দেশে কনডেনসেট আমদানির উদ্যোগে বিপিসির ৪ পর্যবেক্ষণ

রাশেদ এইচ চৌধুরী, চট্টগ্রাম ব্যুরো

কাঁচামাল হিসেবে দেশে কনডেনসেট আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেসরকারি পরিশোধনকারী কারখানাগুলোর মাধ্যমে কনডেনসেট থেকে জ্বালানি উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষে এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষা। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বেসরকারি কারখানায় জ্বালানির উপজাত কনডেনসেট পরিশোধন করে উৎপাদিত হবে ডিজেল, পেট্রল, এমটিটি ফার্নেস অয়েল। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মাধ্যমে আমদানি হওয়া এসব কনডেনসেট মজুদের জন্য স্টোরেজ ট্যাংক হিসেবে ব্যবহার করা হবে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েলের (এসএওসিএল) স্টোরেজ

বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, জ্বালানি তেলের চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে দেশের গ্যাস ফিল্ড থেকে কনডেনসেটের প্রাপ্যতা প্রতিনিয়ত কমছে। চলতি বছরে যার পরিমাণ দৈনিক ১০ হাজার ব্যারেলের নিচে নেমেছে। এছাড়া সিলেট গ্যাস ফিল্ডের সিআরইউ ইউনিট চালু হলে বর্তমানে উৎপাদিত কনডেনসেটের অধিকাংশই শুধু সরকারি প্লান্টে ব্যবহার হবে। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি খনিজ সম্পদ বিভাগে বিপিসির পক্ষ থেকে পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে চারটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে চিঠি দেয়া হয়েছে। এতে দেশে কাঁচামাল হিসেবে কনডেনসেট আমদানি করে তার থেকে জ্বালানি তৈরির ব্যাপারে যুক্তি ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। 

অনুমতি পাওয়ার পর জ্বালানির উপজাত কনডেনসেট সরবরাহ পেয়ে উৎপাদন কার্যক্রমে ফিরবে এক বছর বন্ধ থাকা দেশের বেসরকারি ১২টি পরিশোধনকারী কারখানা। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি লিমিটেড, পিএইচপি পেট্রো রিফাইনারি লিমিটেড, সুপার রিফাইনারি লিমিটেড, ইউনিভার্সেল রিফাইনারি (প্রা.) লিমিটেড, অ্যাকোয়া মিনারেল টারপেনটাইন অ্যান্ড সলভেন্টস প্লান্টস লিমিটেড, সিনথেটিক রেজিন প্রডাক্টস (প্রা.) লিমিটেড, জেবি রিফাইনারি লিমিটেড, রূপসা ট্যাংক টার্মিনালস অ্যান্ড রিফাইনারি লিমিটেড, লার্ক পেট্রোলিয়াম কোম্পানি লিমিটেড, গোল্ডেন কনডেনসেট অয়েল রিফাইনারি ফ্যাক্টরি লিমিটেড, চৌধুরী রিফাইনারি লিমিটেড কার্বন হোল্ডিংস লিমিটেড। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যয়বহুল ভারী যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রায় হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকিতে পড়ার পাশাপাশি কারখানাগুলোয় ব্যাংকঋণের চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

আইন অনুযায়ী পরিশোধিত অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির দায়িত্বপ্রাপ্ত একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিপিসি। বিপিসির অধীনে থাকা তিনটি তেল বিপণন কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা যমুনার মূল স্থাপনার ট্যাংকগুলোয় মূলত আমদানি হওয়া বেশির ভাগ পরিশোধিত জ্বালানি তেল সংরক্ষণ সেখান থেকে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে তেল বিপণন কোম্পনিগুলোর স্থাপনায় মজুদ ক্ষমতা রয়েছে লাখ হাজার ৩১৪ টন। তবে ফার্নেস অয়েলসহ মজুদ সক্ষমতা লাখ ৪৯ হাজার ৮৯৪ টন। কিন্তু মেরিন ফুয়েল মজুদ থাকায় কনডেনসেট সংরক্ষণে সক্ষমতা ব্যবহার করা সম্ভব নয়।

