কারখানা খোলার ঘোষণা

মহাসড়কে ঢাকামুখী শিল্প শ্রমিকের ঢল

বণিক বার্তা ডেস্ক

শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার খবরে জেলা শহরগুলো থেকে ঢাকার দিকে রওনা দিয়েছে অসংখ্য শ্রমিক। রাজধানীমুখী মহাসড়ক ও ফেরিঘাটগুলোয় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। মাওয়া ঘাট থেকে তোলা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

মহামারীর সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে এখন চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ চালু রয়েছে। কলকারখানা বন্ধ থাকায় ঈদের আগে বিধিনিষেধ শিথিলের সময় শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা ঢাকার বাইরে নিজ নিজ বাসস্থলে চলে গিয়েছিলেন। সরকার রফতানিমুখী কারখানাগুলো খোলার ঘোষণা দেয়ায় আবার ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন তারা।

যদিও রফতানিমুখী শিল্প মালিকরা বলছেন, বিধিনিষেধ চলাকালে কোনো শ্রমিক কর্মস্থলে ফিরতে না পারলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান গতকাল বণিক বার্তাকে বলেন, লকডাউন পুরোপুরি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত গ্রামে অবস্থানরত কোনো শ্রমিক-কর্মচারী কারখানায় কাজে যোগদান করতে না পারলে তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে না।

এছাড়া আমাদের অনুরোধের ভিত্তিতে শ্রমিকদের ঢাকায় ফেরার সুবিধার্থে আগামীকাল (আজ) রাত পর্যন্ত গণপরিবহন চালু রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব জেলা প্রশাসককে মৌখিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।

সময় তিনি বিধিনিষেধ চলাকালে কারখানার আশপাশে অবস্থানরত শ্রমিকদের নিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংগঠনের সদস্য পোশাক শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে গতকাল প্রকাশিত এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক সংশ্লিষ্টদের কাজে যোগদানের সুবিধার্থে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত গণপরিবহন চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বিপুলসংখ্যক শ্রমিক একযোগে রওনা দেয়ায় গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানের মহাসড়কে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নামে। কোনো কোনো স্থানে যানবাহন না পেয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভও করেছেন। বণিক বার্তার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

বরিশাল: শিল্প-কারখানা খোলার ঘোষণায় গতকাল ঢাকায় রওনা দেন ঈদুল আজহায় বাড়িতে আসা বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা। মহাসড়কে ঢাকামুখী এসব শ্রমিকের রীতিমতো ঢল নামে। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধে অভ্যন্তরীণ দূরপাল্লার রুটের যানবাহন বন্ধ থাকায় তারা বিপাকে পড়েন। বাধ্য হয়ে ট্রাক, পিকআপ, নসিমন, করিমন, মোটরসাইকেল, থ্রি হুইলার এমনকি ভ্যানে চড়েও রাজধানীর দিকে ছুটতে থাকেন তারা। তাদের যাত্রাকালীন দুর্ভোগকে আরো বাড়িয়ে তোলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া।

সকালে বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে কয়েক হাজার মানুষ ঢাকায় যাওয়ার জন্য জড়ো হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। তাদের বেশির ভাগই গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিক। যানবাহন না পেয়ে শ্রমিকরা সকাল ১০টা নাগাদ মহাসড়কে পণ্যবাহী যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে নগরীর বিমানবন্দর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করে। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পরে নগরীর বাস টার্মিনাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় বলে বরিশাল এয়ারপোর্ট থানার ওসি কমলেশ চন্দ্র হালদার জানিয়েছেন।

রাজবাড়ী: জেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে গতকাল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ এসে জড়ো হয়। বিকালের মধ্যেই গোটা ফেরিঘাট এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। ব্যাপক জনসমাগমের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হয়েছে চরম মাত্রায়।

দৌলতদিয়া ঘাটে গতকাল ভোর থেকেই যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে লোকসমাগম। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গতকাল ছোট যানবাহনের মারাত্মক চাপ পড়ে। বৃষ্টির কারণে রাজধানীমুখী এসব যাত্রীর দুর্ভোগও ছিল চোখে পড়ার মতো।

চাপ সামলাতে গতকাল ঘাটে ফেরির সংখ্যা বাড়াতে বাধ্য হয় বিআইডব্লিউটিসি। সংস্থাটির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেন, বর্তমানে যাত্রী যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরির সংখ্যা আটটি থেকে বাড়িয়ে ১৫টি করা হয়েছে। নদী পারাপার হতে আসা যানবাহনগুলো সরাসরি ফেরিতে উঠছে। তবে স্রোতের মতো যাত্রী আসায় সাধারণ মানুষকে ফেরিতে ওঠা থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না।

ভোলা: শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার খবরে ভোলার ইলিশা-লক্ষ্মীপুর নৌরুটে ফেরিতে যাত্রী পারাপার বেড়ে যায় গতকাল। ফেরিতে পারাপার হওয়া যাত্রীদের অধিকাংশই পোশাক কারখানার শ্রমিক। সকাল থেকেই ঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। বৃষ্টির মধ্যে প্রচুর ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের। কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ পুলিশকে ঘাটে যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের ব্যাপক প্রয়াস চালাতে দেখা যায়। তবে যাত্রীচাপে তাদের সে চেষ্টা খুব একটা সফল হয়নি। বিষয়ে পুলিশের ইলিশা ফাঁড়ির ইনচার্জ আনিসুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আমরা শতভাগ চেষ্টা করেছি। কিন্তু যাত্রীদের চাপে সম্ভব হয়নি।

নাটোর: সকাল থেকেই নাটোর বাস টার্মিনাল, বনপাড়া বাইপাস, রাজ্জাক মোড়সহ জেলার বিভিন্ন টার্মিনালে হাজার হাজার শ্রমিক ভিড় করেন। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধে কোনো যানবাহন চলাচল না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। পণ্যবাহী ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ছোট ছোট যানবাহনে চড়ে রাজধানীতে ফিরেছে অনেক মানুষ। ভিড়ের সুযোগে যানবাহনের চালকদেরও বাড়তি ভাড়া দাবি করতে দেখা যায়।

সিরাজগঞ্জ: সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির তথ্য প্রকাশের পর শুক্রবার থেকেই প্রচুর মানুষ সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। রাতেই ট্রাক মাইক্রোবাসে করে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা দেয় অনেকে। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরোটা সময় সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সয়দাবাদ, মুলিবাড়ী, কড্ডার মোড়, নলকা হাটিকুমরুল মোড় এলাকায় অসংখ্য মানুষের ভিড় দেখা যায়। জনসমাগমে ব্যাপক মাত্রায় স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হতে দেখা গিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে গাড়ির প্রচুর চাপ রয়েছে। হাজার হাজার মানুষ ঢাকার পথে ছুটছে। বেশির ভাগ যাত্রীই ট্রাক, পিকআপ মাইক্রোবাসে চলাচল করছে। দু-একটি রিজার্ভ বাস সরকারি প্রকল্পের কিছু বাসও চলাচল করছে।

রংপুর: গতকাল সকালে রংপুরের মডার্ন মোড়ে ঢাকামুখী শ্রমিকের ঢল নামে। সময় ঢাকায় পৌঁছার সুযোগ না পেয়ে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। মহাসড়ক অবরোধ করে সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ করে দেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। প্রায় ঘণ্টা তারা সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন। সময় স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় তাদের ঢাকায় পৌঁছে দিতে হবে, নয়তো কারখানা বন্ধ রাখতে হবে বলে দাবি তোলেন তারা।

ঝিনাইদহ: গতকাল সকাল থেকেই ঝিনাইদহ শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ঢাকাগামী যাত্রীদের ভিড় শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে তাকে। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ঢাকামুখী শ্রমিকরা বিপাকে পড়েন। কাজে যোগ দিতে ইজিবাইক, মাহেন্দ্রসহ ছোট ছোট যানে ঢাকায় রওনা দেন অনেকেই। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গিয়ে তাদের ছুটতে হচ্ছে নতুন বাহনের সন্ধানে। যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপে যানবাহন চালকরা ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ঢাকামুখী শ্রমিকরা।

ময়মনসিংহ: জেলার স্থানীয় শ্রমিকদের গতকাল সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে ঢাকায় রওনা দিতে দেখা যায়। সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের ভিড় ছিল অনেক বেশি। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরো বাড়তে দেখা যায়। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ট্রাকে চড়ে গাদাগাদি করে ঢাকায় রওনা দেন অনেক শ্রমিক। বৃষ্টির কারণে সময় তাদের দুর্ভোগও বেড়ে যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন