সবাইকে টিকা নেয়ার আহ্বান শিল্পীদের

টিকা নিলে মনের শক্তি বাড়ে

টিকা নিচ্ছেন শাকিব খান ও মাহফুজ আনাম জেমস

মহমারী নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার রুখতে কত ধরনের বিধিনিষেধই না আরোপ করা হচ্ছে। তার পরও থামানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন আসছে আক্রান্ত আর মৃতের খবর। এরই মধ্যে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে করোনার টিকা আনছে সরকার। বিনামূল্যে প্রদান করছে দেশের নাগরিকদের। টিকা নিয়ে শুরুতে জনমনে বিভ্রান্তি থাকলেও এখন পরিস্থিতি বদলেছে। টিকাদান কেন্দ্রগুলোয় প্রতিদিনই বাড়ছে ভিড়। পিছিয়ে নেই দেশের শিল্প বিনোদন জগতের তারকারাও। বেশির ভাগ তারকা টিকা নিয়েছেন। বাকি যারা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার দরুন নিতে পারেননি, তারাও চেষ্টা করছেন টিকা নেয়ার। লিখেছেন মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

দেশের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান টিকা নিয়েছেন এপ্রিল। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতাল থেকে টিকা গ্রহণ করেন তিনি। সিনেমা জগতের আরেক নায়ক জায়েদ খানও টিকা নিয়েছেন। টিকা নিয়েছেন সংগীতশিল্পী জেমস। জেমস শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএসএমএমইউ) থেকে টিকা নিয়েছেন। বাংলা গানের আরেক গুণী শিল্পী রুমানা মোরশেদ কনকচাঁপা স্বামীর সঙ্গে আমেরিকা গিয়ে টিকা নিয়েছেন। তবে টিকা নেয়ার জন্য আমেরিকা যাননি তিনি। ২৩ জুলাই ব্যক্তিগত কাজে আমেরিকা গিয়ে সুযোগ থাকায় টিকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে। সম্প্রতি বণিক বার্তা যোগাযোগ করলে দেশের স্বনামধন্য শিল্পীরা জানান টিকা নিয়ে তাদের ভাবনার কথা।

টিকার আবেদন করেছেন পূর্ণিমা

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন কেন্দ্রে টিকার জন্য আবেদন করেছেন বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা। কিন্তু এখনো তারিখ পাননি। তারিখ পেলে অবশ্যই নিয়ে নেবেন। এর আগে টিকা প্রদানের সর্বনিম্ন বয়সসীমা ৪০ বছর থাকায় আবেদন করতে পারেননি তিনি। বয়সসীমা কমানোর পর কোন কেন্দ্রে কোন কোম্পানির টিকা দেয়া হচ্ছে, এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে অবশেষে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনকে কেন্দ্র হিসেবে নিবন্ধন করেছেন তিনি। দেশের প্রতিটি নাগরিকের টিকা নেয়া উচিত জানিয়ে ভক্তদের উদ্দেশে পূর্ণিমা বলেন, টিকা নিলে আপনি সুরক্ষিত থাকবেন। আপনার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, যা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়বে। বিশ্বের অনেক দেশ টিকা পেতে যুদ্ধ করছে। সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী সুযোগটা এনে দিয়েছেন এবং টিকা সহজ করে দিয়েছেন। সবার উচিত সুযোগ কাজে লাগিয়ে টিকা গ্রহণ করা। এছাড়া ভবিষ্যতে টিকা ছাড়া দেশের বাইরে যেতে চাইলে, এমনকি হজ্ব করতে চাইলেও সমস্যা হবে। সুতরাং সবার উচিত টিকা নেয়া।

প্রথম দিকেই সপরিবারে টিকা নিয়েছেন বৃন্দাবন দাস

শুরুর দিকেই টিকা নিয়েছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা, নাট্যকার পরিচালক বৃন্দাবন দাস। দ্বিতীয় ডোজও নিয়েছেন মাস দুয়েক আগে। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আমার যতটুকু ধারণা, টিকা ছাড়া করোনার হাত থেকে মুক্তির আর কোনো পথ নেই। আমার মনে হয় করোনা চলবেই। করোনা যতদিন দুর্বল না হয়, টিকা নিয়ে নিয়েই যুদ্ধ করে যেতে হবে। শুরুর দিকে টিকা নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার ছেলে বঙ্গবন্ধু চলচ্চিত্রে অভিনয় করছে। এজন্য তাকে নিয়ে ভারতের মহারাষ্ট্রে যেতে হয়েছিল। যেহেতু বাইরে ছোটাছুটি করতে হয়েছে, নিজের পরিবারের সুরক্ষার জন্যই টিকা নিয়েছি। টিকা নিলেও এখনো সামাজিক সুরক্ষা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন তিনি। ভক্তদের উদ্দেশে বৃন্দাবন দাস বলেন, টিকা নিলে মনের শক্তি বাড়ে। আমরা তো ছোটবেলা থেকেই বেশ কয়েকটা টিকা নিই। টিকা নিলে যদি কোনো লাভও না হয়, ক্ষতি তো নেই। সুতরাং সবার উচিত যত দ্রুত সম্ভব টিকা নিয়ে নেয়া। সব কুসংস্কার ঝেড়ে টিকা নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

নিজ এলাকায় টিকা নিয়েছেন জ্যোতিকা জ্যোতি

বাংলা নাটক চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা শুরুর দিকেই টিকা নিয়েছেন। ময়মনসিংহের গৌরীপুর থেকে টিকা নিয়েছেন তিনি। বণিক বার্তাকে জ্যোতি বলেন, টিকা দেয়া যখন শুরু হয় তখন এইজ লিমিট ছিল না। আমার মা-বাবাকে টিকা দেয়ার দরকার ছিল। আমি মা-বাবাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন নিয়ে নিয়েছি। আমার যাওয়া দেখে গৌরীপুরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা খুশি হয়েছিলেন। কেননা তখন মানুষ টিকা নিতে চাইছিল না। জ্যোতি বলেন, তখন গ্রামাঞ্চলে মানুষ বলাবলি করত, করোনা বড়লোকদের হয়। গরিবদের হয় না। গ্রামে করোনা নেই। তাদের একটা বার্তা দেয়ার উদ্দেশ্যেই আমি আমার এলাকায় গিয়ে টিকা নিয়েছি। টিকা নেয়া ছবি ফেসবুকে পোস্টও করেছিলাম। তখন অনেকে ট্রল করেছে যে টিকা নিয়ে ছবি আপলোড না দিলে টিকা কাজ করবে না। তারা বোঝেনি ছবি আপলোড দেয়ার মাধ্যমে আমি জনসাধারণকে টিকা গ্রহণে উৎসাহিত করতে চেয়েছি। অনেক দেশ টিকা পাচ্ছে না। আর বাংলাদেশে সরকার ফ্রি দিচ্ছে। সুযোগ সবার কাজে লাগানো উচিত বলে জানান তিনি।

টিকা নেয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মানেন মীর সাব্বির

ফেব্রুয়ারি আর এপ্রিলে দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা নির্মাতা মীর সাব্বির। বণিক বার্তাকে অভিনেতা বলেন, আমি কোনো ধরনের দ্বিধা ছাড়াই শুরুর দিকে টিকা নিয়েছি। আমার চিন্তা ছিল বিশ্বব্যাপী একটা মহামারী চলছে। তার ভিত্তিতেই টিকা  তৈরি হয়েছে। প্রত্যেকটা টিকা অনেক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে আসছে। ফলে এর ক্ষতিকর দিক থাকলে কোনোভাবেই জনসাধারণকে দেয়া হতো না। এছাড়া বাঁচা-মরা আল্লাহর হাতে। কে কীভাবে মারা যাবে কেউ জানে না। অবস্থায় করোনা প্রতিরোধের যে উপায় বের হয়েছে, সেটা তো গ্রহণ করতে হবে। টিকা নেয়ার পর মীর সাব্বিরেরও শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। মীর সাব্বির ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, টিকা নিলে মনের শক্তি বাড়ে। সবাই টিকার আওতায় এলে আতঙ্ক, ভয়-ভীতি অনেকটা কমে যাবে। টিকা নেয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন অভিনেতা। লোকালয়ে গেলে মাস্ক ব্যবহার করেন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখেন।

টিকা নেয়া সবার দায়িত্ব :  এসআই টুটুল

জনপ্রিয় গায়ক সংগীত পরিচালক এসআই টুটুল টিকা নিয়েছেন। পৃথিবীর বৃহত্তর সংগঠনগুলো পৃথিবীর মানুষকে সুস্থ রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। শত বছর ধরে তারা মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তারা যখন মহামারী এল, দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর টিকা নিয়ে এল। এটাকে তুচ্ছ করে দেখার সুযোগ নেই। এর আগে আমরা বিসিজি, টিটেনাস, হেপাটাইটিসসহ অনেক টিকা নিয়েছি। তখন তো ভাবিনি। এখন কেন এতসব ভাবনা আসছে? আমাদের সবার উচিত দ্রুত টিকা নিয়ে নেয়া। আমিও নিয়েছি কোনো প্রকার দ্বিধা ছাড়াই। এসআই টুটুল মনে করেন, মৃত্যু যেভাবে লেখা আছে সেভাবেই হবে। তিনি বলেন, এখন যে পৃথিবীতে ৭০০ কোটি মানুষ আছে, এদের সবাই কিন্তু মারা যাবে। করোনা থাকুক আর না থাকুক, আমরা সবাই তো মারা যাব। আমি করোনাকে খুব একটা ভয় পাই না। আমি কিন্তু করোনায় মৃত রোগীদের গোসল করাই। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত আছি। এটাকে আমি একটা সত্কর্ম মনে করি। অনেক রোগীর আত্মীয়স্বজন মৃত ব্যক্তির কাছে যান না, আমি পিপিই, মাস্ক গ্লাভস পরে সেইসব মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাই। করোনাকে ভয় না পেলেও আমি টিকা নিয়েছি। এতে আমি নিজে আক্রান্ত হব না, আমার মাধ্যমে কেউ আক্রান্ত হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন