অনুদান দেয়া মার্কিন পরিবারের সংখ্যা অর্ধেকে নেমেছে

দাতব্য সংস্থার কার্যক্রম ক্রমে চ্যালেঞ্জপূর্ণ হয়ে উঠছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে দাতব্য সংস্থা ছবি: এপি

বিশ্বজুড়ে স্বল্প আয়ের মানুষদের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে দাতব্য সংস্থাগুলো। সংস্থাগুলোর বেশির ভাগ আয়ই আসে যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত অর্থনীতি থেকে। তবে সময়ের সঙ্গে দাতব্য সংস্থাগুলোতে অনুদান দেয়া মানুষের সংখ্যা কমছে। ২০০০ সালেও ৬৬ শতাংশ মার্কিন পরিবার দাতব্য সংস্থায় দান করত। ২০১৮ সালে সংখ্যাটি কমে ৪৯ দশমিক শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রায় দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো দাতব্য সংস্থায় দান করা মার্কিন পরিবারের সংখ্যা অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে। প্রবণতা দাতব্য সংস্থার কার্যক্রমকে ক্রমে চ্যালেঞ্জিং করে তুলছে। খবর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

সম্প্রতি প্রকাশিত সমীক্ষার ফলাফলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্য, অর্থের হিসাবে অনুদান রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। তবে অনুদান দেয়া মার্কিন পরিবারের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে।

ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিলি ফ্যামিলি স্কুল অব ফিলানথ্রপি প্রতি দুই বছর অন্তর সমীক্ষা প্রকাশ করে। বিভাগটি ২০০০ সাল থেকে নয় হাজারেরও বেশি পরিবারের অনুদানের চিত্র বিশ্লেষণ করে সমীক্ষা তৈরি করে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ওই বছর ৬৬ শতাংশ পরিবার দাতব্য সংস্থায় অনুদান দিয়েছিল। সমীক্ষার সর্বশেষ বছর ২০১৮ সালে সংখ্যাটি কমে ৪৯ দশমিক শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন কমে যাওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। কোনো ধর্মের সঙ্গে যুক্ত না হওয়া মার্কিন নাগরিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধর্মীয় কারণে অনুদান দেয়াদের সংখ্যা কমেছে। অন্যদিকে ২০০৮ সালের মহামন্দায় অর্থনৈতিক অস্থিরতায় অনুদান দেয়া ধর্মনিরপেক্ষ মার্কিন নাগরিকদের সংখ্যাও কমে গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও সেই সংখ্যা আর বাড়েনি। ২০১৮ সালে কেবল ৪২ শতাংশ ধর্মনিরপেক্ষ মার্কিন নাগরিক দাতব্য সংস্থায় অনুদান দিয়েছেন।

লিলি স্কুলের গবেষণা আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামগুলোর সহযোগী ডিন উনা অসিলি বলেন, অনুদান দেয়াদের সংখ্যা কমে যাওয়ার একটি কারণ, মহামন্দা কিছু অল্প বয়স্ক মার্কিন নাগরিকদের অনুদান দেয়ার অভ্যাস তৈরি করতে বাধা দিয়েছিল। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে ৪০ বছরের কম বয়সী নেতৃত্ব দেয়া পরিবারগুলো এক-তৃতীয়াংশ দাতব্য সংস্থায় অনুদান দিয়েছিল। ওসিলির মতে, প্রবণতা দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে।

তিনি বলেন, বিশেষত তারা এমন পরিষেবা নেটওয়ার্কগুলোতে অংশ নিচ্ছে না, যেগুলো তাদের অনুদান দিতে উৎসাহিত করবে।

অনুদান গণনার ক্ষেত্রে সমীক্ষায় বেশকিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সমীক্ষাটি কেবল দাতব্য সংস্থাগুলোকে অনুদানের বিষয়টি হিসাব করে। তবে অনানুষ্ঠানিক ক্রাউড ফান্ডিং ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে দেয়া অনুদান হিসাবের বাইরে থেকে গেছে। ধরনের ক্যাম্পেইনে তরুণরা অনেক বেশি অনুদান দেয়।

অনুদান কমার পেছনে সমীক্ষাটিতে বলা হয়েছে, দাতব্য প্রতিষ্ঠান একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস ক্রমাগত কমে যাওয়ার বিষয়টি অনুদান থেকে দূরে সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। সেই অবিশ্বাসটি মধ্যবয়সীদের মধ্যে বিশেষত উচ্চারিত হচ্ছে। ফলে এটি দাতব্য সংস্থার জন্য চ্যালেঞ্জের আরো একটি স্তর তৈরি করতে পারে।

সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে লাখ ডলারের বেশি সম্পদ থাকা ১০টি পরিবারের মধ্যে আটটি পরিবার দাতব্য সংস্থায় অনুদান দিয়েছিল। বিপরীতে ৫০ হাজার ডলারের কম সম্পদ থাকা ১০ পরিবারের মধ্যে চারটিরও কম পরিবার অনুদান দিয়েছিল।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক জন লিস্ট বলেন, সামগ্রিকভাবে অনুদান দেয়ার বিষয়টি ধীরে ধীরে অতি ধনী ব্যক্তিদের দিকে এগিয়ে চলেছে। ধরনের প্রবণতা বিপজ্জনক হতে পারে। ধনী ব্যক্তিদের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত বা নিম্ন আয়ের লোকেরা যখন অনুদান দেয়, তখন দাতব্য সংস্থাগুলোতে বিস্তৃত সরবরাহ নিশ্চিত হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন