রাজবাড়ী শহর রক্ষাবাঁধের পাইলিংয়ে ধস

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী

পদ্মার ভাঙনে বিলীন রাজবাড়ী শহর রক্ষাবাঁধের পাইলিংয়ের ৬০০ মিটার ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

রাজবাড়ীতে ভাঙনের মুখে পড়েছে শহর রক্ষাবাঁধের স্থায়ী পাইলিং। গতকাল কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পদ্মায় বিলীন হয়েছে চারটি পয়েন্টে অন্তত ৬০০ মিটার এলাকা। এখনো ভাঙন ঝুঁকিতে রাজবাড়ী শহর রক্ষাবাঁধ, বিদ্যালয়, মসজিদ, মন্দিরসহ শতশত বসতভিটা।

গতকাল সকালে সরেজমিনে রাজবাড়ী জেলা শহরের গোদার বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে একের পর এক বড় বড় মাটির চাক স্থায়ী পাইলিংয়ের খণ্ডসহ নদীতে বিলীন হচ্ছে। আশপাশের এলাকা থেকে দলে দলে মানুষ আসছে ভাঙন দেখতে। যারা এর আগে পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়েছে তাদের চোখেমুখে দেখা গেছে চিন্তার ছাপ। আর একটু ভাঙলেই পদ্মার পেটে চলে যাবে শহর রক্ষাবাঁধ। সেক্ষেত্রে শহর রক্ষাবাঁধে বসবাসকারীরা মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকুও হারানোর শঙ্কায় রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাজবাড়ী কার্যালয়ের তথ্যমতে, ভাঙনরোধে ২০১৮ সালের জুনে রাজবাড়ী শহর রক্ষাবাঁধের ডান তীর প্রতিরক্ষার কাজ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার বরাটে তিন মিজানপুরে দেড় কিলোমিটারসহ সাড়ে চার কিলোমিটার এবং ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া (প্রথম সংশোধিত) শহর রক্ষাবাঁধের গোদার বাজার অংশের আড়াই কিলোমিটারসহ মোট সাত কিলোমিটার এলাকায় ৪৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এতে দ্বিতীয় পর্যায়ের সাড়ে চার কিলোমিটারে ৩৭৬ কোটি প্রথম সংশোধিত হাজার ৫২৭ মিটারে ৭৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। প্রকল্পের জন্য দশমিক কিলোমিটার অংশে ৪৯ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে।

এলাকাবাসী বলছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ ভাঙন শুরু হয় রাজবাড়ী শহর রক্ষাবাঁধের ৭০ মিটার নিকটে থাকা স্থায়ী পাইলিংয়ে। মুহূর্তের মধ্যেই বিলীন হয় ৪২ মিটার এলাকা। এরপর মধ্যরাতে, গতকাল ভোররাতে আরো তিনটি পয়েন্টে দেখা দেয় মারাত্মক ভাঙন। আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে শহর রক্ষাবাঁধে বসবাসকারী শতশত পরিবারের। এছাড়া হুমকিতে পড়েছে রাজবাড়ী শহর রক্ষাবাঁধ, বিদ্যালয়, মসজিদ. মন্দিরসহ বহু স্থাপনা।

এলাকাবাসী আরো জানায়, রাজবাড়ী শহরকে রক্ষা করতে সরকার শতশত কোটি টাকা ব্যয় করছে, অথচ সে টাকার হচ্ছে না সঠিক ব্যবহার।

ভাঙনের কবলে পড়া গোদার বাজার এলাকার জিনিয়াস ইটভাটার মালিক আল আমিন মোস্তফা দাবি করেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত চারটি পয়েন্টে তীব্র ভাঙনে অন্তত ৬০০ মিটার এলাকা নদীতে বিলীন হলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই পাউবোর।

অভিযোগ অস্বীকার করে পাউবো রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ জানান, রাজবাড়ী শহরের সিলিমপুর, গোদার বাজার থেকে বরাট পর্যন্ত সাত কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী পাইলিংয়ের কাজ চলছে। পদ্মার গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে ভাঙনরোধে বালির বস্তা ফেলা শুরু করেছেন তারা।

ব্যাপারে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য সংরক্ষিত মহিলা আসন ৩৩৪-এর সংসদ সদস্য সালমা চৌধুরী রুমা বলেন, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি লিখেছি। ভাঙনের ছবি পাঠিয়েছি। একই সঙ্গে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছি।

গতকাল বিকালে রাজবাড়ীর গোদার বাজার এলাকার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পাউবো পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হেকিম রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম।

সময় জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য এখনই পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হবে। যেকোনো মূল্যে শহর রক্ষাবাঁধ রক্ষা করা হবে।

পাউবো পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হেকিম বলেন, ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে। এছাড়া স্থায়ী পাইলিংয়ের কাজে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন