প্রণোদনা ঋণ কারা পেয়েছেন এবং সে অর্থ কোন খাতে ব্যয় হয়েছে, তা জানতে ব্যাংকগুলোর কাছে তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাঁচদিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এ তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে। গতকাল ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি’ বিভাগ থেকে দেশের সবক’টি তফসিলি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীর কাছে এ সম্পর্কিত চিঠি পাঠানো হয়। চিঠির সঙ্গে ঋণের তথ্য জমা দেয়ার জন্য একটি নমুনাপত্রও দেয়া হয়েছে।
এদিকে প্রণোদনা ঋণের গন্তব্য খতিয়ে দেখতে প্রস্তুতি সভা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল ভার্চুয়াল মাধ্যমে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান কার্যালয়ের তিনজন নির্বাহী পরিচালকসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয় ও পরিদর্শনের সঙ্গে যুক্ত বিভাগগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভা থেকে দ্রুততম সময়ে ব্যাংকগুলোতে বিশেষ পরিদর্শন চালানোর বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
চিঠি পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ব্যাংকগুলোকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ নেয়া গ্রাহকদের সম্পর্কে তথ্য দিতে বলা হয়েছে। তথ্য পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণের সদ্ব্যবহার হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রণোদনা ঋণে সরকারি কোষাগার থেকে সুদ ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ দেয়া হয়েছিল ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের চলতি মূলধন খাতে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু এ ঋণ নিয়ে কিছু গ্রাহক অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করছেন বলে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সবক’টি পরিদর্শন বিভাগ ও আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বয়ে প্রস্তুতি সভা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু হবে বলে সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন।
নভেল করোনাভাইরাসে সৃষ্ট আর্থিক দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ দিতে এখন পর্যন্ত ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। অর্থের পরিমাপে প্রণোদনা প্যাকেজের আকার ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিশাল অংকের এ প্রণোদনার মধ্যে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকাই ঋণ হিসেবে বিতরণের নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ। ক্ষতিগ্রস্ত সিএসএমই খাতের জন্যও ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।
বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে নেয়া ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ শতাংশ। এ সুদের অর্ধেক বা সাড়ে ৪ শতাংশ পরিশোধ করবে সরকার, বাকি অর্ধেক পরিশোধ করবেন ঋণগ্রহীতা। অন্যদিকে সিএসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের ৫ শতাংশ সুদ সরকার পরিশোধ করবে। এক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করবেন ৪ শতাংশ সুদ। এক বছরের জন্য গ্রাহকরা ঋণের ওপর এ সুদ ভর্তুকি পাবেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ঋণ হিসেবে দেয়া সরকার ঘোষিত এ প্রণোদনার অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা কোম্পানির চলতি মূলধন হিসেবে। কিন্তু চলতি মূলধনে ব্যয় না হয়ে এ অর্থের একটি অংশ চলে যাচ্ছে অনুৎপাদনশীল খাতে। গ্রাহকদের কেউ কেউ প্রণোদনার অর্থে জমি কিনছেন। কেউ ব্যয় করছেন গাড়ি-বাড়ি ক্রয়ে। তবে প্রণোদনার অর্থের বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে পুঁজিবাজারে। কেউবা পুরনো ঋণ সমন্বয়ে ব্যবহার করেছেন প্রণোদনার অর্থ। ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে এর আগে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার চিঠি দিয়ে প্রণোদনা ঋণগ্রহীতাদের তথ্য চাওয়া হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ঘোষিত ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থের অপব্যবহার বেশি হচ্ছে। চলতি মূলধন খাতে ব্যয় করবেন, এমন শর্ত মেনেই ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা সাড়ে ৪ শতাংশ সুদের এ ঋণ নিচ্ছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ, বিভিন্ন ধরনের ইউটিলিটি বিল, শিল্পের কাঁচামাল ক্রয়সহ উৎপাদন সচল রাখতে নৈমিত্তিক ব্যয় চলতি মূলধন হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে কিছু গ্রাহক ঋণের একটি অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে বড় উল্লম্ফনের পেছনে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ বিনিয়োগের প্রমাণও পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের প্রণোদনার পাশাপাশি সিএসএমই খাতের জন্য ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজেরও অপব্যবহার হচ্ছে।