প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রাম টিকা প্রয়োগের হারে শীর্ষ দশে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম

ছবি : বণিক বার্তা

কভিড-১৯ অতিমারী প্রতিরোধে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম চলছে। দেশের সিংহভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে সরকার ইতোমধ্যে বয়সসীমা কমিয়ে আনা, ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা প্রদান কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে। তবে প্রতিকূল যোগাযোগ ব্যবস্থা সত্ত্বেও টিকা প্রয়োগের শতকরা হারে শীর্ষ দশে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম তিন জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান।  

দেশের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, টিকা কার্যক্রম, স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিস (সিজিএস) বিভাগ। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ কভিড পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের ৬৪ জেলার টিকা প্রদানের তালিকায় পেছন থেকে শীর্ষ দশে রয়েছে পার্বত্য তিন জেলা। দেশের অপরাপর জেলাগুলোর তুলনায় জনসংখ্যা কম হওয়ায় পরিমাণের দিক থেকে টিকা কম প্রদান হয়েছে এই তিন জেলায়। কিন্তু জনসংখ্যার প্রতি ১০০ জনের মধ্যে কত জন মানুষ টিকা গ্রহণ করেছে সেই হিসাবে শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে তিন পার্বত্য জেলা। অর্থাৎ টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে পার্বত্য জেলাগুলো ভালো করছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। 

সিজিএসের তথ্য বলছে, ২৩ জুলাই পর্যন্ত প্রতি ১০০ জনগোষ্ঠীর মধ্যে টিকা গ্রহণের হারে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা জেলা। ঢাকায় প্রতি ১০০ জনে ৭ দশমিক ৫ জন শতাংশ মানুষ টিকা গ্রহণ করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা খুলনা জেলা প্রতি ১০০ জনে ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ, তৃতীয় রাজশাহী জেলা ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ, চতুর্থ চট্টগ্রাম জেলা ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ, পঞ্চম রংপুর জেলার ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ মানুষ টিকা গ্রহণ করেছে। 

টিকা গ্রহণের হারে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা রাঙামাটি জেলায় প্রতি ১০০ জনে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, সপ্তম অবস্থানে থাকা বান্দরবান জেলায় ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ, অষ্টম চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ, নবম মাগুরা জেলায় ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং দশম অবস্থানে থাকা খাগড়াছড়ি জেলায় প্রতি ১০০ জনে ৪ দশমিক ১১ শতাংশ মানুষ টিকা গ্রহণ করেছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন,পার্বত্য তিন জেলার আয়তন দেশের অপরাপর জেলাগুলোর তুলনায় বড় হলেও জনসংখ্যা অনেক কম। পার্বত্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় পিছিয়ে। তা সত্ত্বেও কভিডের টিকা গ্রহণের দিক থেকে পার্বত্য জেলাগুলো এগিয়ে রয়েছে। তবে এই ধারা ধরে রাখতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের দূর্গম এলাকাগুলোর টিকা কার্যক্রম আরও বেশি সহজ করতে হবে বলে মনে করছেন পার্বত্য প্রশাসন।  

জানতে চাইলে রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বণিক বার্তাকে বলেন, পার্বত্য জেলাগুলোর শহরাঞ্চলের পরিসর ছোট এবং প্রশাসনের সচেতনতায় টিকা গ্রহণের হার সন্তোষজনক। যার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত এলাকার মানুষ টিকা গ্রহণে এগিয়ে রয়েছে। আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে হাজির হয়েছে পার্বত্য দূর্গম এলাকাগুলো। সিংহভাগ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হলে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন আনতে হবে বলে মনে করেন তিনি। 

খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন ডা. নূপুর কান্তি দাশ মনে করেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের আধিক্য এবং শহর-পৌর শহর এলাকায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা পার্বত্য এলাকায় টিকা গ্রহণে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। প্রত্যন্ত এলাকাগুলো থেকে টিকার নিবন্ধন প্রায় শূণ্য থাকায় টিকা প্রদান কর্মসূচিতে সেবার মান ছিল দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে ভালো। যার কারণে মানুষের মধ্যে টিকা গ্রহণে আগ্রহ ছিল। তবে দূর্গম এলাকাগুলোর মানুষদের নিবন্ধন ও টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে ডোর-টু-ডোর পদ্ধতি ছাড়া উপায় নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।  

তিন পার্বত্য জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, ১ আগষ্ট পর্যন্ত রাঙামাটিতে ৫২ হাজার ৫৯৯ জন প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করেছে এবং ২৪ হাজার জন্য প্রথম ডোজের জন্য নিবন্ধন করেছে। খাগড়াছড়িতে ৬৮ হাজার মানুষ প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করেছে। এই জেলায় প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে ৭ হাজার মানুষ। এছাড়াও বান্দরবান জেলায় ১ আগষ্ট পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৭২১ জন টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ৬ জন সিনোফার্মের প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণ করেছে। এছাড়াও দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করেছে মাত্র ৮৩ জন মানুষ। 

পার্বত্য জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথমদিকে টিকা গ্রহণের হার ভালো হলেও দূর্গম এলাকায় টিকা নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা রয়েছে। দূর্গম এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক দূর্বল হওয়ার পাশাপাশি টিকা কার্ড প্রিন্টিং জনিত জটিলতা রয়েছে। তাছাড়া ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) দিয়ে নিবন্ধনে দূর্গম এলাকায় ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। এজন্য পার্বত্য দূর্গম এলাকার বাসিন্দাদের শহরে বা উপজেলা সদরে এনে টিকার নিবন্ধন করানো ছাড়া পার্বত্য জেলাগুলোকে শতভাগ মানুষকে টিকা প্রদান সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তারা। 

সিজিএসের প্রতিবেদন অনুসারে প্রতি ১০০ জনসংখ্যায় টিকা গ্রহণের হারে পিছিয়ে থাকা জেলাগুলো হলো জামালপুর (১ দশমিক ৭৯ শতাংশ), কুড়িগ্রাম (১ দশমিক ৮৮ শতাংশ), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (১ দশমিক ৯০ শতাংশ), নরসিংদী (১ দশমিক ৯৩ শতাংশ), সুনামগঞ্জ (২ শতাংশ), চাঁদপুর (২ দশমিক শূণ্য ৭ শতাংশ), শেরপুর (২ দশমিক ১২ শতাংশ), নেত্রকোণা (২ দশমিক ১২ শতাংশ), গাইবান্ধা (২ দশমিক ১২ শতাংশ) এবং কিশোরগঞ্জ জেলায় প্রতি ১০০ জনে টিকা গ্রহণের হার ২ দশমিক ১২ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন