউ গ্রামে যেতে চাইলে সে ব্যবস্থাও করব। গ্রামে ঘরবাড়ি করে দেব। ঢাকায় ফ্ল্যাটে থাকলে মাসে ভাড়া দিয়ে থাকতে হবে। গ্রামে গেলে সব বিনামূল্যে করে দেয়া হবে। আমাদের লক্ষ্য, একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ আরো আগেই সুন্দর উন্নত জীবন পেত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষ সুন্দর উন্নত জীবন পাবে, জাতির পিতা সে স্বপ্নই দেখতেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, তাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়ার ফলে সেটা পেলাম না। আমরা তার সেই কাজই করে যাচ্ছি। জাতির পিতার এই দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। পিছিয়ে থাকবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা তার জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশের জন্য। তিনি সব সময় একটি কথাই বলতেন, আমার জীবনের একমাত্র কামনা বাংলাদেশের মানুষ অন্ন পাবে, বস্ত্র পাবে, তারা উন্নত জীবনের অধিকারী হবে। এই বাংলাদেশের মানুষ রোগে-শোকে ছিল। শিক্ষার আলো পেত না। তাদের ভাগ্যোন্নয়ন করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর মূল লক্ষ্য। এজন্য ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলা ভাষার দাবি থেকে তিনি ধাপে ধাপে বাংলা জাতিকে মুক্ত স্বাধীন করেছেন। আর এই দাবির সংগ্রামের মধ্যেই তাকে জেলে নিয়েছে, নির্যাতন করেছে, হত্যা করতে চেয়েছে।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে ভূমিহীনদের ঘর করে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন বলেও উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, সাড়ে তিন বছর একটা রাষ্ট্রের জন্য কম সময়। তখন তো একটা প্রদেশ ছিল, সেটা দেশে উন্নীত করা তার গঠন করা; এটা তিনি করে গেছেন। কিছু বেইমান-মোনাফেকের জন্য তার ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের সময় আমরা তখন দেশের বাইরে ছিলাম। আমার দল বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায় ফিরে আসি। আমার আসার পথ সহজ ছিল না। তত্কালীন ক্ষমতা দখলকারীরা নানা বাধা সৃষ্টি করেছে। আজকে আমরা ক্ষমতায়। সরকারে থেকে তৃণমূল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, তাদের জীবনমান উন্নত করা এবং সংবিধানের আলোকে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছি।

স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে আমরা কাজ করাব, তাদের ভালো-মন্দও তো দেখতে হবে। আজিমপুর সরকারি কলোনিতে গ্যাস ছিল না, আমিই আব্বাকে বলে সে গ্যাসের লাইন করে দিয়েছিলাম। আমি সরকার গঠন করে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, সবাইকে ফ্ল্যাট করে দেব। সুন্দর পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা করে দেব, যাতে কর্মকর্তারা ভালোভাবে কাজ করতে পারেন।

তিনি বলেন, প্রত্যেক মহকুমাকে জাতির পিতা জেলায় রূপান্তর করেন। জেলা গভর্নর নিয়োগ দেন। যেন প্রত্যেক জায়গা পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠতে পারে। পঁচাত্তরের পর পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ফেলা হয়। এখন আমরা সে ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রথমে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন কমপ্লেক্স করে দিয়েছি। যাতে এক জায়গা থেকে সব সেবা পাওয়া যায়। পরে উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন করে দিয়েছি। এখন মাদারীপুর জেলায় কমপ্লেক্স করে দিলাম। এক ছাদের নিচে সব সরকারি সেবা পাবে মানুষ। সব জেলা উপজেলায় কমপ্লেক্স করে দেব। অফিসারদের থাকার জন্য ফ্ল্যাটও করে দেব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্বাচলে যাদের জমির মালিকানা ছিল, তাদের একটা করে প্লট করে দেয়ার কথা ছিল। সেটা কেউ করেনি। আমাদের গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নামমাত্র মূল্যে তাদের প্লটগুলো দিয়েছে। এজন্য মন্ত্রণালয়ের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন গৃহায়ন গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা প্রমুখ। সময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কয়েকজন বস্তিবাসীর মাঝে ফ্ল্যাটের বরাদ্দপত্র হস্তান্তর করেন প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া প্রকল্পগুলোর ওপর ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন