ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও দাতা সদস্যদের দ্বন্দ্বে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার গঙ্গামণ্ডল মডেল কলেজের সার্বিক কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ একই সময়ে অন্য দুটি কলেজে শিক্ষকতা করেন বলেও অভিযোগ। এসব বিষয়ে কলেজটির ১৮ জন দাতা সদস্য কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে গত ১৪ জুন লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু দেড় মাসেও অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়নি। তদন্তে ধীরগতির কারণে অচলাবস্থা নিরসন না হওয়ায় অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে দেবিদ্বার উপজেলার চান্দপুর গ্রামে গঙ্গামণ্ডল মডেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কলেজটি প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। ২০১৮ সালে তার মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন প্রভাষক আবদুর রশিদ। পরে একই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি সভাপতির স্বাক্ষর ব্যতীত সদস্যদের স্বাক্ষরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে আসেন বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. পলাশ ভূঁইয়া।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয় এ কলেজে কর্মরত থেকে একই সময়ে উপজেলার মীর আবদুল গফুর ডিগ্রি কলেজ ও দেবিদ্বার দ্য রয়েল ইন্টারন্যাশনাল কলেজে চাকরি করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রভাষক মো. পলাশ ভূঁইয়াকে কলেজ কমিটির সিদ্ধান্তে ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই বরখাস্ত করা হয়। কলেজ কমিটির সাবেক সভাপতি ও আজীবন দাতা সদস্য অভিযোগকারী ফারুক আহমেদ মৃধা জানান, ‘এলাকার ১৯ জন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি কলেজটি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৫৪ শতক জমি ও নগদ ৩০ লাখ ৭০ হাজার টাকা দান করেন। এর প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত একেএম হাবিবউল্লাহ। পলাশ ভূঁইয়া অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে আছেন। তিনি গোপনে কলেজটির একটি কমিটি কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড থেকে অনুমোদন করিয়ে নেন। তিনি কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত একেএম হাবিবউল্লাহর নাম বাদ দিয়ে মোহাম্মদ আলী সরকার ও আবুল কালাম আজাদের নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছেন।’
এ ব্যাপারে কলেজের বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি মফিজুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘তাদের অভিযোগ সঠিক নয়। বোর্ডে যেসব বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে কলেজটির অচলাবস্থার নিরসন হোক এটা আমি চাই।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে মো. পলাশ ভূঁইয়া বলেন, ‘তিনি ২০১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এ কলেজের বৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। বরখাস্ত করার কোনো চিঠি তাকে দেয়া হয়নি। শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র দেখে বর্তমান কমিটির অনুমোদন দিয়েছে। কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে একেএম হাবিবউল্লাহর নামে কোনো কাগজপত্র পাইনি। মোহাম্মদ আলী সরকার ও আবুল কালাম আজাদ সরকার দুজনের নামে কাগজপত্র পেয়ে তাদের প্রতিষ্ঠাতা উল্লেখ করে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে।’
অন্য দুই কলেজে একই সময়ে শিক্ষকতা করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গঙ্গামণ্ডল মডেল কলেজটি এমপিওভুক্ত নয়, সামান্য বেতন পাই। তবে অন্য কলেজে শিক্ষকতার বিষয়ে অভিযোগের কারণে গত জুনে অব্যাহতি নিয়েছি।’
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো. জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, ‘গঙ্গামণ্ডল মডেল কলেজের ১৮ জন দাতা ও আজীবন দাতা সদস্যের স্বাক্ষরিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গত ২০ জুন জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কুমিল্লা জেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল মজিদ বলেন, ‘করোনার কারণে সরকারিভাবে এখন কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’