নদীভাঙনে দিশেহারা বরিশালের ৬ উপজেলার মানুষ

এম মিরাজ হোসাইন, বরিশাল

মেঘনা নদীর ভাঙনকবলিত বরিশালের পুরাতন হিজলা বন্দর এলাকা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

নদীভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বরিশালের ছয় উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার। প্রতিদিনই জেলায় ভাঙছে নতুন নতুন এলাকা। ফলে নদীতীরে বসবাসকারী মানুষের কান্না থামছে না। অব্যাহত ভাঙনের শিকার এসব মানুষ ছুটছে নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে। কোথাও জায়গা না পেয়ে খোলা আকাশের নিচেই আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

জেলার মেঘনা ঘেরা মেহেন্দিগঞ্জ হিজলা উপজেলাবাসী সবচেয়ে বেশি নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে। পাশাপাশি সুগন্ধা সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে নির্ঘুম দিন কাটাচ্ছে বানারীপাড়া, বাবুগঞ্জ উজিরপুর উপজেলার মানুষ। এছাড়া কীর্তনখোলা ভাঙনে দিশেহারা বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া চরমোনাই ইউনিয়নের মানুষ।

জানা গেছে, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা একটি পৌরসভা ১৫ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। প্রতি বছর উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নই নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে। অব্যাহত নদীভাঙনের ফলে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে উপজেলার মানচিত্র।

চলতি বর্ষা মৌসুমে উজানের ঢল নামায় মেঘনা, গজারিয়া, তেঁতুলিয়া ইলিশা নদীতীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে মেহেন্দিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রুকুন্দি সাদেকপুর গ্রাম। এছাড়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের লেঙ্গুটিয়া, শিন্নিরচর, চরশেফালী, ভাষাণচর ইউনিয়নের বাগরজা, লঞ্চঘাট এলাকা, চরগোপালপুর ইউনিয়নের আমীরগঞ্জ রাস্তার মাথা, গাজীরচর, গোবিন্দপুর ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া, আলীমাবাদ ইউনিয়নের মাঝকাজী, গাগুরিয়া, শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর বাজার, বগিরচর এবং উলানিয়া, চানপুর, চরএককরিয়া, জয়নগর, নলবুনিয়া দড়িরচর খাজুরিয়া ইউনিয়নে অব্যাহত নদীভাঙনের ফলে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

এদিকে মেঘনা নদীর কড়ালগ্রাসে বিলীন হয়ে যাচ্ছে হিজলা উপজেলা। উপজেলার বাউশিয়া, বাহেরচর, উত্তর বাউশিয়া, পুরাতন হিজলা বন্দর এলাকায় নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। বেশ কয়েকবার স্পটগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের  প্রকৌশলীরা পরির্দশন করলেও কোনো সুফল পায়নি উপজেলাবাসী। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে হিজলা উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবন ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

অন্যদিকে সন্ধ্যা সুগন্ধ্যা নদীর ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে বাবুগঞ্জ, বানারীপাড়া উজিরপুর উপজেলায়। আড়িয়াল খাঁ নদীতেও শুরু হয়েছে ভাঙন। সম্প্রতি বাবুগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জ ফেরিঘাটসংলগ্ন রহমতপুর-চাঁদপাশা ইউনিয়ন সড়কের ২০০ মিটার ইটের সলিং আড়িয়াল খাঁ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। রহমতপুর ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার মাহমুদ বলেন, গত বছর একদিনে পাঁচটি বসতবাড়ি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ সড়কের একাংশ বিলীন হয়ে যায়। তত্কালীন সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার সঠিকভাবে ভাঙন রক্ষাবাঁধ মেরামত করেনি। চলতি বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড সংযোগ সড়ক রক্ষার্থে আবারো ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করলেও ঠিকাদার নির্দিষ্ট সময় বালিভর্তি বস্তা নদীতে না ফেলার কারণে রহমতপুর-চাঁদপাশা সড়কটি আড়িয়াল খাঁ নদীতে চলে যায়। এতে হুমকির মুখে রয়েছে মীরগঞ্জ ফেরিঘাট মীরগঞ্জ বাজার।

বিষয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, বরিশালের চারটি নদীর ভাঙন নিয়ে আমাদের বেশ কয়েকটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। সেগুলো পাস হলে ভাঙনরোধে কাজ শুরু হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন