অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা

অপেক্ষমাণদের শরীরে দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ শুরু আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকার নির্ধারিত পদ্ধতিতে নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা পাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব লুত্ফর হাসান। গত ২৫ এপ্রিল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত কোভিশিল্ড টিকার প্রথম ডোজ পান তিনি। দুই মাস পর জুনে দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার কথা থাকলেও টিকা সংকটের কারণে তা তিনি পাননি। অবস্থায় আছেন দেশের অনেক মানুষ। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অপেক্ষায় থাকা এমন সোয়া ১৫ লাখ মানুষের শরীরে আজ থেকে দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ শুরু করছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে নভেল করোনাভাইরাসের টিকার জন্য গড়ে ওঠা কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে জাপানে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেয়েছে সরকার। পর্যন্ত সোয়া ১০ লাখ ডোজ দেশে এসেছে। টিকা দিয়েই আজ শুরু হচ্ছে অপেক্ষমাণদের টিকা প্রয়োগ কর্মসূচি। আগামী মঙ্গলবার আরো সোয়া ছয় লাখ ডোজ টিকা পাবে বাংলাদেশ।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু করে সরকার। সে সময় সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছিল। কিন্তু ভারতে সংক্রমণ বেড়ে গেলে টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয় দেশটি। ফলে টিকার সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। যারা প্রথম ডোজের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছিলেন, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব হয়নি। পরে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে দ্বিতীয় ডোজের জন্য টিকার উৎস খুঁজতে শুরু করে সরকার। সময় কোভ্যাক্সের মাধ্যমে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সংস্থান হয়। তবে এবারের টিকা ভারতে নয়, জাপানে উৎপাদিত।

আজ ঢাকা বিভাগের সব জেলায় অপেক্ষমাণদের শরীরে দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ শুরু হলেও সারা দেশে আগামী সপ্তাহ থেকে টিকা দেয়া হবে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে তথ্য জানান করোনার টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (এমএনসি অ্যান্ড এএইচ) ডা. শামসুল হক। তিনি জানান, দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষমাণদের মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠানো হবে। তবে আগে যারা এসএমএস পেয়েছিলেন কিন্তু টিকা পাননি, তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিতে নতুন এসএমএসের প্রয়োজন হবে না।

শুরুতে প্রথম ডোজের পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার ক্ষেত্রে সরকার দুই মাসের ব্যবধান নির্ধারণ করেছিল। তবে টিকার সংকটের কারণে সে নির্ধারিত সময়সীমা ধরে রাখা যায়নি। দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষমাণদের কারো কারো ব্যবধান হয়েছে চার-পাঁচ মাস। এত বেশি সময়ের ব্যবধানে টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম টিকার কার্যকারিতা কতটুকু তা নিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে।

বিষয়ে সরকার গঠিত টিকাবিষয়ক বিশেষ কমিটি ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপের (নাইট্যাগ) সদস্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমদ বণিক বার্তাকে বলেন, প্রথম ডোজ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষমাণদের সময়ের ব্যবধান পাঁচ-ছয় মাসও হচ্ছে। তবে বিষয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সময়ের ব্যবধানে প্রথম ডোজ নষ্ট হয় না। বরং শরীরে প্রয়োগকৃত প্রথম ডোজের কার্যকারিতা সময়ের ব্যবধানে বাড়ে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বণিক বার্তাকে বলেন, সময়ের ব্যবধান বেশি হলে কার্যকারিতা কমে না, যা প্রমাণিত হয়েছে। ফলে যারা দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেবেন তাদের চিন্তার কারণ নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন