২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্য উড়োজাহাজ নির্মাতাদের ছবি: এপি মার্কিন উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বোয়িং করপোরেশনের একটি বাহনের আনুমানিক জীবনকাল প্রায় ২০ বছর। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো জীবনকালে একটি উড়োজাহাজ প্রায় ১০ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, জলবায়ু নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলো বরাবরই বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড ও পরিবেশের ওপর প্রভাব নিয়ে তথ্য প্রকাশ করতে চাপ দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বোয়িং।
বিশ্বজুড়ে উড়োজাহাজ নির্মাতা ও পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে অনুরোধ করে আসছেন পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। কার্বন নিঃসরণ কমাতে রাজনৈতিক চাপও তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে উড়োজাহাজের জ্বালানি বদলে পরিবেশের ওপর কম ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে মহামারী চলাকালে যে পরিমাণ বাহন সরবরাহ করেছে, সেগুলো তাদের জীবনকালে ৬০ কোটি টনের মতো কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করবে। এর মধ্যে বোয়িংয়ের বাহন সংখ্যা ১৫৭টি, যা তাদের জীবনকালে ১৫ কোটি ৮০ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করবে।
অন্যদিকে এয়ারবাস গত বছর ৫৬৬টি উড়োজাহাজ বিভিন্ন পরিষেবা প্রতিষ্ঠানের কাছে সরবরাহ করেছে। তাদের প্রতিটি বাহনের গড় জীবনকাল ধরা হয়েছে ২২ বছর। তারা বলছে, এসব বাহন পুরো জীবনকালে ৪৪ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ করবে। এরমধ্যে আট কোটি টন হবে জ্বালানি উৎপাদনের জন্য।
তবে শিল্প খাতটি বলছে, তারা ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনবে। অবস্থাদৃষ্টে কাজটি বেশ কঠিন বলেই মনে করা হচ্ছে।
বোয়িংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভ ক্যালহাউন বলেন, আমাদের পণ্যগুলোর জীবনকালের প্রতিটি পর্যায়ে পরিবেশের ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, তা কমিয়ে আনতে সব রকমের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ তাদের উড়োজাহাজগুলো শতভাগ পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করে আকাশে উড়বে। এ কাজ এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে।
বোয়িংয়ের এক মুখপাত্র বলেন, দুই সারি আসনবিশিষ্ট উড়োজাহাজের গড় জীবনকাল ২২ বছর ৮ বছর। তিন সারি আসনবিশিষ্ট বাহনের গড় জীবনকাল ২১ দশমিক ৫ বছর এবং মালবাহী বাহনগুলোর জীবনকাল ২৯ দশমিক ৬ বছর। সব মিলিয়ে বোয়িংয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, এর বাহনগুলোর গড় জীবনকাল ২৪ দশমিক ৮ বছর।
মালবাহী উড়োজাহাজ তৈরি ও বিক্রির বিষয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে রয়েছে বোয়িংয়ের একক আধিপত্য, যা অনেক দীর্ঘসময় ধরে চলে এবং ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি এটিই সরবরাহ করা হয়েছে।
২০১৮ সালে বোয়িং ৮০৬টি উড়োজাহাজ সরবরাহ করেছিল। তখন ধারণা করা হয়েছিল, ৫৬ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ করবে বাহনগুলো। জ্বালানি উৎপাদন মিলিয়ে এ পরিমাণ ছিল ৬৫ কোটি ২০ লাখ টন।
মহাকাশবিষয়ক সংস্থাগুলো বলছে, পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও বিকল্প জ্বালানির আবিষ্কারের জন্য গোটা বিশ্বজুড়েই গবেষণা চলছে। তবে পরিবেশবাদী সংস্থাগুলোর দাবি, পরিবেশের ওপর প্রভাব কমাতে উড়োজাহাজের চলাচল সীমিত করা জরুরি। তা না হলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব কমানো সম্ভব নয়।