এক্ষেত্রে বিপিসি তার পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছে, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল (এসএওসিএল) দুই প্রতিষ্ঠানের মিলে ২০ হাজার ৫০০ টন সক্ষমতার স্টোরেজ ব্যবহার করে ডিজেল রিচেড কনডেনসেট মজুদ করার ভালো সুযোগ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন গ্যাসফিল্ড থেকে সংগ্রহ করা কনডেনসেট মজুদ করতে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের হাজার ৫০০ টন ধারণক্ষমতার একটি ট্যাংক রয়েছে। কিন্তু দেশের গ্যাসফিল্ড থেকে কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধ থাকায় ট্যাংকটিতে এখন ডিজেল রিচেড কনডেনসেট রাখা যাবে। এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল (এসএওসিএল) খুব অল্প পরিসরে ফার্নেস অয়েল বিপণন কার্যক্রম চালালেও প্রতিষ্ঠানটি কর্তৃক জেট - এবং ডিজেল বিপণন বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে এসএওসিএলের নিয়ন্ত্রণে থাকা তিনটি ট্যাংকে মোট ১৫ হাজার টন ডিজেল রিচেড কনডেনসেট রাখার সক্ষমতা আছে।

কনডেনসেট আমদানি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারের সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়েও নিজস্ব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে বিপিসি। এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেল রিচেড কনডেনসেট সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। ফ্র্যাকশন প্লান্টগুলোয় কনডেনসেটের স্পেসিফিকেশন পাওয়া গেলে প্রচলিত জিটুজি টেন্ডার পদ্ধতিতে বিপিসি  থেকে কনডেনসেট আমদানির উদ্যোগ নেয়া হবে।

বিপিসির উপমহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মোরশেদ হোসাইন আজাদ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল হিসেবে কনডেনসেট আমদানি করে বেসরকারি কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন প্লান্টগুলোয় সরবরাহ করার ব্যাপারে আমাদের মাঠ পর্যবেক্ষণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। বেসরকারি প্লান্টগুলো আমদানীকৃত ডিজেল রিচ কনডেনসেট দিয়ে চালু হলে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিপিসিও এতে লাভবান হবে। ইস্টার্ন রিফাইনারি স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল (এসএওসিএল) কনডেনসেট মজুদের জন্য স্টোরেজ ট্যাংক হিসেবে ব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এছাড়া আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমদানি হওয়া কনডেনসেট সংরক্ষণে স্টোর রেন্ট কমিশন পেয়ে বর্তমানে খারাপ পরিস্থিতিতে থাকা স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল (এসএওসিএল) ঘুরে দাঁড়ানোর চমত্কার একটি সুযোগ তৈরি হবে।

এর আগে দেশের গ্যাস ফিল্ড থেকে কনডেনসেট সরবরাহ হ্রাস পেতে থাকায় কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন প্লান্টের অনুকূলে কনডেনসেট সরবরাহের বিষয়ে পর্যালোচনা করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়। কমিটির চাহিদা অনুযায়ী বিপিসি থেকে কনডেনসেট আমদানির অনুমতি দেয়া হলে সংরক্ষণের জন্য এর স্টোরেজ ক্যাপাসিটি, ডিজেল রিচেড কনডেনসেটের আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থা, কাঁচামাল হিসেবে কনডেনসেট আমদানির ক্ষেত্রে বিপিসির সক্ষমতা ফ্র্যাকশনেশন প্লান্টগুলোর উৎপাদিত জ্বালানি কনডেনসেট ব্যবহারের উপযুক্ততা বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চেয়ে বিপিসিকে চিঠি দিয়েছিল জ্বালানি খনিজ সম্পদ বিভাগ।

পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (পিআরএবি) সভাপতি মো. মামুন সালাম প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, বিপিসির মাধ্যমে আমদানি হওয়া ডিজেল রিচ কনডেনসেট ব্যবহার করে মানসম্মত ডিজেল উৎপাদন করবেন বেসরকারি প্লান্টগুলোর উদ্যেক্তারা। তবে এক্ষেত্রে যৌক্তিকভাবে মূল্য নির্ধারণ নিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদন কার্যক্রম গত এক বছর বন্ধ থাকার ফলে এরই মধ্যে ব্যাংক লোন নিয়ে বড় টেনশন তৈরি হয়েছে। এখন ইতিবাচক পদক্ষেপে ঝুঁকিতে পড়া বিনিয়োগের নিরাপত্তা ছাড়াও চাকরি হারানোরা কর্মসংস্থান ফিরে পাবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন