কভিডে নেয়া পরিবর্তনগুলো স্থায়ী রূপ পাচ্ছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড সংক্রমণের পর ব্যবসায়িক কৌশলে পরিবর্তন আনে পিঞ্চ স্পাইস মার্কেট ছবি: এপি

মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে বদলেছে মানুষের জীবনযাপনের ধরন। আগের মতো অনেক কিছুই আর এখন কল্পনায় আনা যায় না। কতদিনে পৃথিবী থেকে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দূর হবে তার নিশ্চয়তা নেই। ফলে আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চিন্তা বাদ দিয়ে এখন মহামারীর সঙ্গেই জীবনকে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করেছে মানুষ।

কেবল জীবনযাপনেই নয়, পরিবর্তন এসেছে ব্যবসা প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ধরনেও। যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকির পিঞ্চ স্পাইস মার্কেটের বাইরের ভেন্ডিং মেশিনগুলো থেকে এখন বিভিন্ন ধরনের ঔষধি মসলা সিজনিং মসলার ছোট প্যাকেট বের হয়। মনে হতে পারে যে এটা হয়তো নতুন বিপণন কৌশল। আদতে কভিড-১৯ মহামারী থেকে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার একটা কৌশল মাত্র।

কেনটাকির লুইসভিলের সহমালিক মেগান থমাস তার অংশীদার থমাস ম্যাকগি বলেন, সাধারণ মানুষ এখন ঘরে বসে আরো বেশি রান্না করছেন এবং সেই সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসাগুলোকে সহায়তাও করতে চাইছেন। ফলে অনলাইনে অর্ডারের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

থমাস বলেন, ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে ক্রেতারা যোগাযোগবিহীন উপায়ে কেনাকাটা করতে পারছেন। তিনি বলেন, আমরা চাই পদ্ধতি বহাল রাখতে। এখন আমরা আরো নতুন নতুন স্থানে ভেন্ডিং মেশিন বসাতে চাই।

এভাবে মহামারী অসংখ্য ছোট ব্যবসার ধরন পাল্টে দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি যেটা দেখা যাচ্ছে সেটা হলো, অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানই বাড়ি থেকে কাজ পরিচালনা করছে। রেস্তোরাঁ খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্ডার নিচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের অনেকেই পরিবর্তনে খুশি। তেমনই একজন অ্যাশলি গির। চার বছর আগে ফুল নকশার ব্যবসা শুরু করেন তিনি। কিন্তু তার কোনো দোকান ছিল না। সেজন্য তিনি কেবল বিভিন্ন বিয়ে বা অনুষ্ঠানের ভেনুর জন্য ফুলের সজ্জা করতেন। গত বছর মহামারী শুরু হলে তার গোটা ব্যবসাই থমকে যায়। বছরজুড়ে যেসব অনুষ্ঠানের জন্য বুকিং ছিল সেগুলো বাতিল হয়ে যায়। অবসর সময়ে তার করা বিভিন্ন নকশার ছবি তিনি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট শুরু করেন। এছাড়া একরকম বেকার সময়ই কাটাচ্ছিলেন তিনি।

এমন সময় তার এক প্রতিবেশী সপ্তাহে একবার তার বাড়িতে ফুল সাজিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। গির বলেন, তিনি বুঝতে পারেন যে ওই প্রতিবেশী তাকে সাহায্য উৎসাহ দিতে চাইছেন। এরপর গিরকে আর থেমে থাকতে হয়নি। আরো অনেকের কাছ থেকে অর্ডার আসতে থাকে। বিশেষ করে মা দিবস সামনে রেখে বেশকিছু অর্ডার পান তিনি। গ্রাহকরা তার কাজ খুব প্রশংসাও করছিলেন। ফলে ঘুরে দাঁড়ান ব্যবসায়ী। ভবিষ্যতেও তিনি সব ধরনের কাজ করতে চান। কেবল বিয়ে বা অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক কাজ করতে চান না বলেও জানালেন।

বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই এখন পরিস্থিতির সঙ্গে তাদের ব্যবসা পরিচালনার ধারাকে বদলে নিয়েছেন। মন্দার সময়ের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ঠিক করেছেন, সে অনুযায়ী ক্রেতা চাহিদা তৈরি করেছেন। পরিবর্তন এনেছেন সেবাতেও। তবে সবই ঠেকে শিখতে হয়েছে। কারণ এমন মহামারীর অভিজ্ঞতা আসলে কারো ছিল না। মহামারীই তাদের ব্যবসা পরিচালনার পদ্ধতি পরিবর্তনে বাধ্য করেছে।

মহামারীর আগে সাইকোথেরাপিস্ট জোনাথন আলপার্ট তার ম্যানহাটনের অফিসে বসেই কাজ করতেন। কভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে টেলিফোন ভিডিওকলে থেরাপি দিতে শুরু করেন তিনি। সাধারণত গ্রাহকের সঙ্গে একান্তে বসে থেরাপি দিতে হয়। কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পরও তার গ্রাহকরা আর অফিসে এসে সেশন নিতে চাইছেন না। তারা ভিডিও কলেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। প্রসঙ্গে আলপার্ট বলেন, বিশেষ প্রয়োজন হিসেবে যে পদ্ধতি শুরু হয়েছিল সেটিই এখন পছন্দ করতে শুরু করেছে মানুষ। ফলে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে থেরাপির পদ্ধতিতে।

একইভাবে রেস্তোরাঁগুলোর ক্রেতারাও হোম ডেলিভারিতে খাবার নিতে পছন্দ করছেন। বাড়িতে বসেই পছন্দের রেস্তোরাঁর খাবার খেতে পেরে খুশি তারা। ফলে কোথাও বিধিনিষেধের কড়াকড়ি উঠে গেলেও ভোক্তা চাহিদা মাথায় রেখে অনলাইন ডেলিভারির দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হচ্ছে। আর এভাবেই মহামারী পাল্টে দিচ্ছে বিশ্বজুড়ে ব্যবসার পুরনো ধরন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন