রেমিট্যান্স প্রণোদনার আরো ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রবাসীদের নগদ প্রণোদনা দিতে আরো হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে সরকার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসের রেমিট্যান্স প্রণোদনা বাবদ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে সম্প্রতি ছাড় করা হয়েছে। অর্থ ছাড় করা হয়েছে আটটি শর্তে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো উৎসাহিত করতে গত ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রতি ১০০ টাকায় দুই টাকা করে নগদ প্রণোদনা পাচ্ছেন প্রবাসীর স্বজনরা। প্রণোদনা দিতে গত অর্থবছরে মূল বাজেটে হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে হাজার ৮০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। মোট চার কিস্তিতে অর্থ ছাড়া করা হয়। এর আগের অর্থবছরে হাজার ৬০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে আরো বেশি করে রেমিট্যান্স আনতে চায় সরকার। এজন্য চলতি অর্থবছরে বাজেটে রেমিট্যান্স খাতে প্রণোদনার পরিমাণ বাড়িয়ে হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

রেমিট্যান্স প্রণোদনার চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় নিয়ে সম্প্রতি একটি চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণের বিপরীতে প্রণোদনা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রেমিট্যান্স প্রণোদনা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে ছাড় করা হলো। তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত প্রণোদনা দাবির বিপরীতে সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মতিঝিল অফিসে রক্ষিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসাবে ক্রেডিট করার মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রণোদনার অর্থ পরিশোধ করবে। তবে এক্ষেত্রে আটটি শর্ত পরিপালন করতে হবে।

এগুলো হলো ছাড়কৃত অর্থ দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অনুকূলে খাতভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রণোদনার অর্থ পরিশোধ করতে হবে। দাবি পরিশোধের পর নিরীক্ষায় প্রাপ্য অর্থের চেয়ে বেশি পরিশোধিত হয়েছে মর্মে প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট অর্থ আদায়পূর্বক গ্রহীতার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে অর্থ বিভাগকে অবহিত করতে হবে। অর্থ ব্যয়ে প্রচলিত সব আর্থিক বিধিবিধান অনুশাসনাবলি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। চলতি অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স প্রণোদনা পরিশোধে বিদ্যমান পদ্ধতি এবং এর প্রভাব সম্পর্কে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে। কেবল প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ সংযুক্ত তহবিল থেকে উত্তোলন করা যাবে। রেমিট্যান্স প্রণোদনা পরিশোধে ছাড়কৃত অর্থের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং অর্থের যাতে কোনো ব্যত্যয় না ঘটে, সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারীকৃত বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনা দেয়ার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।

এদিকে প্রণোদনা দেয়াতে করোনা মহামারীর মধ্যেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে বড় উল্লম্ফন নিয়ে শেষ হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা লাখ ১০ হাজার ৬১০ কোটি টাকার বেশি। এর আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল হাজার ৮২০ কোটি ডলার। হিসেবে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬৫৭ কোটি ডলার বা ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ। একক অর্থবছরে এর আগে কখনো এত রেমিট্যান্স আসেনি। এক অর্থবছরে এত প্রবৃদ্ধি কখনো হয়নি।

বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, রেমিট্যান্সে শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার ফলে রেমিট্যান্স অনেক বেড়েছে। রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে দেশের রিজার্ভও অনন্য উচ্চতায় রয়েছে। সুবিধা অব্যাহত থাকলে রেমিট্যান্স আরো বাড়বে।

এদিকে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আরো বাড়াতে স্বল্প আয়ের প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ফি মওকুফ করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে ফি কমানোর প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল, তাই প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৫০০ মার্কিন ডলার কিংবা এর চেয়ে কম রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের প্রচলিত শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি অতিরিক্ত আরো শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার প্রস্তাব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রস্তাবটি বাস্তবায়নে সরকার পর্যালোচনা করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন