২০২০ সালজুড়ে করোনার কালো ছায়ায় আচ্ছন্ন ছিল দেশের অর্থনীতি। নেতিবাচক ধারায় ছিল আমদানি-রফতানিসহ অভ্যন্তরীণ ভোগ, উৎপাদন ও বিপণন। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিও ছিল ইতিহাসের সর্বনিম্নে। অর্থনীতিকে টেনে তুলতে ঋণ হিসেবে লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ব্যাংক খাতের জন্যও ছিল নজিরবিহীন নীতিছাড়। বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ ও দুর্যোগের মধ্যেও বিদায়ী বছর ভালো করেছে দেশের বেশকিছু ব্যাংক। আবার নীতিছাড়ের ছড়াছড়ির মধ্যেও অনেক ব্যাংক নিজের অবস্থান হারিয়েছে।
গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর র্যাংকিং করেছে বণিক বার্তা। ২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছরই নিয়মিতভাবে এ র্যাংকিং প্রকাশ করা হচ্ছে। বিভিন্ন করপোরেট রিসার্চ টিমের সহায়তায় নবমবারের মতো এটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে লংকাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এবারের র্যাংকিংয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ১৪টির প্রাপ্ত স্কোর বেড়েছে। কমেছে ১৬টি ব্যাংকের। গত বছরের র্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানে থাকা ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড এবার দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছে। শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। অন্যদিকে প্রত্যাশার চেয়েও ভালো করে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড।
গোটা বিশ্বেই একটি ব্যাংকের সক্ষমতা, পারফরম্যান্স ও প্রকৃত পরিস্থিতির চিত্র বিশ্লেষণে নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড বা নির্দেশক ব্যবহার করা হয়। এগুলো হচ্ছে সম্পদের বিপরীতে আয় (রিটার্ন অন অ্যাসেট বা আরওএ), শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানার বিপরীতে আয় (রিটার্ন অন ইকুইটি বা আরওই), শ্রেণীকৃত ঋণ (এনপিএল) অনুপাত, কর-পরবর্তী নিট মুনাফা, শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস), মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত (ক্যাপিটাল অ্যাডেকোয়েসি রেশিও বা সিএআর) ও শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফা (ওপিবি)। আগের বছরগুলোয় শেয়ারপ্রতি আয়কে (ইপিএস) সেরা ব্যাংক নির্ধারণের ক্ষেত্রে অন্যতম নির্দেশক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তবে গত বছর থেকেই সেরা ব্যাংক নির্ধারণের ক্ষেত্রে নির্দেশক হিসেবে ইপিএসের পরিবর্তে কর-পরবর্তী নিট মুনাফাকে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। মূলত স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করার কারণে ব্যাংকের নিট মুনাফায় হেরফের না হলেও ইপিএস কমে যায়। এ কারণেই ইপিএসের পরিবর্তে নিট মুনাফাকে হিসাব করা হয়েছে।
লংকাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের রিসার্চ অ্যানালিস্ট মো. মোস্তফা নোমান এ র্যাংকিং তৈরি করার কাজে যুক্ত ছিলেন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এ র্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমরা দেশের ব্যাংক খাতের আর্থিক স্বাস্থ্য পরিমাপ করি। বিগত বছরগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, এবারো ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্সে খুব বেশি হেরফের হয়নি। তবে একটি দিক বিশেষভাবে লক্ষণীয়, করোনাকালে দেয়া সঞ্চিতি সুবিধা ও ব্যবসায়িক মন্দার কারণে অধিকাংশ ব্যাংকের সঞ্চিতি সংরক্ষণের হার বেড়েছে। একই সঙ্গে কমেছে প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে সুদ আদায়ের পরিমাণ। এ অবস্থা ব্যাংকগুলোয় এক প্রকার নাজুক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তার ওপর ঋণ ও আমানতের সুদহার নয়-ছয় শতাংশ বাস্তবায়নের প্রভাবে অধিকাংশ ব্যাংকের স্প্রেড সংকুচিত হয়েছে। আর এ নীতিতে দ্রুতই পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না। ফলে সামনের দিনগুলোয় এ নিয়ে ব্যাংকগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।
সাত নির্দেশকের ভিত্তিতে তৈরি এ র্যাংকিংয়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড ও দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড। এর আগে ২০১৯ সালের পারফরম্যান্স নিয়ে গত বছর করা র্যাংকিংয়েও ডাচ্-বাংলা ও ইবিএল শীর্ষ তিনে ছিল। আগেরবারের অষ্টম অবস্থান থেকে এবার তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে সিটি ব্যাংক। তবে নিট মুনাফা ও এনএভিপিএস-বহির্ভূত তালিকায় এবারের র্যাংকিংয়ে শীর্ষ তিনের মধ্যে রয়েছে ইবিএল, ডাচ্-বাংলা ও সিটি ব্যাংক। গত বছর প্রকাশিত র্যাংকিংয়ে ইবিএল ও ডাচ্-বাংলার সঙ্গে প্রিমিয়ার ব্যাংকও ছিল।
এবারের র্যাংকিংয়ে শীর্ষ দশে জায়গা করে নেয়া অন্য ব্যাংকগুলো হচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, যমুনা ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড ও ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড।
দুই বছরের র্যাংকিং উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গতবারের তুলনায় এবারের র্যাংকিংয়ে সার্বিক স্কোর বেড়েছে ১৪টি ব্যাংকের। এগুলো হলো ডাচ্-বাংলা, ইবিএল, সিটি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, এবি ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।
অন্যদিকে স্কোর হ্রাস পাওয়া ১৬ ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), এনসিসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক (এনবিএল), শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, আইএফআইসি ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেড।
সাতটি সূচকের মধ্যে ছয়টিতেই এবার প্রথম স্থান অর্জন করেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। ফলে ২০২০ সালে দেশের সেরা ব্যাংকের সার্বিক টেবিলে এক নম্বর স্থান ফিরে পেয়েছে ব্যাংকটি। ২০১৮ সালে শীর্ষস্থানে থাকা ব্যাংকটি ২০১৯ সালে ইস্টার্ন ব্যাংকের কাছে অবস্থান হারিয়েছিল। শীর্ষস্থান ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি এবার ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের স্কোরও বেড়েছে। ৭০-এর স্কেলে গতবারের র্যাংকিংয়ে ব্যাংকটির স্কোর ছিল ৩৩ দশমিক ৭৪। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ৩৩-এ। তবে শাখাপ্রতি মুনাফার (ওপিবি) দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। এক্ষেত্রে ব্যাংকটির অবস্থান অষ্টম।
এ কারণে নিট মুনাফা ও এনএভিপিএস বাদ দিয়ে করা ৫০-এর স্কেলভিত্তিক র্যাংকিংয়ে ডাচ্-বাংলার অবস্থান দ্বিতীয়। এক্ষেত্রে ব্যাংকটির স্কোর ২৭ দশমিক ৭৩। তবে এক্ষেত্রেও গতবারের তুলনায় স্কোর বেড়েছে ডাচ্-বাংলার। আগেরবারের র্যাংকিংয়ে এদিক থেকে ব্যাংকটির স্কোর ছিল ৫০-এ ২৩ দশমিক ৯১।
৭০-এর স্কেলে গতবারের শীর্ষ ব্যাংক ইস্টার্ন ব্যাংক এবার দ্বিতীয় স্থানে নেমেছে। যদিও ব্যাংকটির স্কোর গতবারের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। ২০২০ সালের পারফরম্যান্স ও সক্ষমতার বিচারে ব্যাংকটির সার্বিক স্কোর ৩৫ দশমিক ৫৪। আগেরবার তা ছিল ৩৫ দশমিক ২৫। তবে নিট মুনাফা ও এনএভিপিএস বাদ দিয়ে করা র্যাংকিংয়ে ৫০-এর স্কেলে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ইস্টার্ন ব্যাংক। এক্ষেত্রে আগেরবার ব্যাংকটির স্কোর ছিল ২৮ দশমিক শূন্য ৬। এবার তা দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৭৩-এ।
ইস্টার্ন ব্যাংকের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হলো শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফা। দেশব্যাপী মাত্র ৮৫টি শাখার মাধ্যমে ৭৮৯ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ব্যাংকটি। শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড। এবি ব্যাংক রয়েছে তৃতীয় স্থানে।
২০১৬ সাল-পরবর্তী সময়ে দ্য সিটি ব্যাংক তার গৌরব ফিরে পেতে শুরু করেছে। ২০১৯ সালের র্যাংকিংয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয়া শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকটি এবার পাঁচ ধাপ উন্নতি করেছে। সাতটি সূচকে দেশসেরা ব্যাংকের তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে সিটি ব্যাংক। পাঁচটি নির্দেশকের ভিত্তিতে করা তালিকায়ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্যাংকটি। আগেরবার দুদিক থেকেই অষ্টম স্থানে ছিল দ্য সিটি ব্যাংক।
২০২০ সালে আরওএ, আরওই, নিট মুনাফা ও শাখাপ্রতি মুনাফায় ভালো করেছে সিটি ব্যাংক। কিন্তু খারাপ করেছে খেলাপি ঋণের হার, এনএভিপিএস ও সিএআরে। সামগ্রিক সূচকে ব্যাংকটির প্রাপ্ত স্কোর ৩০ দশমিক ৩৭। আগের বছর ব্যাংকটির স্কোর ছিল ২৫ দশমিক ৯৮। ৫০-এর স্কেলে সিটি ব্যাংকের স্কোর ২৩ দশমিক ১০।
ডাচ্-বাংলা ও সিটি ব্যাংকের উত্থান হলেও বড় পতন হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের। ৭০ ও ৫০—দুটি স্কেলেই নিজের অবস্থান হারিয়েছে ব্যাংকটি। মূলত দুই বছর ধরে র্যাংকিংয়ে অবনমনের পথে হাঁটছে ব্র্যাক ব্যাংক। সাত সূচকভিত্তিক র্যাংকিংয়ে আগেরবার তৃতীয় স্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংক এবার চতুর্থ স্থানে নেমেছে। পাঁচটি সূচকের র্যাংকিংয়ে ব্যাংকটির এবারের অবস্থান অষ্টম। র্যাংকিংয়ে অবস্থান হারানোর পাশাপাশি স্কোরও কমেছে বাজার মূলধনে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ব্র্যাক ব্যাংকের।
আগেরবার সাতটি সূচকে ব্র্যাক ব্যাংকের সার্বিক স্কোর ছিল ২৯ দশমিক ৪০। কিন্তু এবারের র্যাংকিংয়ে ব্যাংকটির স্কোর নেমে এসেছে ২৭ দশমিক ৯৮-এ। পাঁচ সূচকের সার্বিক স্কোর আগেরবারের ২১ দশমিক ৫৩ থেকে কমে এবার দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ২৯-এ। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য, নিট মুনাফা, আরওএ এবং সিএআরে কিছুটা ভালো অবস্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের পারফরম্যান্স দুর্বল হয়েছে মূলত আরওই, খেলাপি ঋণের হার ও শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফার দিক থেকে।
এবারের র্যাংকিংয়ে বড় ধরনের উন্নতি করেছে যমুনা ব্যাংক লিমিটেড। গত বছর প্রকাশিত র্যাংকিংয়ে ব্যাংকটির অবস্থান ছিল নবম। এবার ৭০ ও ৫০—দুই স্কেলেই র্যাংকিংয়ে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে যমুনা ব্যাংক। দুটি স্কেলেই এবার ব্যাংকটির প্রাপ্ত নম্বরও বেড়েছে। সাতটি সূচকের ভিত্তিতে এবার যমুনা ব্যাংক পেয়েছে ২৬ দশমিক ৯৬ নম্বর। আগেরবার এটি ছিল ২৫ দশমিক ৭৮। আর পাঁচ সূচকের ভিত্তিতে ব্যাংকটির প্রাপ্ত স্কোর ২১ দশমিক ১০। যমুনা ব্যাংকের শক্তির জায়গা হলো আরওএ, আরওই, সিএআর ও খেলাপি ঋণের নিম্নহার। অন্যদিকে দুর্বলতা হলো শাখাপ্রতি কম আয়, নিট মুনাফা ও এনএভিপিএস।
র্যাংকিংয়ে বড় ধরনের উন্নতির বিষয়ে যমুনা ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী মির্জা ইলিয়াছ উদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, যমুনা ব্যাংকের ২৪ হাজার কোটি টাকার সম্পদের মধ্যে ঋণ মাত্র ১৬ হাজার কোটি টাকা। সরকারি বিভিন্ন ট্রেজারি বিল-বন্ডে আমাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ আছে। ঋণের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনায় যমুনা ব্যাংকের ভিত অনেক শক্তিশালী হয়েছে। বিতরণকৃত ঋণের সুদ আয়ের চেয়ে আমাদের ট্রেজারি খাতের আয় বেশি। ব্যাংক খাতের দুর্যোগময় পরিস্থিতিতেও যমুনা ব্যাংক খেলাপি ঋণের হার নিয়ন্ত্রিত রাখতে পেরেছে। এছাড়া করপোরেট সুশাসন যথাযথভাবে বাস্তবায়নের কারণে বাজারে যমুনা ব্যাংকের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে।
সম্পদ ও দায়ের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হলো ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটির দায় ও ইকুইটির পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। তবে ব্যাংকটির এবারের সবক’টি সূচকেই পরিচালন মুনাফা হ্রাসের নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। র্যাংকিংয়েও এক ধাপ পিছিয়েছে ব্যাংকটি। একই সঙ্গে কমেছে প্রাপ্ত নম্বরও। মূলত আরওএ, আরওই, সিএআর, খেলাপি ঋণের হার ও শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফার দিক থেকে পিছিয়ে থাকায় ইসলামী ব্যাংকের র্যাংকিংয়ে অবনমন হয়েছে। গত বছর প্রকাশিত র্যাংকিংয়ে ব্যাংকটির সার্বিক অবস্থান ছিল পঞ্চম। এবার এক ধাপ পিছিয়ে ষষ্ঠ স্থানে নেমেছে।
সাতটি সূচকের মধ্যে নিট মুনাফার দিক থেকে ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান দ্বিতীয়। আর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্যের দিক থেকে ব্যাংকটির অবস্থান তৃতীয়। সব মিলিয়ে সার্বিক সূচকে ইসলামী ব্যাংক নম্বর পেয়েছে ২৬ দশমিক শূন্য ১। এনএভিপিএস ও নিট মুনাফা বাদ দিয়ে করা র্যাংকিংয়ে ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান দশম থেকে ১৮তম স্থানে নেমেছে। ৫০ স্কেলে ব্যাংকটির স্কোর ১৭ দশমিক ৩২।
বণিক বার্তার র্যাংকিংয়ের সূচকগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেন ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। দেশের বৃহত্তম ব্যাংকটির শীর্ষ নির্বাহী বলেন, ইসলামী ব্যাংকের সম্পদ ও ইকুইটির আকার অনেক বড়। ফলে এ দুটি সূচকে আমাদের ব্যাংক পিছিয়ে যায়। তবে আগামী এক বছরে সবক’টি সূচকেই ইসলামী ব্যাংকের বড় পরিবর্তন আসবে।
মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, ইসলামী ব্যাংক মানবিক ব্যাংকিংয়ে বিশ্বাসী। ব্যাংকিংকে ব্যবসা হিসেবে না দেখে আমরা মানবসেবা হিসেবে দেখি। বাজারে সব ব্যাংক যখন আমানতের মুনাফার হার কমানোর প্রতিযোগিতা করছে, তখনো ইসলামী ব্যাংক আমানতকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে মুনাফার ৪ শতাংশের বেশি দিচ্ছে। অথচ এ মুহূর্তে আমানতের কোনো প্রয়োজন আমাদের নেই। সিএসআর খাতে ব্যয়ে ইসলামী ব্যাংক অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
তিন বছর ধরে প্রকাশিত র্যাংকিংয়ে ধারাবাহিক উন্নতি করেছিল প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড। ২০১৮ সালে প্রকাশিত র্যাংকিংয়ে ব্যাংকটির অবস্থান ছিল ১৫। পরেরবার তালিকায় পঞ্চম স্থানে উঠে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর গত বছর প্রকাশিত তালিকায় র্যাংকিংয়ের শীর্ষ চারে স্থান পায় প্রিমিয়ার ব্যাংক। তবে এবার কিছুটা পিছিয়ে সপ্তমে নেমে এসেছে ব্যাংকটি। ৫০-এর স্কেলে র্যাংকিংয়ে তৃতীয় থেকে চতুর্থ স্থানে নেমে এসেছে। র্যাংকিংয়ের পাশাপাশি সার্বিক স্কোরেও অবনমন হয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের। ৭০-এর স্কেলে ২৮ দশমিক ৮৬ থেকে ২৫ দশমিক ৮৫ এবং ৫০-এর স্কেলে ২৩ দশমিক ৪৯ থেকে ২১ দশমিক ৬৯-এ নেমে এসেছে ব্যাংকটির স্কোর। খেলাপি ঋণের নিম্নহার, শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফা ও আরওএতে ভালো অবস্থানে রয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। তবে সিএআর, নিট মুনাফা ও এনএভিপিএসে পিছিয়ে পড়ায় ব্যাংকটির র্যাংকিংয়ে অবনমন হয়েছে।
এবারের র্যাংকিংয়ে চমক দেখিয়েছে পূবালী ব্যাংক লিমিটেড। গতবারের র্যাংকিংয়ে ২৪তম অবস্থানে ছিল ব্যাংকটি। সেখান থেকে ১৬ ধাপ এগিয়ে এবার ব্যাংকটি উঠে এসেছে অষ্টম স্থানে। সার্বিক স্কোরের দিক থেকেও উন্নতি হয়েছে ব্যাংকটির। ২০১৯ সালের পারফরম্যান্স অনুযায়ী গতবার প্রকাশিত র্যাংকিংয়ে পূবালী ব্যাংকের স্কোর ছিল ১৯ দশমিক ৭২। ২০২০ সালের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে এবার করা র্যাংকিংয়ে ব্যাংকটির প্রাপ্ত স্কোর দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৩৩-এ। নিট মুনাফা ও এনএভিপিএস বাদ দিয়ে ৫০-এর স্কেলের র্যাংকিংয়ে আগেরবারের ২৬তম থেকে এবার ১৬তম স্থানে উঠে এসেছে ব্যাংকটি। ৫০-এর স্কেলে ব্যাংকটির স্কোর আগেরবারের ১৪ দশমিক ৮০ থেকে এবার বেড়ে হয়েছে ১৭ দশমিক ৮৬। ব্যাংকটি মূলত খেলাপি ঋণ, এনএভিপিএস ও নিট মুনাফার দিক দিয়ে এগিয়েছে। তবে শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফা, আরওএ, আরওই ও সিএআরের দিক থেকে ব্যাংকটি কিছুটা দুর্বল।
কর্মীদের সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টায় ব্যাংকটির সব সূচকে উন্নতি হয়েছে বলে জানান পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আলম খান চৌধুরী। তিনি বলেন, পূবালী ব্যাংকের আর্থিক ভিত অত্যন্ত শক্তিশালী। পরিচালনা পর্ষদ এ ব্যাংকের বড় সম্পদ। পর্ষদের পক্ষ থেকে কখনই আমাদের অনৈতিক চাপ দেয়া হয় না। ফলে ব্যাংক পরিচালনায় প্রতিটি সিদ্ধান্ত আমরা স্বাধীনভাবে নিতে পারছি। পূবালী ব্যাংক যে অবস্থানে আছে, তাতে আগামীতে আরো ভালো কিছুর প্রত্যাশা করি।
স্কোর ও র্যাংকিং—দুই জায়গায়ই এবার অবনমন হয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের। আগেরবারের সপ্তম থেকে দুই ধাপ পিছিয়ে এবার নবম স্থানে নেমে এসেছে ব্যাংকটি। গতবারের ২৬ দশমিক ২৪ থেকে কমে এবার ব্যাংকটির স্কোর ২৫ দশমিক ১৩-এ দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ৫০ স্কেলের র্যাংকিংয়ে পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ স্থানে নেমেছে ব্যাংকটি। র্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ব্যাংকটির স্কোর (৭০-এর স্কেলে) গতবারের ২১ দশমিক ৭১ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫৯-এ। শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফায় এগিয়ে থাকলেও বাকি ছয় নির্দেশকে পিছিয়ে রয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক।
আগেরবারের দশম অবস্থান গত বছরেও ধরে রেখেছে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড। পাশাপাশি ব্যাংকটির স্কোরও কিছুটা বেড়েছে। গতবার প্রকাশিত র্যাংকিংয়ে ব্যাংকটির সার্বিক স্কোর ছিল ২৪ দশমিক ১৩। এবার তা বেড়ে ২৪ দশমিক ৬৯-এ দাঁড়িয়েছে। নিট মুনাফা ও এনএভিপিএস বাদ দিয়ে ৫০-এর স্কেলের র্যাংকিংয়ে আগেরবারের নবম স্থান থেকে দুই ধাপ এগিয়ে এবার সপ্তম স্থানে উন্নীত হয়েছে ব্যাংকটি। ৫০-এর স্কেলে আগেরবার ব্যাংকটির স্কোর ছিল ২০ দশমিক ৪১। এবার তা বেড়ে ২০ দশমিক ৫৪-এ দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকটির শক্তিমত্তার জায়গা হচ্ছে শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফা, খেলাপি ঋণের নিম্নহার ও সিএআর। আর দুর্বল দিক হচ্ছে এনএভিপিএস, নিট মুনাফা, আরওএ এবং আরওই।
ব্যাংক এশিয়া সার্বিক র্যাংকিংয়ে ধারাবাহিক উন্নতির মাধ্যমে গতবারের র্যাংকিংয়ে ষষ্ঠ স্থানে জায়গা করে নিয়েছিল। যদিও এবার ব্যাংকটি শীর্ষ ১০-এর তালিকায় নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। র্যাংকিংয়ে ব্যাংকটির অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১৩ নম্বরে। ৫০-এর স্কেলের র্যাংকিংয়ে আগেরবারের চতুর্থ স্থান থেকে অবনমন হয়ে এবার নবম স্থানে নেমে এসেছে ব্যাংক এশিয়া। সিএআর ও খেলাপি ঋণের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও বাকি পাঁচ নির্দেশকে পিছিয়ে গিয়েছে ব্যাংকটি।
সেরা ব্যাংকের তালিকায় ২০২০ সালের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে করা এবারের র্যাংকিংয়ে সবচেয়ে বেশি উত্থান হয়েছে এমন ব্যাংকগুলোর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ২২ থেকে ১৬তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। মূলত আরওএ, আরওই, খেলাপি ঋণ ও শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফার দিক দিয়ে ভালো করায় ব্যাংকটির অবস্থানের এ উন্নয়ন হয়েছে। এক্সিম ব্যাংক ১৯ থেকে উঠে এসেছে ১৪তম অবস্থানে। আগের বছরের তুলনায় খেলাপি ঋণ ও এনএভিপিএস বাদে বাকি পাঁচ নির্দেশকে উন্নতি হওয়ায় এবার র্যাংকিংয়ে এগিয়েছে এক্সিম ব্যাংক। র্যাংকিংয়ে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ১৫ থেকে ১১তম স্থানে উন্নীত হয়েছে। খেলাপি ঋণ, সিএআর, এনএভিপিএস ও শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফায় ভালো করায় র্যাংকিংয়ে উন্নতি হয়েছে ব্যাংকটির। র্যাংকিংয়ে এবি ব্যাংক ২৮ থেকে ২৫-এ উঠে এসেছে। এনএভিপিএস ও শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফায় এগিয়ে যাওয়ার কারণে এবি ব্যাংকের র্যাংকিংয়ে উন্নতি হয়েছে। উত্তরা ব্যাংকের র্যাংকিং ২১ থেকে ১৯-এ এবং ওয়ান ব্যাংক ২৫ থেকে ২৩-এ উন্নীত হয়েছে। আরওএ, আরওই, সিএআর ও নিট মুনাফার কারণে উত্তরা ব্যাংকের উন্নতি হয়েছে। অন্যদিকে সিএআর ও এনএভিপিএসে উন্নতি হওয়ায় র্যাংকিংয়ে এগিয়েছে ওয়ান ব্যাংক।
এদিকে সেরা ব্যাংকের তালিকায় সবচেয়ে বড় অবনমন হয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের। ১৩তম থেকে ২২তম স্থানে নেমে এসেছে ব্যাংকটি। এছাড়া আইএফআইসি ২০ থেকে ২৮, শাহজালাল ইসলামী ১৬ থেকে ২১, ইউসিবি ১১ থেকে ১৫, এনসিসি ব্যাংক ১৪ থেকে ১৮, এনবিএল ১৮ থেকে ২০ ও এমটিবি ২৩ থেকে ২৪ নম্বরে নেমে গেছে। আরওই, খেলাপি ঋণ, সিএআর ও শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফায় পিছিয়ে পড়ায় র্যাংকিংয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অবনমন হয়েছে। খেলাপি ঋণ বাদে বাকি ছয় নির্দেশকে অবনতির কারণে র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে গিয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক। খেলাপি ঋণ ও সিএআরে অবনতি হওয়ার কারণে অবনমন হয়েছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের। নিট মুনাফা ও এনএভিপিএসে পিছিয়ে পড়ায় ইউসিবির র্যাংকিংয়ে অবনমন হয়েছে। সিএআর ও শাখাপ্রতি পরিচালন আয়ে আগের বছরের তুলনায় অবনতি হওয়ার কারণে র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়েছে এনসিসি ব্যাংক। এনবিএলের অবনমন হয়েছে আরওএ, খেলাপি ঋণ ও এনএভিপিএসে পিছিয়ে পড়ার কারণে। আরওএ, আরওই, খেলাপি ঋণ, সিএআর, এনএভিপিএস ও শাখাপ্রতি পরিচালন আয়ে পিছিয়ে পড়ার কারণে র্যাংকিংয়ে পিছিয়েছে এমটিবি।
অন্যদিকে র্যাংকিংয়ে অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংক (১২), প্রাইম ব্যাংক (১৭), এসআইবিএল (২৬), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক (২৭), রূপালী ব্যাংক (২৯) ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের (৩০)।
৭০-এর স্কেলের র্যাংকিংয়ে ডাচ্-বাংলা, ইবিএল ও সিটি ব্যাংক বাদে সব ব্যাংকেরই স্কোর ছিল ৩০-এর কম। অর্থাৎ দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগই অর্ধেক স্কোরও অর্জন করতে পারেনি। অন্যদিকে পাঁচ নির্দেশকের ভিত্তিতে করা ৫০-এর স্কেলভিত্তিক র্যাংকিংয়ে ইবিএল ও ডাচ্-বাংলা বাদে আর সব ব্যাংকই অর্ধেকের কম স্কোর অর্জন করতে পেরেছে।
র্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানে উঠে আসা ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠানের পারফরম্যান্সের প্রভাবকগুলো নিয়ে কথা বলেছে বণিক বার্তা। সেখানে তাদের নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার জায়গাগুলো তুলে ধরেছেন তারা—
দেশসেরা ব্যাংক হতে পেরে আমরা গর্বিত
—আবুল কাশেম মো. শিরিন
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক
বণিক বার্তার র্যাংকিংয়ে এর আগেও আমরা সেরা ছিলাম। মাঝে কিছুটা বিচ্যুতি ছিল। কিন্তু আবারো সেরা ব্যাংকের তালিকার শীর্ষে স্থান করে নেয়া আনন্দের। যেকোনো ব্যাংক ভালো চলার পেছনে দুটি বিষয় নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। একটি হলো ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সততা ও স্বচ্ছতা।
অন্যটি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দক্ষতা। যে ব্যাংকের পরিচালক ও উদ্যোক্তারা সৎ সে ব্যাংক অবশ্যই ভালো করবে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এ দুটি গুণই আছে। আমাদের ব্যাংকের ঋণ ও সম্পদের গুণগতমান খুবই ভালো। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের আছে লো-কস্ট ডিপোজিট। আমানতকারীদের সবচেয়ে কম সুদ দেয়া সত্ত্বেও তারা ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ছেড়ে যাচ্ছেন না। এ ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের সীমাহীন আস্থার প্রতিফলন এটি।
র্যাংকিংয়ের পরিধি আরো বাড়ানো দরকার
—আলী রেজা ইফতেখার
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইস্টার্ন ব্যাংক
মৌলিক সাতটি সূচকের পাশাপাশি বণিক বার্তার র্যাংকিংয়ের পরিধি আরো বাড়ানো দরকার। যেকোনো ব্যাংকের আয়-ব্যয় অনুপাত, কর্মীপ্রতি মুনাফা, সঞ্চিতি সংরক্ষণের হারও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মূলধন কম হওয়ায় ডাচ্-বাংলা দুটি সূচকে এগিয়ে থাকে। তার পরও ২০২০ সালের পরিসংখ্যানে ব্যাংকটির এগিয়ে যাওয়াকে সাধুবাদ জানাই।
ব্র্যান্ড ইমেজ সিটি ব্যাংকের বড় শক্তি
—মাসরুর আরেফিন
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দ্য সিটি ব্যাংক
বণিক বার্তার র্যাংকিংয়ে সেরাদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে আসতে পেরে ভালো লাগছে। কয়েক বছর ধরে সিটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৫ শতাংশের ঘরে আছে। চার-পাঁচ বছর আগে আমাদের মাঝারি মানের বেশকিছু ঋণ খেলাপি হয়ে গিয়েছিল। সেটার বোঝাই এখনো টানছি। পাশাপাশি শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্যের (এনএভি) দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকার ঐতিহাসিক কারণ আছে। নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে সিটি ব্যাংক অনেক বছর বোনাস শেয়ার দিয়ে গেছে। আবার লভ্যাংশ নীতির সঙ্গে ব্যাংক মূলধনের সংযোগসূত্রকে সমন্বিত করা হয়নি। ফলে রিটেইন্ড আর্নিং কম থাকছে। এ দুটি বিষয় ঠিক থাকলে হয়তো এক নম্বরেই চলে আসতাম।
ব্র্যান্ড ইমেজ ও তুমুল জনপ্রিয়তাকে সিটি ব্যাংকের মূলশক্তি মনে করেন মাসরুর আরেফিন। তিনি বলেন, সিটি ব্যাংকের পরিচালকরা সৎ ও পেশাদার। আমাদের আছে একঝাঁক মেধাবী তরুণ কর্মকর্তা। শক্তিশালী করপোরেট, ট্রেড ও ট্রেজারি ব্যবসার পাশাপাশি প্রবল শক্তির রিটেইল, কার্ড, ছোট ও মাঝারি ব্যবসা আছে সিটি ব্যাংকের। আছে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রতি তাড়না। সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে সিটি ব্যাংক ধারাবাহিক উন্নতির পথে হাঁটবে। আগস্ট থেকে আমরা ইসলামী ধারার ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করব। সব মিলিয়ে সিটি ব্যাংকের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছি।
