আফগানিস্তানকেন্দ্রিক কানেক্টিভিটি

ভারতকে ছাড়াই গঠিত হলো মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার কোয়াড

বণিক বার্তা ডেস্ক

আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান পাকিস্তানকে নিয়ে সম্প্রতি নতুন এক চতুর্দেশীয় জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রিজিওনাল সাপোর্ট ফর আফগানিস্তান পিস প্রসেস অ্যান্ড পোস্ট সেটেলমেন্ট শীর্ষক জোটটিকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আখ্যা দিচ্ছে মধ্য দক্ষিণ এশিয়ার কোয়াড হিসেবে। মূল কোয়াড জোটের আঞ্চলিক সঙ্গী ভারতকে এখনো জোটে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। যদিও আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার বিষয়ে ভারতের গুরুত্বকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করছেন দেশটির ভূরাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটো জোটের সৈন্যদের আফগানিস্তান ত্যাগ পুরোপুরি সম্পন্ন হতে সময় বাকি আর মাত্র দেড় মাস। তাদের প্রস্থান-পরবর্তীকালে আফগানিস্তানের ভাগ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক মহল। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলছে, আফগানিস্তানকে পুরোপুরি ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছে না ওয়াশিংটন। কাবুলের আশরাফ গনি সরকারকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করার পাশাপাশি আফগানিস্তানের সঙ্গে আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি উন্নয়নের উদ্যোগেও যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে সম্প্রতি মধ্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বহুজাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, উজবেকিস্তান যুক্তরাষ্ট্র নতুন জোট গঠনে একমত হয়। পরবর্তী সময়ে জোটটি পরিচিতি পায় মধ্য দক্ষিণ এশিয়ার কোয়াড হিসেবে। 

সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে চতুর্দেশীয় নতুন জোট গঠনের কথা জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আঞ্চলিক পর্যায়ে কানেক্টিভিটি বাড়াতে চতুর্পক্ষীয় কূটনৈতিক প্লাটফর্ম স্থাপনের বিষয়ে একমত হয়েছে দেশ চারটি। কানেক্টিভিটির জন্য আফগানিস্তানে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা সব পক্ষই বেশ ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারছে। বিষয়ে সবাই একমত, আঞ্চলিক শান্তি কানেক্টিভিটি একে অন্যের পরিপূরক।

মধ্য দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগস্থল হিসেবে আন্তঃঅঞ্চলের কানেক্টিভিটিতে অন্যতম প্রধান প্রভাবক হয়ে উঠেছে আফগানিস্তান। তালেবান-পরবর্তী যুগে দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আগেও একাধিকবার বিষয়টিকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াশিংটন।

জোটে যোগ দেয়ার জন্য ভারতকে আমন্ত্রণ জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। যদিও আঞ্চলিক পর্যায়ে আফগানিস্তানের বড় বাণিজ্য অংশীদার ভারত। বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা দেশটিকে ঘিরে গড়ে ওঠা কানেক্টিভিটিউভয়ের সঙ্গেই ভারতের স্বার্থ জড়িত রয়েছে। এছাড়া মধ্য এশিয়া থেকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবেশদ্বার হলো আফগানিস্তান। দেশটিকে কেন্দ্র করে গৃহীত উদ্যোগের সফলতার জন্য ভারতকে সঙ্গে পাওয়া জরুরি। এতে আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ায়ও ভারতের ভূমিকা রাখার বড় সুযোগ তৈরি হতো।

দক্ষিণ মধ্য এশিয়ার কানেক্টিভিটিতে ভারতের অংশগ্রহণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এখানকার আঞ্চলিক কানেক্টিভিটিতে ভারতের অংশগ্রহণের গুরুত্ব বিবেচনায় অতীতে দেশটিকে নানা ধরনের নীতিগত ছাড়ও দিয়েছে ওয়াশিংটন। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইরানের চাবাহার বন্দর প্রকল্পে অংশ নিয়েছিল নয়াদিল্লি। বিষয়টি নিয়ে তেমন একটা উচ্চবাচ্য করেনি যুক্তরাষ্ট্রও। তথাকথিত নতুন কোয়াড জোটের সদস্য উজবেকিস্তানও ভারত ইরানের সঙ্গে যৌথভাবে প্রকল্পে অংশ নিয়েছে। পরবর্তী সময়ে ভারতের মতো আফগানিস্তানও হয়ে ওঠে বন্দরটির অন্যতম ব্যবহারকারী দেশ।

এছাড়া রাশিয়ার উদ্যোগে গড়ে ওঠা নর্থ সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোরেরও অন্যতম বড় ব্যবহারকারী ভারত। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায়ও বাজার হিসেবে ভারত সবচেয়ে বড়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মধ্য দক্ষিণ এশিয়ায় কানেক্টিভিটি উন্নয়নের উদ্যোগে ভারতকে সঙ্গে না নেয়াটা ভুল হচ্ছে বলে মনে করছেন দেশটির ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি দেশটির সাংবাদিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক অদিতি ভাদুড়ি দ্য কুইন্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এমন মতামত দেন।

তার ভাষ্যমতে, ধরনের পরিকল্পনার সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনা জরুরি। আবার উদ্যোগের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যও তাই। উদ্যোগের অংশ হিসেবে আফগানিস্তানের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাতে গেলে ট্রানজিট ফি হিসেবে প্রচুর অর্থ পরিশোধ করতে হবে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলো যাদের দখলে থাকবে, তাদের জন্য ট্রানজিট ফি অনেক বড় একটি আয় হয়ে দাঁড়াবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যপথগুলোর নিরাপত্তা সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্যও অর্থ জরুরি। ভারতের অংশগ্রহণ ছাড়া কানেক্টিভিটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম মধ্য এশিয়া পাকিস্তানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে মধ্য এশিয়ার বাণিজ্য বাড়ানোয় এর কোনো ভূমিকাই থাকবে না।

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন গতকালই দুই দিনের সফরে ভারতে এসে পৌঁছেছেন। সফর চলাকালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে তার আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, এসব আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু হতে যাচ্ছে আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি। আলোচনার ভিত্তিতে আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় ভারতের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে বলে প্রত্যাশা করছেন দেশটির ভূরাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন